অমিত কুমার দেব: কোচবিহার
পুলিশের বেপরোয়া মারে মৃত্যু হলো এক মহিলার। কোনও মহিলা পুলিশ নয়, পুরুষ পুলিশরা মদ্যপ অবস্থায় আক্রমণ করেছে বলে অভিযোগ পরিবারের। শুধু তাই নয়, তাদের আক্রমণে আহত হয়েছেন এই পরিবারের পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও। ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহার শহর সংলগ্ন গুড়িয়াহাটি ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের হরিণচওড়া গুদাম মহারানি এলাকায়। মৃতের নাম আম্বিয়া বিবি, তাঁর বয়স ৫৫বছর। তৃণমূলের আমলে পুলিশি সন্ত্রাস কতটা হিংস্র হতে পারে, তারই একটি জঘন্য উদাহরণ এই ঘটনা।
এই মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার সকাল থেকেই তুমুল বিক্ষোভ চলেছে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। দোষী পুলিশের অবিলম্বে শাস্তির দাবির পাশাপাশি ন্যায় বিচারের দাবিতে এদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কোচবিহার-দিনহাটা রাজ্য সড়কের হরিণ চওড়া এলাকায় পথ অবরোধ করেন মৃতের পরিজনদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষ।
আক্রান্ত পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, এই এলাকার বাসিন্দা হাফিজ আলির ছেলে আমজাদ আলির একটি দোকান রয়েছে স্থানীয় তোর্ষা নদীর বাঁধের রাস্তার পাশে। বৃহস্পতিবার এই দোকানের সামনেই নিজেদের গাড়ি ধোয়ামোছা করছিলেন একটি গাড়ির চালক। সংশ্লিষ্ট এই গাড়িটি পুলিশের ভাড়া নেওয়া। আমজাদ আলি সেই গাড়ি চালককে অনুরোধ করেন গাড়িটি দোকানের সামনে থেকে সরিয়ে ধোয়ামোছার জন্য। আর তাতেই সেই চালকের সঙ্গে হাতাহাতি বেঁধে যায় আমজাদের। পরে পরিবারের লোকজন মিলে বিবাদ মিটিয়ে দেন।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে শুক্রবার মাঝরাতে আচমকা ৫টি গাড়িতে করে কোচবিহার কোতোয়ালি থানার বেশ কিছু পুলিশ মিলে হানা দেয় এই হাফিজ আলির বাড়িতে। বাড়ি ঘিরে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বাড়ির পুরুষ-মহিলাদের। ঘটনাস্থলেই হাফিজ আলির স্ত্রী আম্বিয়া বিবির মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। হাফিজ আলি সহ তাঁর দুই ছেলে আমজাদ আলি এবং এমজাদ আলিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই গাড়ির চালকের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ এইকাণ্ড ঘটায় পুলিশ।
এই ঘটনার প্রতিবাদে দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘণ্টা চলে অবরোধ। এরপর কোচবিহার জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার চন্দন দাস ও কোচবিহার কোতোয়ালি থানার আইসি তপন পালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে আশ্বস্ত করার পর অবরোধ ওঠে।
এদিন রাজ্যের এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে যথারীতি পুলিশি মারধরের ঘটনাকে ধামাচাপা দিয়ে বলেন, দু’জন ড্রাইভারের মধ্যে মারপিট হয়েছিল। তার অভিযোগ আসার পর অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর এই গ্রেপ্তারির পর তার মা বাড়িতে ছিলেন এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মৃতের শরীরে কোনও ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়নি। এই গ্রেপ্তারের পরবর্তীকালে যেহেতু তার মৃত্যু হয়েছে, অর্থাৎ এই মৃত্যু যেহেতু এই গ্রেপ্তারের সাথে সম্পর্কিত, তাই এব্যাপারে অভিযোগ এলে তদন্ত হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভিডিওগ্রাফি করে মৃতের ময়না তদন্ত করা হবে বলে জানান তিনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে বলে জানিয়ে দেন রাজ্যের এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জাভেদ শামিম। যদিও পরিবারের লোকজন সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন।
Woman dies of Police torture
দল বেঁধে বাড়িতে এসে পুলিশের বেধড়ক মারে মৃত্যু মহিলার
×
Comments :0