LF Campaign

মৃত্যু মিছিল বন্ধের দাবিতে ৩১ আগস্টের সমাবেশ

রাজ্য

LF Campaign


বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আগুন, কিন্তু রোজগারের উপায় নেই। কাজের জন্য ভিন রাজ্যে গিয়ে প্রাণ যাচ্ছে এরাজ্যের তরতাজা যুবদের। জনজীবনের সঙ্কট ঘনীভূত, কিন্তু প্রতিবাদে মানুষ যাতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে তার জন্য সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি চালানো হচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই রাজ্যের মানুষকে এককাট্টা করে লুট দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে কলকাতার রাস্তায় সমাবেশ করতে চলেছে বামফ্রন্ট। আগামী ৩১ আগস্ট গণআন্দোলনের শহীদ দিবসের অনুষ্ঠানে কলকাতার ধর্মতলায় জনসমাবেশে যোগদানের জন্য কলকাতা ও সংলগ্ন জেলাগুলিতে প্রচার করছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। কোথাও লিফলেট বিলি করা হচ্ছে, কোথাও পথসভা করে মানুষকে একজোট হওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে।


প্রতিবছরের মতো এবারও ৩১ আগস্ট বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ধর্মতলায় গণআন্দোলনের শহীদ দিবস পালন করা হবে ধর্মতলায়। এরজন্য কলকাতায় শ্যামপুকুর, জোড়াসাঁকো, বেলেঘাটা, মানিকতলা, ভবানীপুর, বন্দর এলাকায় গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনেকগুলি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাওড়া ও দুই ২৪ পরগনা জেলাতেও এরকম পথসভা ও মিছিল করে ধর্মতলার সমাবেশে যোগদানের আহবান ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সিপিআই(এম)’র উদ্যোগে। ৩১ আগস্ট কলকাতার চারদিক থেকে চারটি মিছিল এসে জমায়েত করবে ধর্মতলায়। 
ব্রিটিশ ভারতে ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল বাংলায়। কলকাতার রাস্তায় তখন অনাহারে মৃতদের দেহ পড়ে থাকতো। স্বাধীনতার পরেও সরকার জমিদার জোতদার কালোবাজারি ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও গণবণ্টনের ব্যবস্থা না করায় খাদ্যাভাব দেখা দেয় বাংলায়। পশ্চিমবঙ্গ তখন ছিল ধান উৎপাদনে ঘাটতি রাজ্য। খাদ্য চাই, খাদ্য দাও - নইলে গদি ছেড়ে দাও স্লোগানকে সামনে রেখে সারা রাজ্যে ব্যাপক প্রচার করে কমিউনিস্টরা। তারপর ১৯৫৯ সালের ৩১ আগস্ট কলকাতার বুকে বিরাট সমাবেশ হয় খাদ্য আন্দোলনে। মিছিলের উপরে ঝাঁপিয়ে পুলিশ নির্মম লাঠি চালায়। অন্তত পক্ষে ৮০ জনের মৃত্যু হয় সেদিন পুলিশের নির্মমতায়। এই কারণে বামফ্রন্ট ৩১ আগস্ট দিনটি প্রথমে খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবস হিসাবে পালন করতো, এবং তারপরে গণআন্দোলনের শহীদ দিবস হিসাবে পালন করে থাকে। 


এবারের ৩১ আগস্টে শহীদ স্মরণ করা হবে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতের ওপরে দাঁড়িয়ে। প্রচার সভাগুলিতে সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ বলছেন, কালোবাজারি বন্ধে গণবণ্টন, কৃষকের থেকে ন্যায্য মূলে ফসল সংগ্রহের দাবি বামপন্থীরা বরাবর করে এসেছে। বামপন্থীদের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকার অতীতে বেশ কিছু আইন ও প্রকল্পও চালু করেছিল। কিন্তু খাদ্য সুরক্ষা শিকেয় তুলে কেন্দ্র এবং রাজ্যের বর্তমান সরকার এখন সেসব বন্ধ করতে চাইছে। মানুষকে নিরন্ন রেখে আদানিদের মতো কোম্পানিগুলির হাতে চালকল তুলে দিতে চাইছে। মূল্যবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে। রাজ্যের মানুষকে কাজের জন্য পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে চলে যেতে হচ্ছে। তারপরে মিজোরামের মতো ভিন রাজ্য থেকে একের পর এক লাশ আসছে। রাজ্যবাসী যাতে এসবের প্রতিবাদ না করতে পারে তার জন্য শাসক দলের গুন্ডা মস্তানরা আক্রমণ করছে, পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, পঞ্চায়েতের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দখলদারি কায়েম রাখতে ভোট লুট করেছে, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সব গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে দিয়ে মস্তানরাজ চালানো হচ্ছে। পঞ্চায়েতে ভোট লুট করতে ৬০ জনের প্রাণহানি ঘটিয়েছে, আবার শিক্ষাব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক কাঠামো ভেঙে দখলদারি রাখায় ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। সব শহীদদের স্মরণ করা হবে ৩১ আগস্ট। র্যা গিং থেকে রিগিং, এই সব কিছুর প্রতিবাদ হবে ধর্মতলার জনসমাবেশে।

Comments :0

Login to leave a comment