human rights, hegemony, fascism

মানবাধিকার রক্তমেঘ-মাঝে, তবুও

উত্তর সম্পাদকীয়​

বণবাণী ভট্টাচার্য
ম্যানস্‌ ইনহিউম্যানিটি টু ম্যান
মেকস্‌ কাউন্টলেস থাউজ্যান্ডস মোর্ন।
১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। ইংল্যান্ডের রাজা জন এবং বিদ্রোহী ব্যারণদের স্বাক্ষরিত ১২১৫ সালের চুক্তি, ‘ম্যাগনাকাটা’র দেখানো পথেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৪৮ সালে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার ঘোষণা। অর্থাৎ মানুষের মৌলিক অধিকারও নারী-পুরুষের সমানাধিকারের প্রতি জাতিগুলির আস্থাজ্ঞাপন। তবে, কোনও কিছুকে আস্থা জানানো, আর প্রতিদিনের যাপনে তাকে মান্যতা দেওয়া—এই দুয়ের মাঝে‍‌ তেমন কোনও মিল নেই। থাকলে, এখনও পৃথিবীকে ইসরায়েল-প্যালেস্টাইন, ইউক্রেন-রাশিয়া, ইসরায়েল-ইরান, লিবিয়া-লেবানন, বর্তমানে বাংলাদেশ চাক্ষুষ করতে হত না।
মানুষের অমানবিকতা, পাষণ্ডতা এতই প্রাচীন যে, অষ্টাদশ শতকের কবি রবার্ট বার্ন উপরের পংক্তি দু’টির কবিতার শিরোনামই দিয়েছিলেন, ‘‘ম্যান ওয়াজ মেড টু মোন’’ বা শোক করার জন্যেই মানুষের সৃষ্টি। আর, যে বিশ্বকবির মানুষের প্রতি এতই বিশ্বাস ও ভালবাসা যে, তিনি প্রার্থনা করলেন, তাঁর অন্তিমযাত্রার কালে ‘‘তবে দিয়ো তোমার মাটির ফোঁটার একটি তিলক আমার কপালে’’। তিনিও নিবিড় বেদনায় উচ্চারণ করলেন—
হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব;
মোর কুটিল পন্থ তার, লোভ জটিল বন্ধ।
জরা-রোগ-মৃত্যুতে মানুষ নিয়তই শোকার্ত। পুত্রশোকাতুর মা, সন্তানের পুর্নজীবনের জন্যে, খুঁজে পায়নি একটিও ‘অশোক নিলয়’ বা শোকহীন গৃহ, সে কথা জানা প্রায় সকলের। আদিম-সাম্যবাদী সমাজের পর থেকে সমাজের সংখ্যাগুরু মানুষের জীবন দারিদ্র-লঞ্ছিত, তারই কশাঘাতে জীবন দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত, কখনও প্রকৃতির বিরূপতায় জীবন ছিন্নভিন্ন। মানুষ এগুলোকে জীবনের স্বাভাবিকত বলে মেনে নিয়েছে। তার দারিদ্র যে ঈশ্বরের অভিশাপ নয়, অন্যের লাগামহীন লোভের ফল, ক্ষুধার দাবি মেটাতে মেটাতে এই জটিল অঙ্ক কষার সময় তার থাকে না। অথচ, বঞ্চণাকারী আর বঞ্চিতের, শোষক আর শোষিতের চিরকালীন দ্বন্দ্বের পরিণামে নিষ্ঠুরতা-হিংসা-সীমাহীন লোভের হিংস্রতার মারাত্মক সরীসৃপেরা সমাজের কোনায় কোনায় থাকে, সময় হলেই গুপ্ত গহ্বর থেকে বেরিয়ে আসে।
রাষ্ট্রসঙ্ঘও নিয়মমাফিক হিংসার বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে তার বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি মানুষের এতবড় এই পৃথিবীকে শাসন করা কখনই কোনও এক সর্বময় সংস্থার কাজ নয়। ১৯৩টি দেশ, রাষ্ট্রসঙ্ঘে তালিকাভুক্ত। তাদের শাসননীতির বদল হয়তো একদিন মানবজাতিকে কবির আকাঙ্ক্ষিত কলঙ্কশূণ্য করে তুলতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরেও পৃথিবীতে এমন একটি দিনের অস্তিত্ত্ব নেই, যেদিন কোনও না কোনও দেশে আভ্যন্তরীন অথবা বর্হিবিশ্বের কারণে রক্ত ঝরেনি। ইউক্রেন-রাশিয়া, প্যালেস্তাইন-ইসরায়েল, ইসরায়েল-লেবাননের রক্তপাত আধিপত্যকামিতার প্রত্যক্ষ ফল। বিগত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্যালেস্তাইনের সমস্ত অঞ্চলে আজ নয় কাল গণহত্যা চলছেই ইসরায়েলের। চলছে, হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস। বিরাম নেই আইসক্রিম বাক্সে প্যালেস্তাইনী শিশুর লাশ রাখার। বিগত পনেরো মাসে ইসরায়েলের হাতে ৪৫ হাজার মানুষ নিহত এবং আহত প্রায় ১লক্ষ ৬ হাজার। এখন তো আবার হয়তো নিহতদের খোঁজই পাওয়া যাবে না কারণ, ইসরায়েল ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক ভাবে নিষিদ্ধ এমন অস্ত্র যে, মৃতদেহ বাষ্প হয়ে যায়, তা প্রয়োগের পরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম, রক্ত দিয়ে ঘাম দিয়ে প্যালেস্তানীয়রা মাতৃভূমি রক্ষায় নিদ্রাহীন প্রহরায়, আর ইসরায়েল বেপরোয়াভবে গণহত্যা রাখছে অব্যাহত শুধু নয়, মধ্যপ্রাচ্য বা পশ্চিম এশিয়ায় প্যালেস্তাইন অধিকারে কোথাও কোনও প্রতিকূলতাকে সে বরদাস্ত করবে না বলে কখনও ইরানের সাথে শত্রুতা তো কখনও লিবিয়া-লেবানন। লেবাননে ৩১৬১জন নিহত এবং আহত ১৬,৫২০জন ইতিমধ্যেই ইসরায়েলী আক্রমণে—এখন সেনাবাহিনীর বিশ্রাম এবং অস্ত্রভাণ্ডার মজবুতির জন্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সহ নানা অবৈধ ও অমাণবিক কাজে অভিযুক্ত। এই আন্তর্জাতিক আদালতের ক্ষমতাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে ইসরায়েল কোন স্পর্ধায়, চোরের মায়ের বড় গলার মতো? কোন মানবাধিকার তার, এই দস্যুবৃত্তি, এই অমানুষিকতা এবং সীমাহীন ঔদ্ধত্য অনুমোদন করে? সে কি পাণ্ডব-সখা শ্রীকৃষ্ণের মতো প্রবল পরাক্রান্ত মার্কিন প্রশাসনের মদত?
পাঁচমাস ধরে বাংলাদেশ অস্থির-অশান্ত। শুরুটা কোটা সংস্কার নিয়ে। আজ তা পরিণতি পেয়েছে হিন্দু ও অমুসলিম নিপীড়ণ-নির্যাতন ও ভারত বিদ্বেষে। দেশজুড়ে ধর্মীয় মৌলবাদের রমরমা। সংখ্যালঘু হিন্দু নিরাপত্তার অভাবে, আতঙ্কে প্রহর গুনছে। সংখ্যালঘু ঘৃণা এতটাই যে, ৭.৯৬ শতাংশ আর ৯১.০৮ শতাংশ মুসলিমরে দেশ যখন বাংলাদেশ তখন সংবিধান ইসলামিক হওয়াটাই শ্রেয় বলে ও দেশের মন্ত্রী-সান্ত্রীদের অনেকের অভিমত। এই গ্রহের যে কোনও কোণায় নিজের ধর্মবিশ্বাস ও তার আচরণ মানবাধিকারের পরিধির মধ্যে পড়ে না? একদিন প্রথা অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে, নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপকের দেশে অশান্তির এই আগুন যেন আঘাতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে; আবার অবিশ্বাস্যও মনে হয়। রাষ্ট্র চাইলে আগুন নেভে। বাংলাদেশ যদি আকাশ বাতাস কাঁপায় ‘ইস্‌লাম খত্‌রেমে’, আর ভারতও আওয়াজ তোলে ‘হিন্দু খত্‌রেমে’, তবে, দু’দেশের সরকারকেই কঠোর হাতে তা দমনের পদক্ষেপ না নিলে এই আগুনের গ্রাস কত সুদূর প্রসারী তা সময় জানান দেবে। বাংলাদেশ তথা ভারতেরই অঙ্গজাত বাংলাদেশ সম্পর্কে এ দেশের আবেগ স্বাভাবিক। হয়তো এই বাংলার আবেগ-সংলগ্নতা আর একটু বেশি। তাই সেখানকার যে কোনও মানুষের বিপন্নতা এ বাংলাকে কাঁদায়। তা বলে কোনও দেশেরই জাতীয় পতাকার অবমাননা মুখ বুজে সহ্য করার নয়, নিজের দেশের তো নয়ই। ভাবতে অবাক লাগে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবিস্মরণীয় ভূমিকা, বিস্ময়ণে ঠেলে ভারতের জাতীয় পতাকার লাঞ্ছনা তারা করতে পারল কোন মূল্যবোধের ভিত্তিতে? কোন মানবাধিকারের সুরক্ষায়? কোনও রাষ্ট্রেরই সংখ্যালঘু পীড়ন জাতি প্রেমের প্রকাশ হতে পারে না। আসলে, একদিন গীর্জা আর রাজ প্রাসাদকে বিচ্ছিন্ন করার যে লড়াই ইতিহাস হয়ে আছে তারই উলটো পথে দু’দেশের শাসকেরা চলতে চাইবে। রাষ্ট্রক্ষমতা আর ধর্ম আজ প্রায় একাসনে। পৃথিবীতে দক্ষিণপন্থার উত্থানের আবহে ধর্মীয় মৌলবাদ, যা গণতন্ত্রকে সহ্য করে না, ধর্মের ভিত্তিতে গরিব মানুষকে ভাগ করে সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বালায়। সেই শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয়ে:— এই মুহূর্তে এই শক্তিকে দুর্বল করা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের লক্ষ্য, দু‍‌ই দায়িত্বশীল সরকারের কাজ।
জাতি প্রেম নাম ধরি প্রচণ্ড অন্যায়
ধর্মের ভাসাতে চাহে বলের বন্যায়।
নেশন শব্দে যত পাপ, যত বিভীষিকা চাপা পড়ে যায় না। তার স্পর্শে সমস্ত অন্যায় সোনার চাঁদ হয়ে ওঠে না। বিশ্ব কবির মত। আজ আধিপত্যবাদী পুঁজি, কর্পোরেট শক্তি আর ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা একসূতোয় গাঁথা। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের উপর নজরদারির জন্য সেন্ট মার্টিন দ্বীপে মিলিটারি বেসের প্রয়োজনে আমেরিকা স্ট্যাটেজিক পার্টনার ভারতকে পাশে নিয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায়, যা জামাতের হয়তো অদেয় নয়। তাই নারী-পুরুষের বাঁচার অধিকার থাকল কি গেল সেই মানবাধিকারের তোয়াক্কা এরা করে না।
দক্ষিণপন্থা সবসময়েই গণতন্ত্র বিরোধী। ফলে দেশে দেশে জাগছে স্বৈরাচারী শক্তি থেকে স্বৈরতন্ত্রও তার বিরুদ্ধে জনগণের লড়াইও অব্যাহত। ভারতে আরএসএস-র বিজেপি-র নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার গণতন্ত্রের টুটি টিপে ধরছেন বিন্দুমাত্র সরকারের সমালোচনা করলেই শাস্তির খাঁড়া নেমে আসছে— ছাত্র উমর খালি বছরের পর বছর কারারুদ্ধ মিথ্যা দেশ‍‌দ্রোহিতার দায়ে। কারারুদ্ধ হয়ে শেষনিঃশ্বাস ফেলেছেন স্ট্যানস্বামী। নরেন্দ্র দাভোল-গোবিন্দ পানসারে-গৌরী লঙ্কেশ-কালবুর্গী হত্যা চরম মানবাধিকার-বিপন্নতার উদাহরণ। জুনেদ আখলাখ খান পেহেলুখানরা সংখ্যালঘু হওয়ার অপরাধে ধর্মনিরপেক্ষ দেশে নিহত হয়। সাংবাদিকদের স্থান হামেশাই কারাগারে। শ্রমিকদের লড়াইয়ের অধিকারে এস্‌মা জারি হয়। আন্তর্জাতিক পদক জয়ী কুস্তিগির বিনেশ‍ ফোগটরা যৌন হয়রানির প্রতিবাদে পুলিশি অত্যাচারের ‍‌শিকার হয়— অথচ নারী ও শিশু পাচার অবাধ বলতে গেলে। খাদ্য-বস্ত্র বাসস্থানের মতো মানবাধিকার তো উহ্যই। যে ভারতে ১২কোটি ৯০লক্ষ মানুষের আয় ১৮০টাকার নিচে আর আদানির একদিনের আয় ১২১৬কোটি টাকা, সেখানের হিংসাশ্বয়ী তীব্র শোষণে মানবাধিকার রক্ষা পেতে পারে কোন মন্ত্রে?
এরাজ্য তো দুর্নীতির শিখরে। দুর্নীতি, মিথ্যা-প্রতারণা ও বঞ্চনাকে সাথে নিয়ে চলে। তাই মানুষের অধিকার তুমুলভাবে আক্রান্ত-আক্রান্ত শিক্ষা থেকে চাকরি। বাংলা-র পরিচয় এখন বিশ্বে, আর জি করের দুর্নীতিগ্রস্ত অধ্যক্ষ আর তার লোভের আগুনে আহুতি হওয়া চিকিৎসক অভয়া, যার বাবা-মা বিচার পাওয়ার অধিকার আজ প্রশাসনের কলকাঠিতে আক্রান্ত এবং ক্রমশ প্রহসনে পরিণত হচ্ছে। নিজের চেনা শিক্ষা ও কাজের জায়গায় ধর্ষিত ও নিহত হওয়া তিলোত্তমার মৃত্যু প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা তা বটেই রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড বলাটাও ভুল নয়, কারণ একটি অঙ্গরাজের ক্ষমতাসীনেরা এর সাথে জড়িত। এ‍‌ই ভারতের বিহারে বন্দিদের অন্য শাস্তি বাদেও অ্যাসিড ছুঁড়ে অন্ধ করে দেওয়া চরম নিষ্ঠুরতার নজির। বন্দি বৃদ্ধ স্ট্যানস্বামী গ্লাসে জল খেতে পারতেন না বলে পাইপ চেয়েছিলেন, চেয়ে ছিলেন চশমা, তাঁকে দেওয়া হয়নি। মাস্টারদা সূর্য সেনের সমস্ত দাঁত উপরে ফেলেছিল বর্বর বৃটিশ সরকার- হিংস্রতার কদর্য নিদর্শন। এই ভারতে জাতি ঘৃনা-ধর্মীয় বিদ্বেষ এতই চরম, অর্ধ মৃত দলিতকে যার জল তেষ্টায় প্রাণ ফেটে যাচ্ছে, তাকে বর্ণহিন্দুর শরীরের বর্জ্য তরল দিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদ গোঁফে তা দিয়ে সুখে প্রভুত্ব করে। সমাজের কোন প্রভু দলিতের অধিকার রক্ষা করবে— হিংসা-হিংস্রতা থেকে বাঁচাবে?
দুর্নীতি চক্রের পথ রোধ করছিল অভয়া তাই তাকে হত্যা। হত্যার অনেক পথ আছে— কিন্তু ধর্ষিতা মৃতার দেহের ৩২টি আঘাত হত্যাকারীদের হিংস্রতা ও আক্রোশের কথা বলছে। এরাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তাকে আব্রু হয়েছে। প্রতিদিন দেশে ৮৬জন মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে কামদুনির মেয়েটির ধর্ষণের পরে দু’টো পা টেনে ছিঁড়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। অগস্টাস সিজার বা ক্যালিগুলার মন্ত্রশিষ্য এরা কারণ তারই উক্তি ‍‌ওকে এমন আঘাত কর যে, ও যেন অনুভব করে ও মরে যাচ্ছে। নারী লাঞ্ছনায় ধর্ষণে বাংলা যোগী রাজ্যের সাথে পাল্লা দিচ্ছে। হাথরসে ধর্ষিতার জিভ কাটা হয়, তো এই বাংলায় ধর্ষিতাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ধর্ষণ অতীতেও ছিল। এখন ধর্ষণের পর তাদের নয়না সাহানীর মতো কেটে কেটে, না তন্দুরী নয়, ফ্রিজে রাখা হয়। ধর্ষিতাকে আর বাঁচতে দেওয়া হয় না। নারীর অধিকার মর্যদা তো দূরের কথা তার প্রাণে বাঁচার অধিকারটুকু‍‌ও নেই আজ শুধু তো নারী শিশু ধর্ষণ নারী-শিশু পাচারের অপরাধই তো রাজ্যটাকে নরক করে তুলছে না— সারা আকাশ জুড়েই ‘রক্তমেঘ’ যার মধ্যে ক্রমশঃ ডুবে যাচ্ছে অস্তগামী সূর্যের মতো মানবাধিকার আর মনুষ্যত্ব। না হলে আনিসকে ঠেলে ফেলে সিভিক পুলিশ— অবোধ কোর্পানকে মেরে ফেলে এনআরএস হাসপাতালে হবু ডাক্তাররা। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একইরকম আকাশে বাতাসে রক্তগন্ধ, নৃশংসতার নতুন নতুন চমক, আর হতাশার পুনরাবৃত্তি। মৃত্যু ভয় নয়, বেঁচে থাকার ভয় হলো, অস্তিত্বের সত্যিকারের আতঙ্ক।
ফ্যাসিস্টমুখী স্বৈরতন্ত্র, গণতন্ত্ররক্ষা করে না— মানবাধিকারেরও পরোয়া করে না। দিল্লির সরকার ও এরাজ্যের সরকার একভিাবে ফ্যাস্টি মুসোলিনীর শিক্ষ্যত্ব গ্রহণ করেছে যারা তারই মতো বিরোধীদের সাথে তর্ক করে না— একেবারে মেরে ফেলে। তবে এরা এখনও হিটলার মুসোলিনী হয়ে উঠতে পারেনি— চেষ্টায় আছে। তাই দুই সরকারের নেতৃত্ব গণতান্ত্রিক দেশে নির্লজ্জভাবে বলে উঠতে পারে— ‘আমিই শেষ কথা’। আর এই আবহেই ছাত্র-যুব সমাজকে অবাধ খুন-ধর্ষণ-প্রতারণা তোলবাজি-অপহরণ করে, আরও লোভী ও মনুষত্ব খুইয়ে গ্যাসচেম্বার বানাবার ইঞ্জিনিয়ার হবে, শিশু হত্যার সেবিকা করার ট্রেনিং চলছে দেশজু‍ড়ে যারা রক্তাক্ত ছুরি থেকে বিন্দু বিন্দু রক্ত চুইয়ে পড়লেও রোমাঞ্চিত হয়ে উঠবে হিটলারের বাহিনীর মতো। লড়াই এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে, লড়াই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে— লড়াই আধিপত্যবাদীদের এই অমানুষ বানাবার ঘৃণ্য সংস্কৃতি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানবাধিকার রক্ষা ‍‌ও বিকশিত করার জন্যে। রাষ্ট্রসঙ্ঘকে তার পদক্ষেপে আরও দৃঢ় হতে হবে। বিবেকবান সমস্ত মানুষ এবং শ্রমজীবী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই পুঁজিবাদের দস্যু তার ফেরিওয়ালা আধিপত্যবাদীদের, দিন বদলের লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে জানাচ্ছে চ্যালেঞ্জ—
ভাব হবে তুমিই যা চাও, জগৎটাকে তুমিই নাচাও—
দেখবে হঠাৎ নয় খুলে হয় না যেটা সেটাও হবে।।

Comments :0

Login to leave a comment