Comred Paritosh Dey

কমরেড পরিতোষ দে’র জীবনাবসান

জেলা

Comred Paritosh Dey ক্যাপশন- মঙ্গলবার বারুইপুরে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন রাহুল ঘোষ।


প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা, পার্টির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মন্ডলীর প্রাক্তন সদস্য কমরেড পরিতোষ দে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস অসুখে ভুগছিলেন। সোমবার রাতে সোনারপুরের চৌহাটিতে হৃদরোগে তাঁর জীবনাবসান হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন সিপিআই(এম)’র সর্বক্ষণের কর্মী। অসুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চৌহাটিতে সোনারপুর দক্ষিণ এরিয়া কমিটির দপ্তরই ছিল তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কয়েক বছর ধরে তিনি চৌহাটিতে ভাইয়ের বাড়িতে বসবাস করছিলেন। সেখানেই তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। 
কমরেড পরিতোষ দে’র আকস্মিক জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ও পার্টির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক শমীক লাহিড়ী। প্রয়াত নেতার আত্মীয় পরিজনদের প্রতি তাঁরা শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

বাংলাদেশের খুলনায় তাঁর জন্ম। দেশভাগের পর পরিবারের সাথে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কাঁকিনাড়ায় আসেন। তরুণ বয়সে তিনি কাঁকিনাড়ায় বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন। সেখানে ১৯৬৫ সালে তিনি পার্টি সদস্যপদ অর্জন করেন। পরবর্তীতে সোনারপুরের রাজপুরে অ্যানসিলিয়ারি কারখানায় তিনি চাকরিতে যোগ দেন। সেখানে শ্রমিকদের সংগঠিত করেন, সিআইটিইউ অনুমোদিত ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলেন। সাতের দশকে আধাফ্যাসিস্ত সন্ত্রাসের সময়ে কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করতে অপহরণ করেছিল। তাৎক্ষনিক বুদ্ধি সাহসিকতার সঙ্গে তিনি নিজের ও আরো দুই জন কমরেডের প্রাণ বাঁচাতে সমর্থ হয়েছিলেন।

কমরেড পরিতোষ দে তৎকালীন সিপিআই(এম) সোনারপুর যাদবপুর জোনাল কমিটি পরবর্তী সময়ে সোনারপুর বারুইপুর জোনাল কমিটি ও সোনারপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন তিনি পার্টির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। তিনি দশ বছর তৎকালীন রাজপুর পৌরসভার কাউন্সিলর ছিলেন। ১৯৮৯ - ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত পৌরসভার পৌরপ্রধান হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় দীর্ঘদিন তিনি ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন। সাধারণ জীবনযাপন করতেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মতাদর্শে অবিচল ছিলেন। শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে নিবীড় যোগাযোগ ছিল। বিভিন্ন সামাজিক,সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি অকৃতদার ছিলেন।  

মঙ্গলবার প্রয়াত প্রবীণ কমরেডের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুরের সুকান্ত সেতু পার্টি দপ্তর ও বারুইপুরে সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা দপ্তরে। প্রয়াত নেতার মরদেহে রক্ত পতাকা দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য রাহুল ঘোষ, পার্টি নেতা অলোক ভট্টাচার্য, চন্দনা ঘোষদস্তিদার। তাঁরা ছাড়াও শেষ শ্রদ্ধা জানান পার্টি নেতা কান্তি গাঙ্গুলি, কানাই দেব, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, দেবাশিস দে, অরিন্দম মুখার্জি প্রমুখ। সিআইটিইউসহ বিভিন্ন গণসংগঠনের তরফেও প্রয়াত নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। হরিনাভিতে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভা, শান্তশ্রী পল্লীতে আপনজন প্রয়াত নেতার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও বহু মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন। ফুল, মালা আর চোখের জলে শেষ শ্রদ্ধা জানান সকলে। তিনি মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার করেছিলেন। সেই মতো তাঁর মরদেহ পার্টি নেতৃত্বের উপস্থিতিতে কলকাতায় এস এস কে এম হাসপাতালে চিকিৎসকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

Comments :0

Login to leave a comment