প্রাণ গিয়েছে রেবতী মোহন বিশ্বাসের। ভোটের বুথে চরম হেনস্তার মুখে পড়েছেন সরকারি কর্মচারী, শিক্ষকরা। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। তা মানা হয়নি। উলটে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ম করে অসত্য অভিযোগ তুলে চলেছেন।
পঞ্চায়েত ভোট পর্বের পরপর ঘটনা তুলে প্রতিবাদে নামলেন সরকারি কর্মচারীরা। জলপাইগুড়ি জেলার বিভিন্ন ব্লকে এবং জেলা শাসকের দপ্তরে বিক্ষোভ হয়েছে সোমবার। কর্মচারী সংগঠন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর মন্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
ভোটের কাজে গিয়ে বুথেই অসুস্থ হয়েছিলেন। পরে মারা যান রেবতী মোহন বিশ্বাস। নদীয়ার একটি স্কুলের শিক্ষক মারা যান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে। সরকারি বহু কর্মচারীরই প্রাণ বিপন্ন হয়েছে নিরাপত্তা না থাকায়। কর্মচারীরা বলছেন, তবু মুখ্যমন্ত্রী অব্যবস্থার জন্য দায়ী করছেন সরকারি কর্মচারীদের। কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্যরা নাকি ব্যালট পেপারে সই করেননি। সম্পূর্ণ অসত্য এই অভিযোগ।
রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এই মিথ্যাচার ও অবমাননাকর মন্তব্যের বিরোধিতা করে আজ সারা রাজ্যে চলবে প্রতিবাদ।
ব্যালট পেপারে সইয়ের প্রসঙ্গ এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে গুরুতর ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয় যে ব্যালট পেপারে প্রিসাইডিং অফিসারের সই না থাকলেও তা বৈধ বলে ধরতে হবে। বামফ্রন্ট চিঠি পাঠিয়ে আইনের ধারা উল্লেখ করে কমিশনকে বলে যে এই নির্দেশ অবৈধ। গণনার আগে নির্দেশ ফেরাতে বাধ্য হয় কমিশন।
এই সময়ই নকল ব্যালট ছাপানোর অভিযোগ তোলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী। গণনার সময় বিপুল বেনিয়মও দেখা দেয়। ভোটের পর সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা ব্যানার্জি সই না করা ব্যালট বৈধ করতে না পারায় ক্ষোভ উগরে দেন। তাঁর যুক্তি বলেন, প্রিসাইডিং অফিসারের ভুলে কোনও ভোটদাতা কেন বঞ্চিত হবে!
বাস্তবে দেখা গিয়েছে ভোটদাতার অধিকার বাঁচাতে নয়, বরং কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে তৃণমূল। হেরে যাওয়া প্রার্থীদের বিজয়ী বলে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে। গ্রামের মানুষকে ভয় দেখানোর অসংখ্য অভিযোগ তুলেছে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ।
এদিন জলপাইগুড়িতে জেলা শাসকের দপ্তরের সামনে বেনিয়মে ক্ষোভ জানিয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। বক্তব্য রাখেন কোঅর্ডিনেশনের জেলা সম্পাদক মনোজিৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের জমানায় কর্মচারীদের সম্মান নেই। মুখ্যমন্ত্রী কখনও কুকুরের সঙ্গে কর্মচারী শিক্ষকদের তুলনা করছেন।’’ দাস বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকার কথা। রাজ্যজুড়ে যাঁরা ভোটের ডিউটি করতে গিয়েছিলেন তাঁরা জানেন কিভাবে প্রাণ হাতে করে বাড়ি ফিরেছেন।’’
তাঁর ক্ষোভ, নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে মুখ্যমন্ত্রী কোঅর্ডিনেশন কমিটিকে দায়ী করছেন।
Comments :0