EDITORIAL ADANI ISRAEL

প্যালেস্তাইন নীতিতে আদানি গোষ্ঠীর ছায়া

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ


মোদীর আদানি যোগ না আদানির মোদী যোগ সেটা নিয়ে তর্ক চলতে পারে। কিন্তু ভারতের শিল্প মানচিত্রে ধূমকেতুর মতো আদানি সাম্রাজ্যের উত্থান যে মোদী জমানাতেই সেটা নিয়ে তর্কের অবকাশ। ভারতের শিল্পগোষ্ঠীর তালিকায় আদানিরা কোনোকালেই ছিল না। গুজরাটের এক পাতি ব্যবসায়ী হিসাবে আদানিরা ছিল অখ্যাত, অজ্ঞাত। মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হবার পরই পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে আদানি গোষ্ঠী। তাদের ব্যবসার পরিধি তীব্র গতিতে বাড়তে শুরু করে। বাড়তে থাকে বিনিয়োগের পরিমাণও। মোদীর গুজরাট সরকারের সৌজন্যে গোষ্ঠী হিসাবে ডালপালা ছড়াতে শুরু করে। তখনও গুজরাটের বাইরে আদানির সাম্রাজ্যের বিস্তার হয়নি। সেটা শুরু হয় মোদী প্রধানমন্ত্রী হবার পর। মোদী সরকারের সৌজন্যে গুজরাটে এক পাতি ব্যবসায়ী দেশের সবচেয়ে ধনী ও সম্পদশালী হয়ে ওঠে। দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠিত শিল্পগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে তরতর করে এগিয়ে যায়। বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ জলবন্দর এবং বিমানবন্দরের মালিক আদানি গোষ্ঠী। মোদী সরকারের হাত ধরে বিদেশেও বিস্তার ঘটেছে তাদের ব্যবসা। অস্ট্রেলিয়া, ইজরায়েল, গ্রিস, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ থেকে শুরু করে বহু দেশে আদানির সম্পদ কিনেছে মোদীর মধ্যস্থতায়। আজ পর্যন্ত মোদী যত দেশ সফর করেছেন তার বেশিরভাগ দেশেই আদানিদের ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে। মোদী সরকারের সৌজন্যে ভারতের বিদেশ নীতিতে আদানিদের গুরুতর স্বার্থ জড়িয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতি পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পেয়ে যাচ্ছে আদানিদের স্বার্থ। সরকারি নীতি তৈরি হচ্ছে আদানিদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে। এখন দেখা যাচ্ছে ভারতের বিদেশনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলছে আদানিদের স্বার্থ। ভারতের প্যালেস্তাইন নীতি বদলে যাবার পেছনেও আদানিদের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িয়ে আছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
স্বাধীন ভারত গোড়া থেকেই প্রশ্নাতীভাবে স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের পক্ষে। ইজরায়েলের পাশাপাশি প্যালেস্তাইনবাসীদের নিজস্ব রাষ্ট্রের অধিকার আছে বলে ভারত মনে করে। স্বাধীন প্যালেস্তাইনের বিরোধী আমেরিকা ও তার গুটিকয়েক ক্ষুদ্র সহযোগী দেশ। মার্কিন মদতে ও সহায়তায় বছরের পর বছর ধরে ইজরায়েল প্যালেস্তাইন ভূখণ্ড দখল করে স্ফীত হয়েছে আর প্যালেস্তাইন আয়তনে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়েছে। এখন সেটা গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে এসে ঠেকেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘে আজ পর্যন্ত যত প্রস্তাব এসেছে সবকটিই বিপুল সমর্থন পেয়েছে প্যালেস্তাইনের পক্ষে। নিরাপত্তা পরিষদেও প্যালেস্তাইনের পক্ষে প্রস্তাব আটকাতে প্রতিবার ভেটো দিতে হয়েছে আমেরিকাকে। এই দীর্ঘ ইতিহাস জুড়ে ভারত ছিল ইজরায়েলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীন প্যালেস্তাইনের পক্ষে। মোদী ক্ষমতায় আসার পর পরিবর্তন শুরু হয়। এখন ভারত শিবির বদলে মার্কিন-ইজরায়েল অশুভ জোটে ভিড়েছে। এই শিবির বদল তথা নীতি বদলের পেছনেও উঁকি মারছে মোদী বন্ধু আদানির স্বার্থ। ভারত-মধ্য এশিয়া-ইউরোপ যে নতুন বাণিজ্য করিডরের কথা ঘোষিত হয়েছে সেটাও আদানিদের বন্দরকে কেন্দ্র করে। গুজরাট-মহারাষ্ট্রে আদানিদের বন্দর থেকে জাহাজে পণ্য যাবে আ‍‌মিরশাহীতে আদানিদের কেনা বন্দরে। সেখান থেকে রেলে যাবে ইজরায়েলে আদানিদের কেনা হাইপা বন্দরে। অতঃপর জাহাজে পণ্য যাবে গ্রিসে আদানিদেরই বন্দরে। অর্থাৎ গোটা করিডরটাই আদানিদের নিয়ন্ত্রণে। স্বাভাবিকভাবেই আদানিদের ব্যবসায়িক স্বার্থে এ করি‍‌ডর চালু করতে ইজরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে হবে। ইজরায়েলের গণহত্যায় তাই মোদী সরকার নিন্দা বা বি‍‌রোধিতা করতে পারছে না। দাঁড়াতে হচ্ছে ইজরায়েলের পক্ষেই।

Comments :0

Login to leave a comment