তিনি বিজেপি’র সর্বভারতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিজেপি’র জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম মুখপাত্র। সেই তিনি, রাজু বিস্তা সংসদে বিপাকে পড়ে গেছিলেন গত জুলাইয়ে।
কারণ? তিনি লোকসভায় প্রশ্ন করেছিলেন ‘হিল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’-এ ২০১৯ থেকে কত টাকা দার্জিলিঙের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে? বিস্তা দার্জিলিঙের সাংসদ ২০১৯ থেকে। তিনিই এই প্রশ্ন করবেন তা স্বাভাবিক। কিন্তু তাল কাটলো উত্তরে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান ও প্রকল্প রূপায়ণ দপ্তরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী রাও ইন্দরজিৎ সিং গতবছরের ২৬জুলাই বিস্তার সেই প্রশ্নের উত্তরে জানালেন,‘‘দার্জিলিঙের জন্য এমন কোনও টাকা বরাদ্দের কোনও প্রশ্নই ওঠেনা। কারণ, ২০১৫-১৬ থেকে স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের তালিকা থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে হিল এরিয়া ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম!
বিস্তা আর কিছুই বলেননি। মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে, একবছরের মধ্যে ওই প্রকল্প বাদ দিয়েছেন। আর ২০১৯-এ মোদীরই দলের সাংসদ হিসাবে চার বছর ‘আচ্ছে দিন’ কাটিয়ে ফেলা বিস্তা জানেনই না দার্জিলিঙকে ইতিমধ্যেই বঞ্চিত করে ফেলেছে বিজেপি!
সেই বিস্তা আবার দার্জিলিঙে বিজেপি’র প্রার্থী। তৃণমূল এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। কারণ, এই নিয়ে মোদীকে কখনও কিছু বলেননি মমতা ব্যানার্জি।
গত পাঁচ বছর বিজেপি কী দিলো? সোনাদার তিলান খালিংয়ের কথায়,‘‘আমি তো দেখিনি গত পাঁচ বছরে বিজেপি দার্জিলিঙের জন্য কিছু করেছে। শুধু পাঁচ বছর কেন? দার্জিলিঙে তো বিজেপি’র ১৫বছর সাংসদ। আগে বলতো গোর্খাল্যান্ড করে দেবে। এবার সেটা বলতে পারছে না প্রকাশ্যে। লোকে আর বিশ্বাস করে না।’’
তৃণমূলের সরকার আছে রাজ্যে ১২ বছর। দার্জিলিঙ কী পেয়েছে? হরকা বাহাদুর ছেত্রীও বলতে পারছেন না। কালিম্পঙের বিধায়ক ছিলেন। মমতা ব্যানার্জিকে ‘পাহাড়ের মা’ বলেছিলেন। বামপন্থীদের বিরোধী মানুষটি সোমবার বললেন,‘‘এবার কাউকে সমর্থন করছি না। তৃণমূলকেও না। বিজেপি’কেও না।’’ হরকার এই অবস্থানে কোনও কৌশল আছে, এমনটাই মনে করছেন অনেকে। কিন্তু পাহাড় অথবা সমতল— দার্জিলিঙ লোকসভার ভোটদাতা অনেকেই, যাঁরা এর আগে তৃণমূল কিংবা বিজেপি’কে ভোট দিয়েছেন, এবার তাঁরা দ্বিধায়। শিলিগুড়ির বিধায়ক, বিজেপি’র নেতা শঙ্কর ঘোষের ঘনিষ্ট এক বিজেপি কর্মী বলেছেন তাৎপর্যপূর্ণ কথা। যুবকের কথায়,‘‘নাম লিখবেন না। একটি কথাই বলি। শিলিগুড়ির এমন কোনও কাজের কথা বলতে পারছি না, যা আমরা করছি। বিস্তার টাকায় কী হয়েছে? আমাদের নেতারাই বা শিলিগুড়ির জন্য কী করেছেন?’’
পাহাড়, সমতল, তরাইয়ের চা বাগান, কৃষিক্ষেত্র, শিলিগুড়ি মহানগর ও উত্তর দিনাজপুর জেলার চোপড়া নিয়ে গঠিত দার্জিলিঙ লোকসভা কেন্দ্র। বৈচিত্রপূর্ণ দার্জিলিঙ লোকসভা কেন্দ্রে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য রক্ষা করাই প্রথম থেকে বামফ্রন্টের অগ্রাধিকার ছিল। আর ছিল কাজের প্রশ্ন। তৃণমূল শাসনে কাজ নেই। শিলিগুড়ি লাগোয়া এলাকায় ছোট, মাঝারি শিল্পের বিকাশের যে প্রকল্পগুলি মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন, তার কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। দার্জিলিঙ পাহাড়ের চুংথুঙ, কলেজ ভ্যালি, রংবুক, মুণ্ডা, অম্বাটিয়া সহ বিভিন্ন চা বাগান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকার বন্ধ চা বাগানগুলি খোলার বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা টি বোর্ডের সদস্য হয়েও দার্জিলিঙ পাহাড়ের ১৫ থেকে ২০টি চা বাগান বন্ধ রয়েছে। অথচ সব বাগান খোলার প্রতিশ্রুতি ছিল তৃণমূল এবং বিজেপি’র। শিলিগুড়ি লাগোয়া সমতলের মতোই পাহাড়ের অনেক গ্রাম থেকে যুবকরা কাজের খোঁজে চলে গেছেন ভিন রাজ্যে। পাহাড়ের যুবরা দুবাই, সিঙ্গাপুর পর্যন্ত গেছেন। ব্যাঙ্গালোর, দিল্লিতে তো অনেকে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ড. মুনীশ তামাঙ। মহেন্দ্র রাই, দেবেন্দ্র রাই, রিমত ছেত্রীদের মতো অনেক যুবক এবার বামফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে প্রচার করছেন। আপার বাগডোগরার বাসিন্দা প্রকাশ কুজুরের কথায়, বহু কষ্ট করে পড়াশুনা শিখেছি। এখন টাকার প্রয়োজনে ছোটখাট যা কাজ করি। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যতোটুকুও বা শিল্প সম্ভাবনা ছিল তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সব কাজের কোনও সুযোগই তৈরি হয়নি।
সিপিআই(এম) নেতা বিজনবাড়ির কেবি ওয়াতারের কথায়,‘‘তৃণমূলের শাসনে জিটিএ সহ সরকারি ক্ষেত্রে ব্যপক দুর্নীতি দেখেছেন মানুষ। আর বিজেপি যা বলেছিল তার কিছুই করতে পারেনি। আমাদের প্রার্থী পাহাড়ে প্রচার করবেন কয়েকদিনের মধ্যেই। মানুষের অনেক অভিযোগ। কেন আমরাই একমাত্র বিকল্প, তা তুলে ধরার মতো পরিস্থিতি আছে।’’
Comments :0