গল্প | মুক্তধারা
প্রতিবিম্ব
রাহুল চট্টোপাধ্যায়
বিমল চোখ খুলে দেখলো বাইরে,তখন পড়ন্ত বিকেল। জানলার গরাদের ওপারে জলের ট্যাঙ্কের ওপর একটা ঘুঘু পাখি বসে রয়েছে। বিমল বিছানায় শুয়েই ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে।পাখিটা মনের সুখে কি একটা খুঁটেই চলেছে।
বিমল অসুস্থ শরীরে যা হোক করে পাশ ফিরে দেখে। লোহার শিক,জানলার গরাদ, নিজের অসুস্থতা মিলে অদ্ভুত একটা বিষাদ রচনা করে।মনে হয় জেলবন্দী মানুষের কথা। বিমল না হয় অসুস্থ। প্রায় ছ মাস সে বেরোতে পারে নি। কিন্তু ব্রিটিশের রাজত্বে কতো মানুষ তো সত্যি কথা বলতে গিয়ে, স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে আন্দামানে অন্ধকার কক্ষে জীবন কাটিয়েছেন।সে তো তবু বাড়ি আছে ।
জানলার বাইরে থেকে আকাশে চোখ রেখে ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ে। চোখদুটো বুঁজে আসে।
জানলার গরাদ,জেলখানা, স্বাধীনতা...
তারপর-
দেশভাগ, বিড়ম্বিত ঘরছাড়াদের স্রোত,আশা-আশাভঙ্গের দোলা, আর্থিক সংকট, মূল্যবোধের অবক্ষয় সব তার মগ্নচেতনায় চলতে ফিরতে থাকে।আধো স্বপ্নে আধো জাগরণে বিমল সমকালকেও অনুভব করে। চেতনার আলোড়নে বড়ো এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে সে।
ছটফট করতে করতে ঘোর কেটে যায়।দেখে ঘুঘুটা তখনো বসে আছে। এক চিলতে ধূসর সান্ধ্য আকাশ, ঘুঘু,তার অসুস্থতা যেন কালের অসঙ্গতির ছবি হয়ে ওঠে।বিমল উঠে বসতে চেষ্টা করে।মন টানে রাস্তার দিকে। মানুষ দেখার জন্য মনটা ছটফট করে
---------------------------------
Comments :0