১৪ জানুয়ারি কর্ণপ্রয়াগ ছেড়ে চামোলির পথে যখন যাচ্ছি, কিছুটা এগোবার পরেই গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। সামনে সারি দিয়ে গাড়ি। মানুষজনও গাড়ি থেকে নেমে পড়েছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম সামনে ‘কাটিং চল রাহা হ্যায়, ইস লিয়ে গাড়ি রুখ গয়ি’। ‘কাটিং’ বস্তুটি কী বুঝতে নেমেই পড়লাম। গাড়ির সারি পেরিয়ে কিছুদূর গিয়ে দেখলাম একটা ছোট পাহাড়ের মাথায় জেসিবি। পাহাড় থেকে পাথর কেটে কেটে নিচে ফেলছে। পাথর কাটা বন্ধ হলে নিচ থেকে এগিয়ে এল একটা পে লোডার। বড় বড় পাথর ফেলে রাস্তা সমান করার কাজ সারা হলে অবশেষে ফের গাড়ি চলার অনুমতি। রাস্তার উলটোদিকেও তখন সারি সারি গাড়ির মেলা।
শুধু চামোলি, রুদ্রপ্রয়াগ, কর্ণপ্রয়াগ অথবা পিপুলকোটি নয়। ঋষিকেশ থেকে দেবপ্রয়াগ, শ্রীনগর, গৌচর, কর্ণপ্রয়াগ, নন্দপ্রয়াগ চামোলি হয়ে জোশীমঠ– দীর্ঘ প্রায় ২৫১ কিলোমিটার পথের সবটুকুতেই কমবেশি এই ছবি। প্রায় পুরো রাস্তা হরেক রকমের হরেক কিসিমের মেশিনে মেশিনে ছয়লাপ। দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার যাত্রাপথে প্রকৃতি, নদী, নাকি যন্ত্র– কার দাপট দেখব তা নিয়ে মাঝেমাঝেই ধন্ধে পড়তে হচ্ছিল।
আগামী মাস চারেকের মধ্যেই যেহেতু চারধাম যাত্রা শুরু হবে তাই এই রাস্তার চতুর্দিকেই এখন তুমুল তৎপরতা। সময়ের আগেই চওড়া করে ফেলতে হবে রাস্তা। ভঙ্গুর পাহাড়ের বুক চিরে ঝাঁ চকচকে রাস্তায় মুড়ে ফেলে মসৃণ করতে হবে চারধাম যাত্রার যাবতীয় ব্যবস্থাপনা। সেখানে জোশীমঠের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের ঘটনা হয়তো ততটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ, উত্তরাখণ্ডের বিজেপি শাসিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামী জানিয়েছেন, ‘‘জোশীমঠের প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। আউলিতে সব কিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে। পর্যটকরা এখনও আউলিতে আসছেন।” দেরাদুন থেকে জারি করা বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘‘শহরের পঁচিশ শতাংশ এলাকা এখন পর্যন্ত ভূমিধসে প্রভাবিত। এই এলাকাগুলিতে বসবাসকারী জনসংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার।”
জোশীমঠে ফাটল গুরুতর আকার ধারণ করার পর উত্তরাখণ্ড প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়েছিল ‘বসবাসের অযোগ্য’। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে উত্তরাখণ্ড সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইন অনুসারে জোশীমঠের ৯টি ওয়ার্ড ‘আনসেফ ফর লিভিং’। তখনই ওই চত্বরের ৩৮০০ বাড়ির মধ্যে ৬০০-র বেশি বাড়িতে ফাটল ধরে গেছে। বেশ কিছু জায়গার জমিতে দেখা দিয়েছে বড় ফাটল। এই মুহূর্তে যে সংখ্যাটা ৮০০ পেরিয়েছে। সরকারি ঘোষণার পর বহু মানুষ এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। কিছু মানুষকে প্রশাসনিক স্তর থেকে উদ্যোগ নিয়ে সরানো হয়েছে। এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তড়িঘড়ি জোশীমঠের আপার বাজারে তৈরি করা হয়েছে বিজেপি’র ‘জোশীমঠ আপদা রাহত কেন্দ্র’।
সাল ১৯৭৬। সেই প্রথম জোশীমঠ নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিল এম সি মিশ্র কমিটি। ১৮ সদস্যের সেই কমিটির রিপোর্টে জানানো হয়েছিল– জোশীমঠ প্রাচীন ধসপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত এবং এখানে যদি নির্মাণ চালিয়ে যাওয়া হয় তাহলে যে কোনও সময় বড়সড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে জোশীমঠ। কারণ অলকানন্দা এবং ধৌলীগঙ্গার কাছাকাছি অবস্থিত জোশীমঠ মূলত বালি এবং নরম ছোট পাথর দিয়ে তৈরি। যা প্রকৃতিগতভাবে ভঙ্গুর। এই অঞ্চলে শক্ত, বড় পাথর নেই। তাই এই অঞ্চলে বসবাস বাড়লে, নির্মাণ বাড়লে অবধারিতভাবে তা বেশি সংখ্যায় ভূমিকম্প ডেকে নিয়ে আসবে।
এম সি মিশ্র কমিটির রিপোর্টে আরও জানানো হয় - “Joshimath is a deposit of sand and stone — it is not the main rock — hence it was not suitable for a township. Vibrations produced by blasting, heavy traffic, etc., will lead to a disequilibrium in natural factors…” ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছিল, “সঠিক নিকাশি ব্যবস্থার অভাবও ভূমিধসের জন্য দায়ী। জমা জলে ভিজে থাকা গর্তগুলো মাটি এবং বোল্ডারের মধ্যে বড়ো গহ্বর তৈরির জন্য দায়ী। যা ক্রমশ জলের ক্ষয় এবং মাটি ক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাবে এই অঞ্চলকে।”
ঠিক এই কথাই জানালেন জোশীমঠের প্রায় ৩০ বছরের বাসিন্দা, ঘোরতর বিজেপি সমর্থক এবং স্থানীয় এক হোটেলের মালিক জয় ভার্মা। যিনি প্রথমেই বিজেপি’র বিরুদ্ধে কিছু বলবেন না এই শর্ত দিয়েও কথায় কথায় বলে ফেললেন, এই অঞ্চলে কোনও নিকাশি ব্যবস্থা নেই। ফলে পাহাড়ে যত লোক বাড়ছে, হোটেল বাড়ছে সেই সমস্ত নিকাশির জল মাটিতে গিয়ে মিশছে। মাটি একটু একটু করে আলগা হচ্ছে। যার ফলে জোশীমঠে ধস বাড়ছে। বসে যাচ্ছে জোশীমঠের একটা অংশ। এছাড়া এনটিপিসি’র প্রোজেক্ট-এর জন্যও ফাটল দেখা দিয়েছে বলে কেউ কেউ বলছে। যদিও এটাই একমাত্র কারণ তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এতসব কিছু সত্ত্বেও প্রায় ৪৬ বছর আগের সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করেই এরপরেও জোশীমঠ জুড়ে নির্মাণ চলেছে লাগামহীন। যা এখনও চলছে লাগামহীন গতিতে। ক্রমশ ক্রমশ ভিড় বেড়েছে জোশীমঠে। এছাড়াও প্রতিবছর লাখে লাখে পর্যটকদের আনাগোনা। প্রকৃতিও অতিরিক্ত ভার সামলাতে সামলাতে আজ হয়তো বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। যার ফল জোশীমঠের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সাম্প্রতিক ফাটল। প্রকৃতির সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে আধুনিকতার মোড়কে মুড়ে ফেলার চেষ্টা প্রাচীন এই জনপদকে। সে মূল্য তো চোকাতে হবেই। এমনকি এখনও থমকে নেই নির্মাণ কাজ। এখনও অবাধে চলছে পাহার চূর্ণ বিচূর্ণ করে রাস্তা চওড়া করার কাজ। চলছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। পাহাড়ের বুক চিরে টানেল তৈরির কাজ।
এম সি মিশ্র কমিটির রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, জোশীমঠ রক্ষার স্বার্থে রাস্তা মেরামতি এবং অন্যান্য নির্মাণ কাজের সময় পাথর সরানো যাবে না, পাহাড়ি অঞ্চলে বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে না। ধসপ্রবণ এলাকা বলে পাহাড়ের নিচের অঞ্চল থেকে পাথর কেটে বের করা যাবে না। গাছ কাটা যাবে না। পাহাড়ের ধাপে চাষ করা যাবে না। বরং আরও বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। যদিও ২০০০ সালের নভেম্বর মাসে আলাদা রাজ্য হবার পর থেকে এখনও পর্যন্ত উত্তরাখণ্ড জুড়ে বিরামহীন নির্মাণ কাজের ছড়াছড়ি। যা খ্যাত ‘উন্নয়ন’ নামে।
অথচ জোশীমঠ যাবার পথ জুড়ে এখন জায়গায় জায়গায় জেসিবি, পে লোডারের দাপাদাপি। মাথা থেকে আস্ত পাহাড় কেটে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রবল বিক্রমে পাহাড়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে উন্নয়ন চলছে। জোশীমঠের আপার বাজার চত্বরের প্রতিটি দোকানে লাগানো হয়েছে ‘গো ব্যাক এনটিপিসি’ পোস্টার। সমস্ত হোটেল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। খবর পাওয়া গেছে বেশ কিছু বাড়িতে ফাটল ধরেছে কর্ণপ্রয়াগেও।
২০২০-র মার্চ থেকে শুরু করে ২০২২-র জুলাই পর্যন্ত উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যোশীমঠ এবং তার আশপাশের এলাকার পাহাড়ে একাধিক ফাটল দেখা গিয়েছে। প্রতি বছর ৬.৫ সেমি করে বসে যাচ্ছে যোশীমঠসহ সংলগ্ন এলাকা। গত বছর এক সমীক্ষায় এমনটাই জানিয়েছিল দেরাদুনের সরকারি সংস্থা- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং। যদিও এরপরেও যোশীমঠের তপোবন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখেনি এনটিপিসি। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সমানে চলেছে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ। গোপনে সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ চালানোর সেই ছবি, ব্লাস্টিং-এর ছবিও সামনে এসেছে। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের চারধাম সড়ক প্রকল্পের কাজও চলেছে সমানতালে। ইচ্ছেমত পাহাড় কেটে, গাছ কেটে চলেছে রাস্তা তৈরির কাজ। আর, এই দুইয়ের জেরেই যোশীমঠ সহ সংলগ্ন এলাকা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
ঘোষিত ‘ডেঞ্জার জোন’-এ থাকা আপার বাজার এখনও পর্যন্ত চালু থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। জায়গায় জায়গায় চার পাঁচ জন করে স্থানীয় মানুষ নিজেদের মধ্যে জটলা করছেন। কথা বলছেন। অবশ্যই ফিসফিসিয়ে। সেখানে আছে ক্ষতিপূরণের কথা, বিকল্প বাসস্থান আদৌ পাওয়া যাবে কিনা। গেলেও তা কীভাবে পাওয়া তা নিয়ে বাক্যালাপ। যদিও নিজেদের ভাষায় তাঁদের ফিসফিসে আলোচনা, চাপা স্বরে এনটিপিসি বিরোধী ক্ষোভ ঢাকা পড়ছে না। তবু অচেনা লোকের সামনে মুখ বন্ধ। এমনকি কোথায় জোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির বিক্ষোভ চলছে বা কে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা জানাতেও অনিচ্ছুক। এই ডেঞ্জার জোনেই দুটো হোটেল এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে তা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে কাজ করছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। আতঙ্কিত মানুষ ঘর ছেড়ে, বাসস্থান ছেড়ে, রোজগার ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করছেন। একাধিক পরিবারকে দেখেছি বাড়ির সবকিছু বেঁধে ছেঁদে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছেন। মনোহরবাগ এলাকায় ঢোকার মুখে চোখে পড়ল বেশ কয়েকটা পরিবার চেয়ার টেবিল গ্যাস সিলিন্ডার থেকে শুরু করে বাড়ির সর্বস্ব নিয়ে রাস্তায় বসে আছেন। গাড়ির অপেক্ষায়। যে গাড়ি হয়তো তাঁদের পৌঁছে দেবে আপাত নিরাপদ অন্য কোনও জায়গায়। আর কিছু কিছু মানুষ এখনও ‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ’ এই বিশ্বাসে ফাটল ধরা, ‘বসবাসের অযোগ্য’ নোটিস লাগানো বাড়ি আগলে বসে চোখের জল ফেলছেন।
ক্ষতিপূরণের দাবিতে, বিকল্প বাসস্থানের দাবিতে জোশীমঠ বাঁচাও সংঘর্ষ সমিতির ব্যানারে স্থানীয় বেশ কিছু মানুষ অবস্থান বিক্ষোভ করছেন লাগাতার। তহসিল অফিসের সামনে বসে দীর্ঘদিন ধরে একটানা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এনটিপিসি’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। ক্ষতিপূরণের দাবিতে, বিকল্প বাসস্থানের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। আগামী ২৬ জানুয়ারি এনটিপিসি অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যে সমিতির আহ্বায়ক অতুল সতী জানালেন, বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে জোশীমঠ। যে কোনও সময় বড় বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। অথচ প্রশাসনের কোনও হুঁশ নেই। এত মানুষ কোথায় যাবেন, তাঁদের বিকল্প বাসস্থান কোথায় হবে, তাঁদের ক্ষতিপূরণের কী হবে সে বিষয়ে প্রশাসনের কোনও সদুত্তর নেই। উলটে বিজেপি সরকার চেষ্টা করছে এই আন্দোলন থেকে সাধারণ মানুষকে সরানোর। এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতেও বিজেপি সরকার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জোশীমঠে চলছে টানেলের কাজ। আমাদের দাবি, অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এনটিপিসি’র কাজ। তাদের কাছ থেকে প্রোজেক্ট কস্ট-এর দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে বণ্টন করতে হবে।
এই সমিতিরই আরেক সক্রিয় সদস্য ইন্দ্রেশ মৈখানি জানালেন, তপোবন বিষ্ণুগড় হাইড্রো পাওয়ার প্রোজেক্ট বানাচ্ছে এনটিপিসি। এই প্রকল্পের সূচনার সময় থেকেই স্থানীয় মানুষ প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন। যার ফলে প্রকল্পের শিলান্যাস এই অঞ্চলে না করতে পেরে তা সরকার করে দেরাদুনে। ২০০৯ সালে যখন সেলং-এ টানেল তৈরির কাজ চলছিল তখনই প্রথম বিপর্যয় ঘটে। ধস নেমে মেশিন চাপা পড়ে যায়। সেই সময় ওই অঞ্চলে পাহাড় থেকে জল বেরিয়ে আসতে থাকে। যেখান থেকে প্রতি সেকেন্ডে ২০০ লিটার জল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। যা আজ এই সময় দাঁড়িয়েও একইভাবে বেরিয়ে চলছে। এই ঘটনার পরেই এনটিপিসি’র সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ ছেড়ে চলে যায় এল অ্যান্ড টি এবং তারা লিখিত অভিযোগ করে যে এক ভঙ্গুর জায়গায় সুড়ঙ্গ তৈরির বরাত দিয়েছে এনটিপিসি। যা কখনোই করা সম্ভব নয়।
চামোলী জেলার জোশীমঠের উচ্চতা ৬,৪০০ ফিটের কাছাকাছি। সিসমিক জোন ৫-এ অবস্থিত জোশীমঠের জন্মই হয়েছে অতীতের এক বড় ভূমিকম্প এবং ধস থেকে। যে অঞ্চল সবসময়েই ভূমিকম্প প্রবণ এবং যে কোনও সময় বড়ো ধরনের ভূমিকম্প এখানে ঘটতেই পারে। অতীতেও একাধিক বিপর্যয় ঘটেছে এবং প্রতিবারই বিপর্যয়ের পর সরকার একটা করে কমিটি গড়েই দায় সেরেছে।
সম্প্রতি যোশীমঠের ফাটল নিয়ে স্যাটেলাইট ছবি সহ উদ্বেগজনক এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ইসরো। যে ছবি থেকে জানা গেছে, ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারির মধ্যে মাত্র ১২ দিনে প্রায় ৫.৪ সেন্টিমিটার বসে গেছে যোশীমঠ। অর্থাৎ দ্রুত ভূমিধস ঘটছে। যদিও এই রিপোর্ট সামনে আসতেই 'তথ্য গোপন করতে' নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
কেন্দ্রের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর বা ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এক নির্দেশিকায় জানিয়েছে, সংবাদ মাধ্যম বা সোশাল মিডিয়ায় ভূমিধস সম্পর্কিত কোনও তথ্য শেয়ার করতে পারবে না কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠান। কারণ, সংস্থাগুলির তথ্য সম্পর্কিত 'নিজস্ব ব্যাখ্যা' বিভ্রান্তি তৈরি করছে। ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, 'এটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভূমি সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ করছে এবং সেই বিষয়ে মিডিয়ায় মতামত দেওয়ার সময় পরিস্থিতির নিজস্ব ব্যাখ্যা দিচ্ছে। যা শুধুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের মধ্যে নয়, দেশের নাগরিকদের মধ্যেও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে।'
ইসরোর সমীক্ষা, বিজ্ঞানীদের আশঙ্কার মাঝেই ২০ তারিখ সকাল থেকে জোশীমঠে শুরু হয়েছে তুষারপাত। যাতে বিপর্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা। অন্যদিকে প্রশাসন বলছে উলটো কথা। জোশীমঠের একটা বড় অংশের মানুষের কপালে যখন চিন্তার ভাঁজ, তখন অন্য এক অংশের মানুষ বলছেন, বিষয়টাতে এতো গুরুত্ব দেবার মতো কিছু নেই। যেমন জোশীমঠের স্কাউট ক্যাম্পে ঠিকায় চালানো এক দোকানদার তাঁর দোকানের সামনের ফাটল দেখিয়ে জানালেন ওই ফাটল বেশ কয়েক বছরের পুরানো। ওইভাবেই আছে। কোনও বড়ো বিপদ এখনও পর্যন্ত হয়নি। তবে এই দোলাচলের মাঝেই এই প্রশ্নকেও অস্বীকার করা যাচ্ছে না যে প্রাচীন এই জনপদের অস্তিত্ব আগামীদিনে আদৌ থাকবে তো? নাকি প্রকৃতির রোষে কালের গর্ভে চলে যাওয়া বহু শহরের মতো জোশীমঠেরও স্থান হবে ইতিহাসের পাতায়?
Editorial weather
রাজনৈতিক ‘উন্নয়ন’ বনাম প্রকৃতির প্রতিশোধ
×
Comments :0