রাজ্যের মহিলা ভোটারদের সামনে রেখে ‘লাডলি বহেনা’ প্রকল্প সামনে এনেছিলেন শিবরাজ সিং চৌহান। সেই সময় কংগ্রেসের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, ক্ষমতায় এলে রাজ্যের মহিলাদের ৫০০টাকায় রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়া হবে। তারই পালটা শিবরাজ এই ঘোষণা করেছিলেন বলে মনে করে ওয়াকিবহাল মহল।
সেই ঘোষণা বাস্তবায়িতও হয়েছিল। রাজ্যের ৩২ লক্ষ মহিলা ৯১০ টাকা দিয়ে গ্যাসের সিলিন্ডার কেনার পরে, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৪৬০টাকা করে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, প্রতিশ্রুতি মত সাড়ে চারশো টাকাতেই নেমে আসে রান্নার গ্যাসের দাম।
কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি পালটে গিয়েছে। রাজ্যে ফের ক্ষমতায় ফিরলেও, শিবরাজ সিং চৌহানকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিজেপি। আরএসএস ঘনিষ্ঠ মোহন যাদব রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী। মধ্যপ্রদেশের মহিলাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বদলের পরে তাঁদের অ্যাকাউন্টে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ঢোকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এনডিটিভি’র তরফে এই ইস্যুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে ভোপালের ভীমনগর অঞ্চলের মহিলা শশী গাওড়ে’র সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। শশী জানাচ্ছেন, ‘‘লাডলি বহেনা প্রকল্পের আওতায় মাসে ১২৫০ টাকার আর্থিক সাহায্য মিললেও, রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’
শশী গাওড়ে বলছেন, ‘‘আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। আমরা দিনমজুরের কাজ করি। বড় পরিবার। একটা সিলিন্ডার বড়জোর একমাস যায়। ভর্তুকি বন্ধ হয়ে গেলে প্রতি মাসে রান্নার গ্যাসের জন্য ১ হাজার টাকা খরচ করা আমাদের জন্য কষ্টকর।’’
এনডিটিভি’র সামনে একই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন পুনম নামে এক মহিলা। তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। পুনমের বক্তব্য, ‘‘আমরা এখন কিচ্ছু পাচ্ছিনা। জানিনা পরে এই বকেয়া টাকাগুলো মিলবে কিনা। আমরা যা রোজগার করি, তা বাচ্চাদের লেখাপড়া আর খাবারের পিছনে খরচ হয়ে যায়। সরকারী সাহায্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছি। লোকের থেকে টাকা ধার করে গ্যাস কিনতে হচ্ছে।’’
মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে বিজেপির প্রধান তুরুপের তাস ছিল এই জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি। একসময় এই ধরণের প্রকল্পগুলিকে রেউড়ি বা ঘুষ বলে কটাক্ষ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে প্রচারে এসে মোদী বলেছিলেন, ‘‘নতুন সরকার এলেও এই প্রকল্পগুলি চালু থাকবে। এটা মোদীর গ্যারেন্টি।’’
কিন্তু সেই গ্যারেন্টি যে ফেল করেছে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন মধ্যপ্রদেশের গরীব মানুষ।
যদিও রাজ্যের সরকারের দাবি, কোষাগার ফাঁকা। টাকা জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। টাকা মিললেই ফের ভর্তুকি দেওয়া শুরু হবে।
মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরে দিল্লি ছুটেছিলেন মোহন যাদব। তিনি আরবিআই’র কাছে ২ হাজার কোটি টাকার ঋণের আবেদন করেন। রাজ্যের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, মধ্যপ্রদেশ সরকারের মোট ঘাটতি ৪ লক্ষ কোটি টাকা। একইসঙ্গে রয়েছে বিপুল সংখ্যক প্রতিশ্রুতির বোঝা। সেটা কীভাবে পূরণ হবে কেউ জানেনা।
গোটা ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতু পাটোয়ারি বলেছেন, ‘‘মোদী গ্যারেন্টি দিয়েছিলেন যে সাড়ে চারশো টাকায় সিলিন্ডার পাওয়া যাবে। সেটা পূরণ হচ্ছেনা কেন? বিজেপি তো বলেছিল সরকার গঠনের পরের মুহূর্ত থেকে প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হবে। নতুন সরকার তো বেশ প্রায় ১ মাস হল দায়িত্ব নিয়েছে।’’
রাজ্যের বিজেপি নেতাদের বক্তব্য যদিও ভিন্ন। রাজ্যের মন্ত্রী কৃষ্ণ গৌর বলেছেন, ‘‘সংকল্প পত্র আমাদের কাছে গীতা এবং রামায়ণের মত পবিত্র। সেখানে দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হবে। কিন্তু একটু সময় লাগবে।’’
প্রতিশ্রুতি পালনে ঠিক কতদিন সময় লাগবে? সেই বিষয়টি স্পষ্ট করেননি কৃষ্ণ গৌর।
Comments :0