Bikash Ranjan Bhattacharyya

সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ ঠেকাতে পাঠকদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান

রাজ্য জেলা

লব মুখার্জী- খড়দহ

দেশ ও রাজ্যের আত্মমর্যাদা বিপন্ন। প্রতিবাদ করুন। সব কিছু মেনে নেবেন না। সাংসদ আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য মঙ্গলবার খড়দহে একথা বলেন। তিনি বলেন, সমাজ বিকাশের সব চেয়ে বড় হাতিয়ার শিক্ষা প্রসারের ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। কারণ শিক্ষার আলো যারা পাচ্ছে তারা গণতন্ত্রকে পুরোপুরি ভাবে প্রতিষ্ঠার কথা বলছে। 
এদিন তিনি বক্তব্য রাখছিলেন খড়দহ পুষ্প প্রদর্শনী ও বিজ্ঞান মেলা আয়োজিত আলোচনা সভায়। বিষয় ছিল , "বর্তমান ভারতবর্ষে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ কি বিপন্ন?" 
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য ছাড়াও আলোচকদের মধ্যে ছিলেন , গণশক্তি পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী, ফোর্থ পিলার উই দ্য পিপল এর চিফ এডিটর সুদীপ্ত সেনগুপ্ত , প্রেস ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস শূর। সঞ্চালক ছিলেন অসীম ব্যানার্জি।
বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, নরেন্দ্র মোদী বলছেন দেশের  ৮০ কোটি মানুষকে তিনি খাওয়াচ্ছেন। অর্থাৎ দারিদ্র্য সীমার নীচে থাকা এই মানুষদের দারিদ্র্য সীমার উপরে তোলার পরিবর্তে তিনি নাকি খেতে  দিচ্ছেন। এটা দেশের আত্মমর্যাদা হারানোর পরিস্থিতি। দেখা যাচ্ছে  ইলেকট্রোরাল বন্ডের মাধ্যমে সব চেয়ে বেশি টাকা পায় বিজেপি এবং তার পরেই আছে তৃণমূলের নাম। যেসব কর্পোরেট সংস্থা এই টাকা  দিচ্ছে তারাই সংবাদ পত্র ও সংবাদ সংস্থা কিনে নিছে। শুধুমাত্র সংবাদ মাধ্যম বা সাংবাদিক নয় তারা নিউজ এজেন্সিও কিনে নিচ্ছে। দেশের সব কিছু আদানি আম্বানিদের দিয়ে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী।
তিনি বলেন , গণতন্ত্র ও জনগণের কন্ঠ ধরে রাখতে পার সাংবাদিকরা। এমন কোনো তথ্য নেই যার মধ্যে দিয়ে প্রমাণ হয় ওখানে রাম জন্মেছিলেন অথচ সেখানেই রাম মন্দির হওয়ার যেভাবে রায় দেওয়া হয়েছে , সে বিষয়ে প্রতিবাদ করতে পারে  গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যম ও  সাংবাদিকরাই।

দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন , অনেক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কিছুদিন আগেও সংবাদ মাধ্যমকে রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীন বলা যেতো। কিন্তু এমন সব আইন আনা হচ্ছে তার ফলে এখন  আর পুরোপুরি ভাবে এই কথা বলা যাচ্ছে না।
নিউজক্লিক’র সম্পাদক প্রবীর পুরকায়স্থকে ইউএপিএ ধারায় গ্রেপ্তারের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন , পরিস্থিতির পরিবর্তনে এগিয়ে না এলে, এরকম কণ্ঠরোধের  আরো ঘটনা দেখা যাবে। গণতান্ত্রিক সাংবাদিকতা রক্ষা করতে সচেতন পাঠকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। নইলে স্বাধীন সংবাদ পত্র থাকবেনা গণতন্ত্রও থাকবে না। তিনি বলেন , ক্রমশই  কর্পোরেট পুঁজি যদি সংবাদ মাধ্যমের দখল নেয় তবে তার প্রভাব পড়তে থাকবে সাংবাদিকতায়। কর্পোরেট মালিকানায় এখন বিভাজন মূলক বিষয় তৈরি করা হচ্ছে।
দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, এ রাজ্যে হাই কোর্ট অদেশ আসার পরেও গণশক্তি পত্রিকাতে সরকারি বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় না। বাইনারি সৃষ্টির জন্যে  নবান্ন ঠিক করছে কোন কাগজে কে সম্পাদক হবে।
সুদীপ্ত সেনগুপ্ত বলেন, চতুর্থ স্তম্ভের বিপন্নতা শুধু দিল্লি থেকে সৃষ্টি করা হচ্ছে না। কলকাতা থেকেও একই বিপদ  আসছে। বিরোধিতা করার জন্য সংবাদপত্রকে কোনো বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে না এটা নির্মম সিদ্ধান্ত। ভারতবর্ষ জুড়ে বিকল্প ভাবে ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যম এগিয়ে আসার ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন , বিকল্প  ডিজিটাল মিডিয়ার এই কঠিন কাজকে  বাঁচিয়ে রাখতে শ্রোতা দর্শক সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন , রাম মন্দির উদ্বোধন উপলক্ষে অকাল দীপাবলি পালন করার কথা প্রধানমন্ত্রী বলতে পারেন না। এটা বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে কালো দিন।

স্নেহাশিস সুর বলেন , এখন চুক্তি নির্ভর সাংবাদিক নিয়োগ হচ্ছে। কারো নবীকরণ না হলেও কিছু বলার নেই। কোভিড কালে কাজ করেও প্রচুর সাংবাদিকের কাজ চলে গেছে।
পদ্মভূষণ , পদ্মশ্রী এবং ভাটনগর পুরস্কার প্রাপ্ত এবং সাহা ইন্সটিটিউটের প্রাক্তন অধিকর্তা ডাঃ দীপ্যমান গাঙ্গুলি এবং কবি , সাহিত্যিক , সঙ্গীত শিল্পী ও বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক শতরূপা সান্যাল সোমবার খড়দহ পুষ্প প্রদর্শনী ও বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধন করেন। প্রতিদিনই থাকছে নানান প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা সভা। প্রদর্শনী ও মেলা চলবে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।

Comments :0

Login to leave a comment