‘তুমহারি হিম্মত ক্যায়সে হুই হামারে কাম মে ইন্টারফেয়ার করণে কি? রুকী, আভি তুমকো হস্টেল সে গায়েব জরওয়া দেতা হুঁ, ঘরে ঢুকে শনিবার ভোররাতে জেএনইউ ছাত্র সংসদের যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ সাজিদকে এভাবেই হুমকি দিলেন লোহিত হস্টেলের ওয়ার্ডেন প্রণব কুমার। কোনও কারণ ছাড়াই এই হিংসাত্মক আক্রমণ করেন তিনি। শুধু এটুকু নয়, অশ্রাব্য ভাষায় মারাত্মক হেনস্তা করা হয়েছে ছাত্রনেতাকে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে আতঙ্ক, নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে। জেএনইউ ছাত্র সংসদ এর তীব্র বিরোধিতা করে ইসলামোফোবিক ওই ওয়ার্ডেনের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে ছাত্র নেতৃত্ব বলেছে, ‘এটা কোনও পৃথক ঘটনা নয়। সঙ্ঘ পরিবারের রাজত্বে এই কায়দাতেই ছাত্র-ছাত্রী বিশেষ করে প্রান্তিক অংশের পড়ুয়াদের উপর আক্রমণ করা হয়ে থাকে। ফ্যাসিবাদী শাসনে হুমকি সংস্কৃতি, পিটিয়ে খুন, বৈষম্যের চেহারা প্রকট। ফলে অধ্যাপক বা শিক্ষা কর্মীর বেশে শাসক-আশ্রিত গুন্ডারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিশানা তৈরি করবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি হয়েও প্রণব কুমার একই ঘটনা ঘটালেন, হিংসার পরিবেশ তৈরি করলেন। সঙ্ঘ পরিবার এবং এবিভিপি এই আদবকায়দাতেই ছাত্র-ছাত্রীদের হেনস্তা করে থাকে। হস্টেলের ওয়ার্ডেন ছাত্র-ছাত্রীদের সুরক্ষা, ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্বে থাকেন। আর সেখানে দেশের প্রথম সারির এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ডেন ছাত্রের ঘরে ঢুকে হুমকি দিচ্ছেন। এর থেকে স্পষ্ট, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মদতেই ক্যাম্পাসে হিংসা ছড়ানো হচ্ছে।
ছাত্র নেতারা জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গতবার জেনারেল বডি মিটিংয়ের সময়ও সাজিদের উপর এবিভিপি দুষ্কৃতীরা একইভাবে আক্রমণ হানে। হুমকি দিয়ে তারা বলেছিল, ‘তুমকো ভি নাজিব বানা দেঙ্গে।’ এর থেকেই স্পষ্ট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের কীভাবে ‘টার্গেট’ বানানো হয়। একজন ব্যক্তি হিসাবে সাজিদের সঙ্গে এই আচরণ আসলে মুসলিম সমাজের উপর ইচ্ছাকৃত ঘৃণ্য আক্রমণ। বিজেপি-আরএসএসের মদতে ক্যাম্পাসে কীভাবে ঘৃণা ছড়ানো হয়, কীভাবে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়, তার একটি উদাহরণ মাত্র এই ঘটনা।
সাজিদের উপর এই আক্রমণ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতা, ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তিকরণের মূল্যবোধে আঘাত নামিয়ে এনেছে। কড়া ভাষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃবৃন্দ কর্তৃপক্ষকে হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা আমাদের ক্যাম্পাসকে এই ফ্যাসিস্ত শক্তিদের আখড়া হতে দেব না। ছাত্র-ছাত্রী, বিশেষ করে প্রান্তিক অংশের পড়ুয়াদের উপর কোনও রকম আক্রমণ আমরা বরদাস্ত করব না। এরপর মারাত্মক প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে। এই ক্যাম্পাসকে ঘৃণা ছড়ানোর জায়গা হতে আমরা দেব না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর নিরাপত্তা, মর্যাদা রক্ষায় আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। ক্যাম্পাসে শান্তি ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতেই হবে।
অবিলম্বে লোহিত হস্টেলের ওয়ার্ডেনকে সরানোর দাবি তুলে ছাত্র সংসদ বলেছে, প্রণব কুমারকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে তাঁর অপেশাদার, বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য। আরও দু’দফা দাবি জানিয়েছে তারা। প্রথমত, সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে কর্তৃপক্ষকে এবং দ্বিতীয়ত, প্রতিটি হস্টেলের পরিত্যক্ত শৌচাগার নিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যে সমস্যা চলছে, তার দ্রুত সমাধান করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের প্রতিদিন প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
JNU attack
হস্টেলে ঢুকে ছাত্রনেতা সাজিদকে হেনস্তা, গায়েব করে দেওয়ার হুমকি
×
Comments :0