ট্রাম গিয়েছে এবার ট্যাক্সি। হলুদ ট্যাক্সি। কলকাতা শহর বললেই মানুষের মনে যেই যেই যিনিস গুলো ফুটে ওঠে তার মধ্যে অন্যতম এই হলুদ ট্যাক্সি। এবার শহরের বুক থেকে প্রায় উঠে যেতে চলেছে মিটার লাগানো এই হলুদ ট্যাক্সি। একটা সময় কলকাতা শহরে এই ট্যাক্সিই চলতো। পাড়ায় পাড়াব ছিল ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। কিন্তু নতুনের সাথে তাল মিলিয়েস সেই সব এখন অতীত। ওলা উবেরের যুগে হলুদ ট্যাক্সির দেখা পাওয়া যায় না।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী কলকাতায় প্রায় সাত হাজার ট্যাক্সি রয়েছে। সব যে প্রতিদিন রাস্তায় নামে তা নয়। ১৫ বছর হয়ে যাওয়ায় আইন অনুযায়ী এই সব গাড়ি গুলো এবার বাতিল হবে। প্রায় ৪৫০০ হাজার ট্যাক্সি এবার ‘কাটাই’ এর খাতায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোসপুকুর এলাকার বাসিন্দা এক ট্যাক্সি চালকের গাড়ি এই বাতিলের তালিকায় আছে। মার্চ মাস থেকে আর গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামবেন না তিনি। কসবা নতুন থানার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ আক্ষেপের সুরেই বলেন, ‘‘এই ট্যাক্সি চালিয়েই মেয়েকে মানুষ করেছি। বড় করেছি, সংসার চালিয়েছি। কয়েকদিন পর আর চালাতে পারবো না।’’
কিছুটা থেমে বলেন, ‘‘এখন অনেক প্যাসেঞ্জার কমে গিয়েছে। আর বেশি আয় হয় না।’’
গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে কি করবেন?
- নতুন গাড়ি কিনবো তা নয়। কে টাকা শোধ করবে। দেখি কোন কাজ জদি জোটে!
শুধু এই একজন ট্যাক্সি চালক নয় ভবিষ্যতের চিন্তা গ্রাস করেছে একাধিক ট্যাক্সি চালককে।
এক যাত্রীর কথায়, ‘‘ট্যাক্সি এখন তো আর সেই ভাবে দেখা যায় না রাস্তায়। অ্যাপ ক্যাব গুলো বেশি চলে। আর ট্যাক্সি পেতে সমস্যা হতো এখন এই অ্যাপ হওয়ায় আর সমস্যা হয় না।’’
উল্লেখ্য ওলা উবেরে মতো অ্যাপ ক্যাব শহরে চললেও গলুদ ট্যাক্সির জন্য আলাদা করে কোন অ্যাপ নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও আলাদা করে কোন অ্যাপ করা হয়নি। যাত্রী সাথীর মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে সেখান থেকে কিছু ‘রাইড’ তারা পায়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে স্মার্ট ফোন থাকলেই এই অ্যাপ একজন চালক ব্যবহার করতে পারবে। তাকে জানতে হবে এর ব্যবহার। কতজন চালক এই অ্যাপের সাথে অভ্যস্ত তা নিয়েও আছে প্রশ্ন।
হিন্দুস্তান মোটর্স তাদের অ্যাম্বাসাডার গাড়ি তৈরি বন্ধ করে দেওয়ার পর ‘হলুদ ট্যাক্সি’ তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প কোন মডেল আর উঠে আসেনি।
কলকাতার রাস্তায় প্রথম কবে হলুদ ট্যাক্সি চালু হয়েছিল তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পরিবহণের কিছু নথি বলে যে সম্ভবত ১৯০৮ সালে কলকাতার রাস্তায় প্রথম হলুদ ট্যাক্সি চালানো শুরু হয়েছিল। সেই সময় প্রতি মাইল খরচ ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
ক্যালকাটা ট্যাক্স অ্যাসোসিয়েশন ১৯৬২ সালে অ্যাম্বাসেডরকে স্ট্যান্ডার্ড ট্যাক্স মডেল হিসাবে গ্রহণ করে। সূর্যাস্তের পরেও রঙের স্পষ্ট দৃশ্যমানতা ট্যাক্সির রঙ হিসাবে হলুদ বেছে নেওয়ার কারণ ছিল বলে দাবি একাংশের।
Comments :0