BBC Delhi High Court

মোদী থাকতেই অস্ট্রেলিয়ায় 'মোদী কোয়েশ্চেন'

জাতীয়

BBC Delhi High Court

ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে গুজরাট গণহত্যা নিয়ে বিবিসি নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’। গুজরাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার বিবিসি কর্তৃপক্ষকে তলব করলো দিল্লি হাইকোর্ট। তথ্যচিত্রের বিষয়ে বিবিসি কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যাও চেয়েছেন বিচারপতি সচিন দত্ত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে সেপ্টেম্বরে। তবে ওই তথ্যচিত্র নিয়ে প্রযোজক সংস্থাকে তলব করা হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অস্ট্রেলিয়া সফরকালে ওই দেশের সংসদে প্রদর্শিত হবে ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’। 
গুজরাট গণহত্যায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকার কথা বিশদে তুলে ধরায় ভারতে বিবিসি নির্মিত ওই তথ্যচিত্রের সব ধরনের প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরই সঙ্গে বিজেপি-সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ গুজরাটের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মামলাও দায়ের করে দিল্লি হাইকোর্টে। ওই সংস্থার হয়ে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী হরিশ সালভে। তিনি দাবি করেন, ‘ওই তথ্যচিত্রের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় জনগণ, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে দেশের বিচারবিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিও আঘাত পেয়েছে। এরপরেই বিচারপতি দত্ত বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে জবাব দিতে হবে অভিযুক্ত সংস্থাকে।’

তবে গত ফেব্রুয়ারিতে ওই তথ্যচিত্র নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থবাহী পিটিশন খারিজ করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও এম এম সুন্দরেশকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ হিন্দু সেনার নেতা বীরেন্দ্র কুমার সিংয়ের ওই পিটিশন খারিজ করে দিয়ে বলেছিল যে, ‘সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণার ভিত্তিতে ওই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন জানানো হয়েছে।’ এমনকি বেঞ্চ এও বলেছিল যে, ‘পিটিশনটি পুরোপুরি যোগ্যতাহীন।’ আবার ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ শীর্ষক তথ্যচিত্রটি বিশেষ তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রয়োগ করে ইউটিউব সহ যাবতীয় সমাজমাধ্যম থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট তলব করে সুপ্রিম কোর্ট। এমনকি বিজেপি’র একাধিক নেতা বিবিসি’র তীব্র সমালোচনা করে সেই সময় বলেছিলেন, দেশকে খাটো করার জন্যই মিথ্যা এবং বিকৃত তথ্য পরিবেশন করছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটি। সরকারের তরফেও জানানো হয়, বিবিসি’র ওই তথ্যচিত্র দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার আদর্শকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। উল্লেখ্য, ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় ওই রাজ্যে সংখ্যালঘুদের কেমন অবস্থা ছিল, তা নিয়ে দুই পর্বে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

এরপর ফেব্রুয়ারি মাসেই আয়কর দপ্তর হানা দেয় বিবিসি’র দিল্লি এবং মুম্বাই অফিসে। এনিয়ে দেশে রাজনৈতিক চাপান উতোর শুরু হয়ে যায়। হঠাৎ করেই আয়কর দপ্তরের সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। তারা স্পষ্টই অভিযোগ করে, বিবিসি’র দুই পর্বের ওই তথ্যচিত্রের জন্যই আয়কর দপ্তরকে দিয়ে তল্লাশি চালানো হয় ওই সংস্থার দুই অফিসে।
এদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়া সরকারের অতিথি হয়ে তিনদিনের সফরে সিডনি পৌঁছেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবেনিসের সঙ্গে দেখা করবেন। মঙ্গলবার সিডনিতে একটি সভাও হবে। তবে এর থেকেও বড় খবর হলো মোদীর থাকার সময়েই সংসদ ভবনে প্রদর্শিত হবে বিবিসি’র তথ্যচিত্রটি। বুধবার সন্ধ্যায় দেশের বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ এবং সমাজকর্মীরা সংসদ ভবনে মিলিত হবেন এবং ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’ তথ্যচিত্রটি দেখবেন। দেশের অন্যতম সেনেটর ডেভিড সোব্রিজ বলেছেন, ‘তথ্যচিত্রটি গভীরভাবে গবেষণা করে নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি ওই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনী বন্ধ করার জন্য নয়াদিল্লির কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে অস্ট্রেলিবার সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। তবে সেই বন্ধুত্ব অবশ্যই সত্যের বন্ধুত্ব হওয়া উচিত। আমরা বারংবার ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছি। ওখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হচ্ছে। একারণেই আমরা সবাই মিলে ওই তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছি। বোঝাতে চাইছি অস্ট্রেলিয়ায় গণতন্ত্র আছে।’’ জানা গিয়েছে, ওই তথ্যচিত্র প্রদর্শনের আগে স্বল্প সময়ে আলোচনাসভাও হবে।

 

Comments :0

Login to leave a comment