West Bengal Assembly

মণিপুরে শান্তি ফেরানোর দায়িত্ব চান মমতা!

রাজ্য

West Bengal Assembly

শান্তি ফেরাতে মণিপুরের দায়িত্ব চান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি! সোমবার বিধানসভায় এমনই আজগুবি দাবি করেছেন তিনি। এদিন বিধানসভায় মণিপুরের ঘটনা নিয়ে উত্থাপিত একটি প্রস্তাবের ওপরে বলার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের ঘটনা সামলাতে ব্যর্থ। আপনারা সামলাতে না পারলে আমাদের দায়িত্ব দিন, আমরা শান্তি ফিরিয়ে আনব। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলাম, কারণ আমি এই বিষয়টা বুঝি।’
একদিকে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এমন আজগুবি মন্তব্য করেছেন, অন্যদিকে বিরোধী বিজেপি বিধায়করা মণিপুরের ঘটনাকে আড়াল করতে পশ্চিমবঙ্গের হিংসা, নারী নির্যাতন নিয়ে চিৎকার করে গিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্ট সহ সারা দেশে চিন্তাশীল মানুষ যখন মণিপুরের ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন তখন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় সোমবার এমনই নিম্নমানের তরজা অনুষ্ঠিত হলো মণিপুর নিয়ে আলোচনার নামে।

মমতা ব্যানার্জি চিঠি লিখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ঠিক কী প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন, কীভাবেই বা তিনি মণিপুরের শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব নেবেন এসব প্রশ্ন বাদ দিয়েও একেবারে মণিপুরের বুকেই তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে, অবশ্য বিজেপি বিধায়কদের পক্ষে অস্বস্তিকর হওয়ায় তারা সেই প্রশ্ন ভুলেও তোলেননি। ২০১৭ সালে মণিপুরে কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দিয়ে বিজেপি যখন সরকার গঠন করে তখন তাদের পর্যাপ্ত বিধায়ক সংখ্যা ছিল না। অন্য দল ভাঙিয়ে বিজেপি সেই সরকার গড়েছিল। সেই আস্থা ভোটে বিজেপি’কে সমর্থন করেছিলেন মণিপুরের একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক টি রবীন্দ্র সিং। বিজেপি’কে সমর্থন দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এখনও তৃণমূলেই আছি...যারা সরকার গড়ছে তাদের আমি পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই সমর্থন করেছি।’ মমতা ব্যানার্জির অনুমোদন ছাড়াই যদি সেদিন টি রবীন্দ্র সিং বিজেপি’কে সমর্থন দিয়ে থাকেন, তাহলে সেদিনই তাঁকে দল থেকে বিতাড়ন করেনি কেন তৃণমূল? পরবর্তীকালে সেই তৃণমূল বিধায়কের বিজেপি’তে মিশে যাওয়াও কি মমতা ব্যানার্জির অজ্ঞাতে?


অথচ মমতা ব্যানার্জি এদিন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মণিপুরকে শান্ত করার দায়িত্ব দাবি করে বললেন, মণিপুরকে রক্ষা করতে হবে। এটা আমাদের সাংবিধানিক কর্তব্য।
এদিন শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপি বিধায়করা বিধানসভায় মণিপুর ইস্যুকে গুলিয়ে দিতে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক সন্ত্রাস, হিংসা, নারী নির্যাতন ইত্যাদির উল্লেখ করেছেন, কিন্তু মণিপুর ইস্যুতে সেরাজ্যের এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতাকে কিছুতেই মানতে রাজি হননি। উলটো দিকে মমতা ব্যানার্জিও পশ্চিমবঙ্গের হিংসা, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতনের কোনো ঘটনাকে গুরুত্ব দিতেও রাজি হননি। বিজেপি বিধায়করা মালদহে মহিলাদের নির্যাতন, ভাঙড়ে গুলি করে হত্যাকাণ্ডের কথা তুলেছেন। আর মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘বাংলা এগচ্ছে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন না। লজ্জা করে না, বাংলাকে গালাগালি দেয়! দিল্লি থেকে একশোর বেশি টিম পাঠিয়েছে। কুকুর ঘেউ ঘেউ করলেও টিম পাঠানো নয়। ইঁদুর-বিড়াল কামড়ালেও কমিটি আসছে। ১০০ দিনের কাজ দেবে না বলছে। এবার থেকে আমিও টিম পাঠাব।’

শুভেন্দু অধিকারী মণিপুর নিয়ে আলোচনা ঠেকাতে বলেন, ‘মণিপুরের ঘটনা সেই রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়। অন্য রাজ্য নিয়ে আলোচনা করার অধিকার নেই এই রাজ্যের বিধানসভার। এটি সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বিষয়। এ নিয়ে বিধানসভায় আলোচনার অধিকার নেই।’ শেষপর্যন্ত ধ্বনি ভোটে মণিপুরের ঘটনার নিন্দা করে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে, বিজেপি বিধায়করা কাগজ ছিঁড়ে কক্ষত্যাগ করেন। 
এদিন বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গের জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাসিমারাতে নতুন বিমানবন্দর তৈরির কথা বলেছেন, আবার উত্তরবঙ্গে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের মতো সংক্রমণ রোগের হাসপাতাল তৈরির কথাও বলেছেন। তিনি বলেছেন, কোচবিহার, বালুরঘাটে বিমানবন্দর তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। মালদহে কাজ শেষ পর্যায়ে। হাসিমারাতেও একটি বিমানবন্দর তৈরি করা হবে। ভাবনাচিন্তা চলছে। অন্ডালে একটি কার্গো বিমানবন্দর চালু করা হবে। বিমানবন্দর তৈরি হবে পুরুলিয়াতেও।

এর আগে রাজ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন আরও একধাপ এগিয়ে বলেছেন, পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন না হওয়ায় ডেঙ্গু ঠেকানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
পঞ্চায়েতে এখনও মেয়াদে থাকা তাঁরই দল তৃণমূলের পরিচালিত বোর্ড কেন কাজ করছে না, কেন জেলা ও ব্লক প্রশাসন কাজ করছে না, কেন গ্রাম ছাড়াও শহরাঞ্চলে হুহু করে ডেঙ্গু বাড়ছে, এর কোনো ব্যাখ্যার ধারকাছ দিয়েও যাননি মুখ্যমন্ত্রী। তবে বলেছেন, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড অগ্রাহ্য করলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments :0

Login to leave a comment