পার্থ বিশ্বাস
ভাগাড় এ রাজ্যে সংবাদ শিরোনামে এসেছিল ২০১৮ সালে ভাগাড়ের পশু মাংসের কেলেঙ্কারির ঘটনায়। শহর লাগোয়া এক ভাগাড়ের মৃত পশুদের মাংস চোরাচালান করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল একদল দুষ্কৃতী। ভাগাড়ের সেই মৃত পশুদের মাংস চালান হতো শহর-শহরতলির বিস্তীর্ণ অংশের নামী দামি রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ছোট বড় ফুড জয়েন্টে। ভাগাড়ের পশুর মাংসের এমন চোরাচালানের ঘটনায় ভয়ঙ্কর ধাক্কা খেয়েছিল রাজ্যের মানুষ ভাগাড়ের নিরাপত্তার বহর দেখে। এবারও আরেক ভাগাড় ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে শহর-শহরতলির মানুষের। সেবারের ভাগাড় ছিল মৃত পশুদের দেহ ফেলার স্থান, আর এবারের বিতর্কিত ভাগাড় শহরের আবর্জনা জমা করার স্থান। এমন ভাগাড় বা পরিভাষায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড যেকোনও নগর জীবনের আজ অবিচ্ছেদ্য অংশ। নগরায়নের ধাক্কায় রাজ্যে কিংবা দেশে শহর এলাকায় জনঘনত্ব দ্রুত বেড়ে চলেছে। জনঘনত্ব বাড়ার সাথে সাথে শহর জীবনে বেড়ে চলেছে আবর্জনা এবং বর্জ্যের পরিমাণ হু হু করে।
নগর জীবনে ভাগাড়
প্রতিদিনে ঘর-গৃহস্থালির বর্জ্য থেকে শুরু করে শিল্পজাত বর্জ্য এমনকি নির্মাণ বজ্র পদার্থ মূল শহর থেকে সরিয়ে এনে জমা করা হয় শহর থেকে দূরে অবস্থিত ভাগাড় কিংবা ডাম্পিং গ্রাউন্ডে (Land fill)। ফলে শহরকে আবর্জনা মুক্ত রাখতে গেলে শহরের উপকণ্ঠে এমন ভাগাড় তৈরি করাটা নগর পরিকাঠামোর এক জরুরি উপাদান। শহরে যেমন জরুরি নিকাশি, পানীয় জল, বিদ্যুৎ কিংবা আবাসন, তেমনি প্রয়োজন শহর পরিষ্কার রাখতে আবর্জনা শহর থেকে বের করে দূরবর্তী কোনও স্থানে সেগুলি জমা করা। এমনকি শহরের মধ্যে বিভিন্ন এলাকা জুড়ে আবর্জনা ফেলার ভ্যাট থাকে। পৌরসভার উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি থেকে পাড়ার ভ্যাট অবধি এবং পাড়ার ভ্যাট থেকে শহরের ভাগাড় অবধি সেই আবর্জনা বয়ে নিয়ে গিয়ে জমা করা হয়। ভাগাড়ে জমা হওয়া সেই আবর্জনা সেখানে ফেলার আগে সেগুলির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ভাগ করার প্রথা এখন দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধির অন্তর্ভুক্ত ।
জঞ্জাল হোক সম্পদ
বহু পৌরসভার ক্ষেত্রে এমন ঘরোয়া জঞ্জাল পাড়ার ভ্যাটে ফেলার আগেই আলাদা আলাদা বাক্সে ভরে জমা করার প্রথা চালু রয়েছে। আবর্জনার মধ্যে ভাগ করা হয় জৈব পচনশীল ( Bio-degradable), পচনশীল নয় (Non Bio-degradable) অজৈব এবং রাস্তা ঝাড় দেওয়া ধুলো মাটি, ভাঙা কাচ, নির্মাণ বর্জ্যের মতো নিষ্ক্রিয় পদার্থ (inert waste)। বৃহত্তর কলকাতার প্রতিদিনের বর্জ্যের মধ্যে ৪১% জৈব পচনশীল এবং ৩৭.৯% নিষ্ক্রিয় বর্জ্য। জৈব পচনশীল বর্জ্য ভাগাড়ে নিয়ে গিয়ে সেগুলির প্রক্রিয়াকরণের ( recycling) মাধ্যমে সার কিংবা বিদ্যুতের উৎপাদন করা যায়. তৈরি করা যায় পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে অজৈব পলিমার, এমনকি পেভার ব্লক থেকে শুরু করে বিল্ডিং বোর্ড সবই। কার্যত জঞ্জাল থেকে সম্পদ উৎপাদন করাই এই প্রক্রিয়াকরণের মুল উদ্দেশ্য। আধুনিককালে জঞ্জালের প্রক্রিয়াকরণের পরিকাঠামো ছাড়া ভাগাড় অকেজো, অথচ সেই অর্থহীন অকেজো পরিকাঠামো নিয়েই বেড়ে উঠেছে বছরের পর বছর এই রাজ্যে ভাগাড়। গড়ে উঠেছে কোনও কারিগরি বিধি না মেনেই। সেখানে নেই জঞ্জাল আলাদা করে জমা করার ব্যবস্থা। বিশেষত এদেশে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’চালু হওয়ার দশ বছর পরেও কেন হাওড়ার মতো একটা মেট্রো শহরের ভাগাড়ে রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট বসানো যায়নি তার উত্তর রাজ্যের সরকার কিংবা হাওড়া পৌর প্রশাসনকেই দিতে হবে।
ভাগাড় প্রকল্পে প্রযুক্তি
হাওড়ার সেই ভাগাড়ের স্তূপে প্রতিদিন আবর্জনা ফেলার গাড়ি চলাচলের জন্য পাহাড়ি রাস্তার মতো করে তৈরি হয়েছে ভারী ভারী ট্রাক যাওয়ার পথ। এখানেই মূল প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে যে ডাম্পিং গ্রাউন্ডের মতো জরুরি পরিকাঠামো কি ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করে তৈরি হয়েছে? কারণ হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নদীবাহিত যে নরম পলিমাটি এবং জলা জায়গার উপরে ওই ভাগাড় তৈরি হয়েছে সেই মাটির ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত ভার যদি জঞ্জালের ওজনে তৈরি হয় সেক্ষেত্রে সেই নরম মাটি বসে গিয়ে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ফলে যে কোনও জঞ্জালের স্তূপের স্থায়িত্বের পেছনে রয়েছে তার দৈর্ঘ্য প্রস্থের সাথে জঞ্জালের উচ্চতার সম্পর্ক। দৈর্ঘ্য প্রস্থের তুলনায় উচ্চতা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে সেই স্তূপের ঢাল বরাবর জমা হওয়া আবর্জনা ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারে। ফলে জঞ্জাল স্তূপের উচ্চতার পাশাপাশি সেটির নিরাপদ ঢাল নির্ধারণ জরুরি জঞ্জাল সংবলিত ভুমিধস আটকাতেই। অথচ এক্ষেত্রে ভয়াবহ খাড়া ঢালে জমা হয়েছে জঞ্জাল বছরের বছর কোনও নজরদারি ছাড়াই! এবারের হাওড়ার ভূমিধসে পড়া জঞ্জালের স্তূপের উচ্চতা বাড়তে বাড়তে হয়েছিল প্রায় পনেরো তলা বাড়ির সমান। এই উচ্চতার জঞ্জালে এমন ভূমিধস অপ্রত্যাশিত নয়।
পাশাপাশি, আবর্জনার স্তরে যত্রতত্র প্রচুর পরিমাণ জৈব জঞ্জাল থাকায় সেগুলির পচনের পর বিভিন্ন গ্রিন হাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়, যার মধ্যে অন্যতম মিথেন। এই মিথেন দাহ্য গ্যাস এবং বায়ুর তুলনায় হালকা। ফলে ভাগাড়ের বিভিন্ন স্তরে লুকিয়ে থাকা জৈব বর্জ্যের পচনের প্রভাবে তৈরি হওয়া ওই মিথেন গ্যাস সেই স্তূপ থেকে পরিকল্পিতভাবে নির্গত করা না গেলে সেই গ্যাসের চাপের প্রভাবে বিভিন্ন জায়গার মাটি এবং জঞ্জাল আলগা হয়ে উঠতে পারে, ফেটে যেতে পারে। ফলে বিরাট উচ্চতার জঞ্জালের পাহাড়ে তৈরি হওয়া আলগা মাটি জুড়ে নেমে আসতে পারে ভূমিধস। ফলে একবার ভাগাড়ের মাটিতে ধসনামা শুরু হলে সেই ধসের প্রভাব লাগোয়া অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফলে এক্ষেত্রেও হাওড়ার ওই ভাগাড়ের লাগোয়া বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অসমান ভূমিধসের কারণে (Differential settlement) বাড়িঘর থেকে কংক্রিটের রাস্তা কিংবা জরাজীর্ণ পানীয় জলের পাইপলাইন বসতে শুরু করেছে।
উধাও নির্বাচন– বিপন্ন পরিকাঠামো
কিন্তু এই বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের বাসস্থান রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্যের প্রশাসন। সেই জেলায় মন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে কখনো এমন বিপর্যয়কে প্রাকৃতিক বিপর্যয় কখনো আগের বাম জমানার ভাগাড় নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে একদা কলকাতা শহরের আবর্জনা ফেলার একটা বিস্তীর্ণ এলাকা ছড়িয়েছিল শহরের ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের আশপাশ জুড়ে, যে জায়গাগুলোতে কার্যত এখন সায়েন্স সিটি কিংবা পিসি চন্দ্র গার্ডেন্স কিংবা স্বভূমির মতো পার্ক আমরা দেখতে পাই। সেগুলি সবই তৈরি হয়েছে জঞ্জালের পাহাড়ের উপরে। ফলে ভাগাড় বাম জমানায় তৈরি হলেও তার ভারবহন ক্ষমতা নির্ধারণ না করে বছরের পর বছর অপরিকল্পিতভাবে ময়লা ফেলার কারণে বিপর্যয় হলে তার দায় বর্তমান সরকার বা পৌর প্রশাসনকেই নিতে হবে।
সন্দেহ নেই হাওড়া অত্যন্ত পুরানো শহর। কলকাতার মতো হাওড়ার একাংশ অপরিকল্পিত ঢঙে বেড়ে উঠেছিল। কিন্তু গত দু’দশকে হাওড়ায় যে পরিমাণ জনঘনত্ব বৃদ্ধি হয়েছে সেই অনুযায়ী শহরের পৌর পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। শহর জুড়ে লাগামছাড়া বেআইনি নির্মাণ বেড়েছে, অথচ নিকাশি থেকে পানীয় জল সরবরাহের পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি হয়নি। পরিবর্তনের পর হাওড়া শহরের নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয় স্থানান্তরিত হলেও সেই শহরের পৌর পরিকাঠামোর মান বিন্দুমাত্র উন্নত হয়নি। এমনকি গত আট বছর ধরে হাওড়ার মতো বিরাট পৌরসভা এলাকার পৌর নির্বাচন বন্ধ রয়েছে রাজনৈতিক কারণে। ফলে রাজ্যের সরকার নির্বাচিত পৌর প্রশাসনের পরিবর্তে ওই হাওড়া পৌরসভা চালানো হচ্ছে পৌর প্রশাসক বসিয়ে। এমন মনোনীত পৌর প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অদক্ষতার নজির দেখেছে হাওড়াবাসী গত কয়েক বছর ধরেই শহরের জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যু, গ্রীষ্মের পানীয় জলের হাহাকার কিংবা বর্ষায় বিপর্যস্ত নিকাশি, জমা জলে বেড়ে ওঠা মশার কারণে মানুষের ডেঙ্গুর ভোগান্তি। এসব মিলিয়েই হাওড়া হয়ে উঠেছে দুঃস্বপ্নের এক নগরী। পৌর নির্বাচন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই শহরের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাচ্ছে না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকলে হয়তো ঐ ভাগাড় এলাকার প্রান্তিক মানুষ জীবিকার এই পরিকাঠামো সঙ্কটের কথা সর্বোচ্চ প্রশাসনের কানে পৌঁছাতো! ভূমিধসের পর বেরিয়ে এসেছে পৌর প্রশাসনের কঙ্কালসার চিত্র। ফলে অবিন্যস্ত পরিকাঠামোর ধাক্কায় ঐ অগোছালো শহরে মানুষের জীবন যন্ত্রণার উপশম দ্রুত ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না।
দূষণমুক্ত ভাগাড়
পাশাপাশি হাওড়ার এই ভাগাড়কাণ্ডের থেকে সরকার শিক্ষা না নিলে রাজ্যবাসীর ভবিষ্যতের বিপর্যয়ের বহর বাড়বে বৈ কমবে না! বিশেষত এ রাজ্যে শতাধিক পৌরসভার পৌর এলাকার অধিকাংশের মধ্যে পরিকল্পিত উপায়ে গড়া ডাম্পিং গ্রাউন্ড নেই। এই প্রেক্ষিতে বড় জনসংখ্যার পৌরসভার ক্ষেত্রে বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণের উপযুক্ত প্রযুক্তিনির্ভর প্ল্যান্ট জরুরি। ভাগাড় সংলগ্ন জমিতে আবর্জনার দূষণ যাতে মাটি কিংবা ভূগর্ভস্থ জলে না ছড়ায় তার জন্য উপযুক্ত পলিমারের আস্তরণ দিয়ে ভাগাড়ের মাটিকে ঢেকে দেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন ভাগাড়ের নির্মাণক্ষেত্রকে লোকালয় জলাশয় কিংবা মূল রাস্তা থেকে বিধি সম্মত দূরত্বে স্থাপন করা। এমনকি ওই ভাগাড় এলাকাকে চিহ্নিত করে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সেই এলাকাকে ভৌগোলিকভাবে শহরের মূল এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করা জরুরি। অন্যথায় শহরের প্রান্তিক দরিদ্র মানুষেরাই সাধারণত এই আবর্জনা স্তূপের আশপাশে বসবাস করতে থাকে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে। আর্থ-সামাজিক সঙ্কটের গেরোয় পড়া এই প্রান্তিক মানুষেরাই ভোগ করে সবচেয়ে বেশি দূষণ যন্ত্রণা। ফলে এমন দূষণ চিত্রের প্রেক্ষিতে বেলগাছিয়ার ভাগাড়ের কান ঘেঁষে তৈরি হওয়া বহু দরিদ্র মানুষের বিকল্প বাসস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা জরুরি।
রাজ্যে অতীতের ভাগাড়ের মাংস কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছিল তদন্ত কমিটি। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটি আট বছর বাদে কি সুপারিশ করেছে ভাগাড়ে নিরাপত্তা রক্ষায়, সেটা আজও রাজ্যবাসীর অজানা। এই প্রেক্ষিতে বর্তমানে হাওড়ার ভাগাড় বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্ট দিনের আলোর মুখ দেখবে কিনা সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু বর্তমান বিপর্যয়ের প্রেক্ষিতে রাজ্যের সরকার এবং পৌর প্রশাসনের উচিত কেবলমাত্র কলকাতা হাওড়ার মতো বড় শহর নয় বরং রাজ্যের মাঝারি এবং ছোট শহরগুলোতেও উন্নত মানের আবর্জনা ফেলার জায়গা এবং তার প্রক্রিয়াকরণ জরুরি। নিরাপদ নাগরিক জীবনের স্বার্থে জরুরি আমাদের এই ক্ষয়ে চলা বাস্তুতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে।
বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুযায়ী আবর্জনা ফেলার জায়গা সাধারণভাবে মূল রাস্তা থেকে অন্তত ৫০০ মিটার দূরে থাকার কথা হলেও শহরের উপকণ্ঠে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের ধারেই নতুন করে আবার এক আবর্জনার স্তূপ তৈরি হয়েছে, একটি নতুন ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেই আবর্জনা স্তূপের বহর যেভাবে বাড়ছে প্রতিদিন, সেখানেও আগামী দিনে আবার একটি বিপর্যয় আশঙ্কা লুকিয়ে রয়েছে। অথচ আধুনিক নগরায়নের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে এই ধরনের বিপজ্জনক ভাগাড়কে তুলে দেওয়ার কথাই প্রস্তাবিত হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিতে।
পরিবেশ রক্ষার দায় সরকারের
বর্জ্য নিষ্কাশন বা তার পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে প্ল্যাান্টের প্রাথমিক উদ্যোগ নিতে হবে রাজ্যের সরকারকেই। এমন উদ্যোগে শিল্পপতিদের শামিল করাটাও রাজ্য সরকারের ইতিকর্তব্যের মধ্যেই পড়ে, অথচ প্রতিবছর রাজ্য বাজেটে কিংবা ঘটে চলা রাজ্যের শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে এ ধরনের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যে রিসাইক্লিং প্্যােরন্ট গড়ার কোনও পরিকল্পনা আজ অবধি নজরে আসেনি। ইতিমধ্যে national green tribunal রাজ্যের সরকারকে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যমাত্রা পুরণ না করতে পারায় ৩৫০০ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করেছে। কলকাতা শহরের পৌর বাজেটে বর্জ্য পরিবহণ এবং বাড়ি বাড়ি বর্জ্য সংগ্রহের ব্যয় ব্যতিরেকে কেবলমাত্র ৫% পড়ে থাকে বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের জন্য। ফলে হাওড়া কিংবা কলকাতার মতো বড় শহরে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে আরও কার্যকরী পরিকল্পনা এবং আরও বেশি সরকারি অর্থ বরাদ্দের প্রয়োজন, শহরের মানুষকে দূষণমুক্ত পরিবেশে বাঁচিয়ে রাখতে। এখানে উল্লেখ্য, রাজ্যে একটি তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ কিংবা ইস্পাত শিল্প স্থাপনের চাইতে অনেক কম খরচে বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের কারখানা তৈরি করা যায়, অথচ পরিকল্পনার অভাবেই এমন রিসাইক্লিং প্ল্যা্ন্ট এই রাজ্যে গড়ে উঠছে না দীর্ঘকাল ধরে। ফলে সাম্প্রতিককালে হাওড়ার বেলগাছিয়া অঞ্চলে ভাগাড় বিপর্যয়, এ রাজ্যের soild waste mis-management- এর এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে রইল।২০১৮
Dumping Ground Landslide
দুঃস্বপ্নের নগরী, অরক্ষিত ভাগাড়,, অরক্ষিত মানুষ

×
Comments :0