গল্প | নতুনপাতা
ওয়ালপেপার
সৌরীশ মিশ্র
"বাবা, রিকশাটা একটু দাঁড় করাতে বল না, বল না।"
"কেন রে, কি হোলো হঠাৎ?"
"বলছি, আগে বল না, বল না দাঁড় করাতে।"
"ভাই, রিকশাটা দাঁড় করাও তো।"
রিকশাচালক সাথে সাথেই ব্রেক চেপে রিকশা দাঁড় করায় রাস্তায় সাইড করে।
শঙ্খ আর ওর বাবা চলেছে বাজার। আজ রবিবার। এখন সকালবেলা। সপ্তাহের অন্যান্য দিন শঙ্খর বাবা বাড়ির একেবারে কাছেই যে ছোটো বাজারটা বসে সেখান থেকেই বাজার করেন। কিন্তু, রবিবারগুলোয় ওনার বারোয়ারিতলার বড়বাজারে যাওয়া চাই-ই চাই। প্রচুর দোকান যে বসে এই বাজারটায়। রবিবার হাতে সময়ও থাকে তাঁর। মনের মতোন করে রবিবারগুলোয় গুছিয়ে বাজার করেন তাই শঙ্খর বাবা।
এখনও চলেছেন তিনি ছেলেকে নিয়ে ঐ বাজারেই। তবে, শঙ্খ প্রতি রবিবারই যে বাবার সাথে বাজারে যায়, তা নয়। কিছু কারণ থাকলেই তবেই ওর বাবা ওকে নিয়ে যান বাজারে। আজও যেমন কারণ আছে একটা। বাজার করে ছেলের চুল কাটাবেন তিনি। ক'দিন হোলো খেয়াল করছিলেন, ছেলের চুলটা বড্ড বড় হয়ে গেছে। বড়বাজারের একটা নির্দিষ্ট সেলুন থেকেই নিজেও চুল কাটেন তিনি বরাবর আর ছেলেরও কাটান।
"কি রে, বললি না তো কেন রিকশা থামাতে বললি?" শঙ্খের বাবা শুধোন ছেলেকে।
"ঐ দ্যাখো বাবা নেতাজীর কি সুন্দর স্ট্যাচু!" আঙুল তুলে বাবাকে দেখায় শঙ্খ।
শঙ্খের বাবা দেখেন, ঠিক তাই। রিকশাটা যেখানে দাঁড়িয়েছে তার পাশেই যে পার্কটা, সেটারই মেন-গেটের এক ধারে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর একটা মূর্তি। সেটাকেই দেখাচ্ছে ছেলে।
"বাবা, এই স্ট্যাচুটা এখানে তো ছিল না। কবে বসালো?"
"কে জানে কবে বসালো! এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া তো হয় না বাজার। বড় রাস্তাটা ধরেই তো রিকশায় যাই-আসি। আজ রাস্তার কাজ হচ্ছে বলে ওটা বন্ধ। তাই, এই পথে যাচ্ছে রিকশা। তবে, বোধহয়, তেইশে জানুয়ারিতেই উদ্বোধন করেছে রে।"
"হ্যাঁ দাদা। পরশুই তো হোলো।" রিকশাচালক বলে।
"বাবা, চল না মূর্তিটা কাছে গিয়ে দেখি।"
"চল্। তুমি একটু দাঁড়াও গো।" প্রথম বাক্যটা ছেলেকে আর শেষটা রিকশাচালককে বললেন শঙ্খের বাবা।
দু'জনই নামেন রিকশা থেকে। পায়ে-পায়ে এসে দাঁড়ান নেতাজীর আবক্ষ মূর্তিটির সামনে। সত্যিই মূর্তিটা তারিফ করার মতোই। মনে মনে ভাবেন শঙ্খের বাবা।
শঙ্খর দিকে তাকান তিনি এবার। দেখেন, অপলকে মূর্তিটির দিকে তাকিয়েই আছে ছেলে।
"দেখা তো হোলো। চল্ এবার।"
বাবার দিকে তাকায় শঙ্খ। তারপর বলে, "বাবা, নেতাজীর মূর্তিটার সাথে আমার একটা ছবি তুলে দেবে। আমি আমার কম্পিউটারের স্ক্রিনে ওয়ালপেপার করে রাখব।"
"ঠিক আছে। যা, মূর্তিটার আরো কাছে।" বলতে বলতেই পাঞ্জাবির পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করেন শঙ্খের বাবা।
শঙ্খ পায়ে-পায়ে এগিয়ে গিয়ে মূর্তিটির একেবারে কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর দু'হাত জোড় করে প্রণাম করে নেতাজীকে সে।
শঙ্খর বাবাও তাঁর মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে তখুনি আঙুল ছুঁয়ে সেই সুন্দর মুহূর্তটিকে ফ্রেমবন্দী করে ফেলেন।
Comments :0