জয়ন্ত সাহা ও অমিত কুমার দেব: কোচবিহার
দখল করা জমি, লিজের টাকা ফেরানোর কথা এখন বলছে তৃণমূল। পুষিয়ে দেওয়ার রাজনীতি করছে। পকেটমার টাকা ফেরালেও শাস্তি হয়। সন্দেশখালিতেও তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের শাস্তি দিতে হবে।
সোমবার কোচবিহারে সন্দেশখালিতে অন্যায় প্রসঙ্গে এই দাবি তুলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদাক মহম্মদ সেলিম। সন্দেশখালিতেও বিজেপি বিভাজনে নেমেছে। সেলিম বলেছেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক বিভাজনে নেমে তৃণমূলের অপরাধ আড়াল করে বিজেপি।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘বাজেটে সরকারি টাকা থেকে ১০০ দিনের বকেয়া দেওয়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এখানেও পুষিয়ে দেওয়ার রাজনীতি। যারা একশো দিনের মজুরি চুরি করেছে লুট করেছে তাদের শাস্তি দিতে হবে।
এদিন সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা দপ্তরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ রেখেছে। কাজ দেওয়ার আইন ইউপিএ-১ সরকারের সময় বামপন্থীরা তৈরি করেছে। চুরির জন্য আইনি ব্যবস্থার কথা বলা আছে আইনেই। চোরদের বিরুদ্ধে বিজেপি কোণো ব্যবস্থা নেয়নি। গরিব মানুষকে শাস্তি দিয়েছে।’’
সন্দেশখালি প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘অপরাধীদের ধরতে হবে, বিচার করতে হবে, জমি ফেরত দিতে হবে। লাল ঝান্ডা পুঁতে তেভাগা থেকে অপারেশন বর্গা পর্যন্ত মানুষ সুন্দরবন এলাকায় জমি উদ্ধার করেছে জোতদার জমিদারের কাছ থেকে। আবারও এই লড়াইয়ে নামছেন মানুষ।’’
সাংবাদিক বৈঠকে সেলিম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অলকেশ দাস, জীবেশ সরকার, পার্টির কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় প্রমুখ।
সেলিম বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস তাদের মস্তান, গুন্ডা, পুলিশ, বিডিও অফিস সবকিছুকে ব্যবহার করে একেকটা এলাকায় মুক্তাঞ্চল তৈরি করেছে। যেখানে বিরোধীরা থাকবে না, বামপন্থীরা অফিস খুলতে পারবে না, মিছিল করতে পারবে না, মিটিং করতে পারবে না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে অন্যায় চলছে মুক্তাঞ্চলে। বামফ্রন্টের সময়ে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের যে জমি, পাট্টা দেওয়া হয়েছিল তা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অপারেশন বর্গা করে ভূমিহীন কৃষকদের যে জমি দেওয়া হয়েছিল, তা কেড়ে নিচ্ছে। যে জলা জমিতে মাছ চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন সাধারণ মানুষ, এই জলা জমি দখল করে নেওয়া হচ্ছে এবং তা ভরাট করেও নেওয়া হচ্ছে। চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর এই সবই হয়েছে সন্দেশখালিতে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘দুর্নীতি চালাতে গেলে একটি দুষ্কৃতী যোগ লাগে। ধর্ষক, স্মাগলার, বালি পাচারকারী, কয়লা পাচারকারীদের এককাট্টা করে একটি সাম্রাজ্য তৈরি করেছে তৃণমূল। আর এখন এই সাম্রাজ্যের নেতৃত্ব দিচ্ছে অভিষেক। দু’বছর আগে পর্যন্ত এর নেতৃত্ব দিতেন এখন বিজেপি’র নেতা শুভেন্দু। তার আগে নেতৃত্ব দিতেন মুকুল রায়।’’ সেলিম বলেন, ‘‘মানুষ প্রতিবাদে নামলেই বিজেপি হিন্দু-মুসলমান করছে। শুধু মুসলমান নয়, এটা বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা আসলে তত্ব সামনে আনছে। এরা আসলে অপরাধীদেরকেই বাঁচাচ্ছে।’’
এদিন জাতীয় মহিলা কমিশন যায় সন্দেশখালিতে। এই প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘সব কমিশনখোরদের কমিশনে রাখা হয়েছে রাজ্যে এবং কেন্দ্রে। এজন্যই এরা একসঙ্গে বলেছিল লাল হটাও, দেশ বাঁচাও। কোথায় এই কমিশন ছিল যখন হাথরাসের ঘটনা ঘটেছিল? কোথায় কমিশন ছিল যখন উন্নাও হয়েছিল?’’
ইন্ডিয়া জোট ছাড়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘যারা আগে বিজেপি'র সঙ্গী ছিল এখন একটু গোঁসা হয়েছে, তাদের সম্পর্কে খুব সাবধানে থাকতে হয়। আর যারা এখন সঙ্গী নয়, কিন্তু ভবিষ্যতে বিজেপির সঙ্গী হতে পারে তাদের সম্পর্কেও সাবধানতা অবলম্বন করাটা জরুরি।’’
সেলিম ফের জানান যে ‘ইন্ডিয়া’ রাজনৈতিক মঞ্চ, কোনও নির্বাচনী জোট নয়। রাজ্য ভিত্তিক আসন সমঝোতা হবে।
Comments :0