EDITORIAL MODI TRIBAL

ভণ্ড আদিবাসী প্রেম

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ


শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ছত্তিশগড় ও মধ্য প্রদেশে নির্বাচন। প্রচার শেষ হচ্ছে ১৫ নভেম্বর বিকেল পাঁচটায়। বিগত প্রায় এক মাস ধরে এই দুই রাজ্যে হত্যে দিয়ে পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোট বাজারের হাওয়া আশানুরূপ নয় বলে  দিনে দু’টো, এমনকি তিনটে জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন তিনি। একই দু’রাজ্যেই প্রচারে ঝাঁপাচ্ছেন। অবশ্য এছাড়া তাঁর করার কিছু নেই। দলে তিনিই মহাগুরু, বিশ্বগুরু। তিনি ছাড়া বাকি সব নিমিত্তমাত্র। দলকে জেতানোর দায় তাঁরই কাঁধে। ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অনেক ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন, কাজে লাগেনি। বিহারে জাতভিত্তিক জনগণনার তথ্য প্রকাশ হতেই বুঝে গেছেন উচ্চবর্ণের নামে দাদাগিরি চলবে না। মোট জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশই তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসি। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদের চৌহদ্দির বাইরে থাকা দলিতরাই সমাজে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। আর তারাই আর্থ-সামাজিক দিক থেকে অনেকটা পিছিয়ে। মোদী জমানার সাড়ে নয় বছরে এই পশ্চাদপসরণ অনেক বে‍‌ড়েছে। মোদী সরকার সচেতনভাবেই সমাজে আয় ও সম্পদ বৈষম্যের তীব্রতা প্রকট করেছে। এই অনিবার্য ও নির্মম সত্যটা বিরোধীরা বারবার তুলে ধরার চেষ্টা করলেও সাধারণ মানুষের কাছে তা অনেকটাই অস্বচ্ছ ও ধোঁয়াশাপূর্ণ ছিল। এবার তা স্পষ্ট ও স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। বিপদ বুঝে মোদীও মুখোশ বদলে ফেলেন। নির্বাচনের প্রচা‍‌রে তিনি এখন আর ধর্মীয় বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক উসকানি কমিয়ে দলিত, ওবিসি এবং আদিবাসী দরদি হয়ে উঠতে চাইছেন। দলিতদের মন পেতে বলছেন দলিতরাই দেশে প্রধান জাত। তিনি নাকি তাদের উন্নয়নে নজর দিয়েছেন। এমন উন্নয়ন করেছেন ঘরে ঘরে বেকার-কর্মহীন। জিনিসের দাম বাড়ে কিন্তু রোজগার বাড়ে না। সংগঠিত শিল্পে কাজ নেই। ধুঁকছে অসংগঠিত ক্ষেত্রও। রুজির জন্য আর কোনও জায়গা না পেয়ে বিপন্ন মানুষ স্বউদ্যো‍‌‍‌গে যা হোক কিছু একটা করে বেঁচে থাকার প্রয়াস চালাচ্ছেন।
যে দু’রাজ্যের ভোটের জন্য মরীয়া প্রচার চালাচ্ছেন সেখানে মধ্য প্রদেশে ২১.১ শতাংশ আদিবাসী এবং ছত্তিশগড়ে ৩০.৬ শতাংশ আদিবাসী। অর্থাৎ আদিবাসীদের সমর্থন না মিললে জেতার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই প্রচার শেষের দিন তিনি ছুটে যাচ্ছেন ঝাড়খণ্ডে। আদিবাসীদের আইকনিক নেতা বীরসা মুণ্ডার জন্মদিনে তাঁর জন্মস্থানে হাজির থেকে আদিবাসীদের আবেগে ভাগ বসাতে চাইছেন। এত বছর ধরে কোনও দিন তাঁর এমন আদিবাসী প্রেম দেখা যায়নি। ঝাড়খণ্ডে গিয়ে ‍‌তিনি আদিবাসীদের জন্য ২৪ হাজার কোটি টাকার কেন্দ্রীয় প্রকল্প ঘোষণা করবেন। কয়েকদিন আগে ভোট প্রচার সভায় ৮০ কোটি মানুষকে আগামী পাঁচ বছর বিনামূল্যে রেশন দেবার ঘোষণা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। তাই এবার বেছে নিয়েছেন ঝাড়খণ্ডে বীরসা মুণ্ডার জন্মস্থানকে। অথচ এই মোদী সরকারই বনাঞ্চল থেকে আদিবাসীদের উৎখাত করতে বন সংরক্ষণ আইন সং‍‌শোধন করেছে। বনাঞ্চলে জল-জমি-জঙ্গল কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতেই এই সংশোধন। এই ভোটের মুখে বিপদে পড়ে আদিবাসীদের ক্ষোভে মলম লাগাতে যাচ্ছেন।

Comments :0

Login to leave a comment