নরেন্দ্র মোদী সরকার কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় বিপুল হারে স্থায়ী নিয়োগ কমাচ্ছে, বাড়াচ্ছে অস্থায়ী নিয়োগ। কেন্দ্রীয় সমীক্ষায় প্রকাশ, গত এক দশকে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় স্থায়ী চাকরি কমেছে ২.৭ লক্ষ। কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় স্থায়ী চাকরির এই বিপুল সঙ্কোচনের মাঝেই মোদী আবার সাড়ম্বরে রোজগার মেলায় নিয়মমাফিক নিয়োগকেই নতুন চাকরির তকমা দিয়ে চালিয়ে দিলেন। মোদীর এই উদ্যোগকে দেশে সরকারি স্থায়ী চাকরির বিপুল সঙ্কোচনের তথ্য আড়াল করার কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নিয়োগ ও সংস্থার আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। ২০১২-১৩ থেকে ২০২১-২২ এক দশকের সমীক্ষা রিপোর্টে খতিয়ে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় বিপুল হারে কমছে স্থায়ী চাকরি। দেখা যাচ্ছে, ২০১৩ সালের মার্চে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১৭.৩ লক্ষ। ২০২২ সালের মার্চে তা কমে হয়েছে ১৪.৬ লক্ষ! মোট ৩৮৯ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় এই সমীক্ষা চালানো হয়। তার মধ্যে ২৪৮ সংস্থা চালু রয়েছে। এতে মোট স্থায়ী কর্মী কমেছে ২.৭ লক্ষ।
এদিকে, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় গত এক দশকে চাকরির ধরনটাই পালটে গেছে। স্থায়ী নিয়োগ কমিয়ে ঢালাও অস্থায়ী নিয়োগ চালু হয়ে গিয়েছে। অস্থায়ী নিয়োগের মধ্যে রয়েছে মেয়াদি চুক্তি এবং দৈনিক রোজে দিনমজুর নিয়োগ। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় মোট ১৭.৩ লক্ষ কর্মীর মধ্যে ১৯ শতাংশ ছিলেন অস্থায়ী কর্মী। এর মধ্যে ১৭ শতাংশ হলো মেয়াদি চুক্তির শ্রমিক এবং ২ শতাংশ হলো দিনমজুর। ২০২২ সালে এই মেয়াদী চুক্তি শ্রমিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট শ্রমিকের ৩৬ শতাংশ এবং দিনমজুরের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে মোট শ্রমিকের ৬.৬ শতাংশ। ফলে মোট অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে মোট শ্রমিকের ৪২.৬ শতাংশ। মোদী জমানায় এক দশকেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় অস্থায়ী শ্রমিক মোট শ্রমিকের ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশে হয়েছে। দ্বিগুণের উপর বেড়েছে অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা।
এদিকে, মোদীর জমানায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় যে বিপুল কর্মী কমানো হয়েছে তার মধ্যে সাতটি সংস্থায় রেকর্ড সংখ্যক কর্মী কমানো হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিএসএনএল। এর কর্মী কমানো হয়েছে ১ লক্ষ ৮১ হাজার। আরেক সংস্থা এমটিএনএল-এ কমানো হয়েছে ৩৪ হাজার ৯৯৭ জন কর্মী। স্বেচ্ছা অবসর প্রকল্প ধরিয়ে তাঁদের বিদায় দেওয়া হয়েছে। এর পরেই রয়েছে স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া (সেইল)। এখানে বিদায় জানানো হয়েছে ৬১ হাজার ৯২৮ জন কর্মীকে। সাউথ ইস্টার্ন কোল ফিল্ডে কমানো হয়েছে ২৯ হাজার ১৪০ জন কর্মী, ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়ায় (এফসিআই) কমানো হয়েছে ২৮ হাজার ৬৩ জন। এরই মাঝে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া পাকাপাকি টাটার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তার কর্মী ছাঁটাই হয়েছে ২৭ হাজার ৯৮৫ জন। ওএনজিসি-তে কমানো হয়েছে ২১ হাজার ১২০ জন কর্মী।
এদিকে কর্মী সংঙ্কোচনের বাজারে গত এক দশকে কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কর্মী নিয়োগ বেড়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান অয়েল। সেখানে বেড়েছে ৭৯ হাজার, মহানদী কোলফিল্ডে ৩৬ হাজার ৪১৮, পরমাণু বিদ্যুৎ নিগমে ২২ হাজার ২৩৫, নর্দান কোলফিল্ডে ১৭ হাজার ৬৭৪, এইচপিসিএল রাজস্থানে ১৬ হাজার ৪২২।
উল্লেখ্য, গত এক দশকে ২.৭ লক্ষ কর্মী কমানো হলেও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় মুনাফা কমেনি। শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগ, বেসরকারি হাতে তুলে দিতেই পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় কর্মী কমানো হয়েছে। উদাহরণ হিসাবে এয়ার ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের কথা উল্লেখ করেছে শ্রমিক সংগঠন। ওই বেসরকারিকরণে ২৭ হাজার ৯৮৫ কর্মী কমানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ভগবত কিষান রাও সংসদে জানিয়েছিলেন, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে ২৫৫টি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মধ্যে ১৭৭টি লাভজনক।
Comments :0