Bahanaga accident

ইঞ্জিনিয়ার ‘বেপাত্তা’র খবর অস্বীকারই করল রেল

জাতীয়

প্রথম থেকেই বাহানাগার রেল দুর্ঘটনাকে অন্তর্ঘাতের চেহারা দিতে মরিয়া কেন্দ্রের শাসক গোষ্ঠী। আবার এর স্বাভাবিক দোসর হিসাবে রয়েইছে গোদী মিডিয়া। এরই সঙ্গে সুচারুভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর চেষ্টাও আছে। মঙ্গলবারই যেমন একটি খবরকে ঘিরে হইচই ফেলে দেয় কেন্দ্রীয় সরকারের ধ্বজাধারী সংবাদমাধ্যমগুলি। একে রেল দুর্ঘটনা তদন্তে নয়া মোড় বলেও দাবি করা হতে থাকে। রটিয়ে দেওয়া হয়, তদন্তে গিয়ে সোমবার বালেশ্বরের সোরো সেকশনের রেলের এক জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি ‘সিল’ করে দিয়ে আসেন সিবিআই অফিসাররা। আমির খান নামের ওই রেলের ইঞ্জিনিয়ার এখন নাকি বেপাত্তা—এমনও খবর ছড়ানো হয়। অবশ্য এদিনই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জনসংযোগ বিভাগের পক্ষ থেকে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের নিখোঁজ থাকার খবরকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করে জানানো হয় যে, ওখানকার রেলের সমস্ত কর্মী-অফিসার কোথাও যাননি, তাঁরা কাজেই আছেন।
অভিজ্ঞ মহলের বক্তব্য, ‘‘ওই অফিসারের নাম যেহেতু আমির খান সেজন্যই পরিবার সহ ‘গা ঢাকা’ দেওয়ার খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এমনকি তদন্তের স্বার্থে ওই রেল কর্মীর বালেশ্বরের বাড়িতে গিয়ে তালা বন্ধ দেখেই ‘সিল’ করে দিয়েছেন সিবিআই অফিসাররা, প্রচার করা হয় সেই খবরও।’’ অথচ দুর্ঘটনার পরেই সিবিআই অফিসাররা তদন্তে গিয়ে আমির খান সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত অফিসারদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের একাংশ এও প্রচার করে যে, সেই সময় আমির খানকে এমন এক জায়গায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তদন্তকারীরা যা প্রকাশ্যে জানানো হয় না। শুধু তালা ঝুলিয়ে দিয়ে আসাই নয়, ওই জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ির ওপর নজর দেওয়ার কথাও বলে এসেছেন অফিসাররা, এমন খবরও প্রকাশ করা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উন্মোচনের বদলে একটা রহস্য-রোমাঞ্চ মোড়ক দেওয়ার দুর্নিবার প্রয়াস চালাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী-কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর পেটোয়া সংবাদমাধ্যম।
বস্তুত, এই চেষ্টা দুর্ঘটনার পরেই সামাজিক মাধ্যমে একটি মসজিদের ছবি ছড়িয়ে দিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি করা হয়েছিল। সঙ্ঘের আইটি সেল বাহানাগা স্টেশনের দুর্ঘটনাস্থলের অদূরে অবস্থিত একটি ইসকন মন্দিরের ছবি বিকৃত করে মসজিদের অবয়ব দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল। নবীন পট্টনায়েক সরকারের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপে ‘সেই জল বেশি দূর গড়ায়নি’। বিজেপি শাসিত রাজ্য হলে কী হতো, অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই স্বাভাবিকভাবে সে নিয়ে প্রশ্ন ছিল কারও কারও মনে।
ফলে এদিনও পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে আন্দাজ করেই এদিন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক আদিত্যকুমার চৌধুরি ভিডিও টুইট করে কড়া বিবৃতি দিতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবর করা হয়েছে যে, বাহানাগার রেলকর্মী পলাতক ও নিখোঁজ। এই খবরটি সত্য নয়। ওখানকার সমস্ত রেলকর্মীরা উপস্থিত আছেন এবং তাঁরাও তদন্তের অংশ। জিজ্ঞাসাবাদে অংশও নিয়েছেন সবাই।’’
গত ১৬ জুন সিবিআই’র তদন্তকারী দলটি বালেশ্বর ছেড়ে চলে যায়। তার পর আবার আচমকা সোমবার বালেশ্বরে আসেন তদন্তকারীরা। জুনিয়র ইঞ্জিনিয়রের বাড়িটি তখনই সিল করে দেওয়া হয় বলে জানায় একাংশ। এই যুবকের খোঁজেই সিবিআই ফিরে এসেছিল বলে দাবি করা হচ্ছে। আবার সিবিআই তদন্তকারীরা এর পর বাহানগা বাজারের স্টেশন মাস্টারের বাড়িতেও যান। তাঁকেও দুর্ঘটনা সংক্রান্ত কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে খবর। এর আগে তদন্ত শুরু করেই সিবিআই অফিসাররা বাহানাগা স্টেশনে ট্রেনে যাত্রীদের ওঠানামা বন্ধের পাশাপাশি স্টেশনও সিল করে দেন। বাজেয়াপ্ত করেন লগ বুক, রিলে প্যানেল সহ অন্যান্য সরঞ্জাম। বলা হচ্ছে, ওই রিলে ইন্টারলকিং সিস্টেম বাজেয়াপ্ত করে পরীক্ষার পরেই সিগন্যালের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারের উপর সন্দেহ দানা বেঁধেছে তদন্তকারীদের।
প্রাথমিকভাবে সিগন্যালের ত্রুটিতেই এমন দুর্ঘটনা হয়েছে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পরে রেলের তরফে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা কথা সামনে নিয়ে আসা হয়। রেলমন্ত্রী নিজে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করেন। এরপরেই একাংশ থেকে প্রচার শুরু হয়, কোনও ব্যক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়া শুধু প্রযুক্তিগত ত্রুটিতে এত বড় দুর্ঘটনা সম্ভব নয়। 
উল্লেখ করা যেতে পারে, ২ জুন ওডিশার বাহানাগা বাজার স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস, ডাউন বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস এবং একটি মালগাড়ি। তীব্র গতিতে চলতে চলতে হঠাৎই লুপ লাইনে ঢুকে গিয়ে মালগাড়িকে ধাক্কা মেরে উলটে গিয়েছিল করমণ্ডল এক্সপ্রেস। করমণ্ডলের ইঞ্জিনটি উঠে গিয়েছিল মালগাড়ির একটি কামরার উপরে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা হাজারের বেশি। বেশ কয়েকটি দেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি, যা পড়ে রয়েছে ভুবনেশ্বর এইমস-এ।

Comments :0

Login to leave a comment