Violence in Manipur

আবার হিংসা ছড়ালো মণিপুরে, ফিরল কারফিউ, পুড়ল বাড়ি

জাতীয়

Violence in Manipur

বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি

সোমবার নতুন করে হিংসা ছড়িয়েছে মণিপুরে। এদিন সকালে রাজধানী শহর ইম্ফলে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। চারটি বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। তবে প্রাণহানি ঘটেনি। জখম প্রায় ৩০ জন বলে জানা গেছে। পুলিশ ও আসাম রাইফেলসের জওয়ানরা পরিস্থিতি সামাল দিতে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে রাজ্যের এক প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক ও তাঁর দুই দেহরক্ষীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার পরপরই ফের দিনের বেলা কারফিউ জারি করা হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধের সময়সীমা আগামী ২৬ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

একটি আদিবাসী বাজারের দখল নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ইম্ফল শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিউ চেকন এলাকায়  ‘ট্রাইবাল মার্কেট’ নামে একটি সবজির বাজার রয়েছে। এই বাজারের বিক্রেতারা মূলত জনজাতি গোষ্ঠীর। স্থানীয়দের অভিমত, সাম্প্রতিক জাতি সংঘর্ষের ঘটনার পর ধীরে ধীরে বাজার খুলতে শুরু করলে ট্রাইবাল মার্কেটে জনজাতি বিশেষ করে কুকি ও নাগা গোষ্ঠীর বিক্রেতাদের পসরা সাজাতে বাধা দিচ্ছে মইতেইরা। জনজাতির বদলে মইতেই বিক্রেতারা এই বাজারে সবজি বিক্রি করতে শুরু করেন।  সোমবার কয়েকজন কুকি বিক্রেতা তাঁদের পসরা সাজালে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনায় দু’পক্ষ সম্মুখসমরে নেমে পড়ে। প্রথমে মারপিট করে, পরে দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে আসে পুলিশ ও আসাম রাইফেলস’র জওয়ানরা। আগুন নেভাতে আসে দমকলের ইঞ্জিন।

জওয়ানরা শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়েন। এতে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। ভয়ে দোকানে ঝাঁপ ফেলে দেন দোকানিরা। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মুহূর্তে শুনশান হয়ে যায় রাজধানী শহর। রাজ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বেলা একটা নাগাদ ইম্ফলে ফের কারফিউ জারি করে প্রশাসন। গত কিছুদিন ধরে সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল।
ঘটনার পরপরই  প্রাক্তন বিধায়ক টি থাংজালাম হাওকিপ (৭১), তাঁর দুই দেহরক্ষী জনলাল খপাও গাংথে (১৯) ও ভিকি মাঙ্গোলাম সিঙসন (৩৫)-কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হাওকিপ ২০১৭ সালে চুরাচাঁদপুর জেলার জনজাতি সংরক্ষিত হেঙলেপ আসন থেকে বিজেপি’র টিকিটে জয়ী হন। তিনি ২০১৭-২০২০ পর্যন্ত বীরেন সিং সরকারের প্রথমবার রাজ্য বিধানসভার উপাধ্যক্ষ ছিলেন। এছাড়া রাজ্যের হিল এরিয়া কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। বীরেন সিংয়ের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় ২০২০ সালে বিজেপি’র চার বিধায়কের সঙ্গে তিনিও দলত্যাগ করে কংগ্রেসে যোগ দেন। সোমবার চেকন এলাকার ঘটনার দায় প্রাক্তন বিধায়ক হাওকিপের ঘাড়ে চাপিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, হাওকিপ প্ররোচনায় এদিন হিংসা ছড়িয়েছে। তাঁর দেহরক্ষীরা বন্দুক দিয়ে ট্রাইবাল মার্কেটের ব্যবসায়ীদের জোর করে বের করে দেয়। তবে কুকি জনগোষ্ঠীর অভিযোগ, তাঁদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। বিজেপি’র মদতে মদতে ইম্ফল শহরে জনজাতিদের পরিচালিত ট্রাইবাল মার্কেট দখল করতে চাইছে মইতেইরা। একে একে জনজাতিদের সমস্ত কিছু দখল করে নিতে মইতেই সংগঠনগুলিকে মদত দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। কুকি সংগঠনগুলির দাবি, সোমবারে ট্রাইবাল মার্কেটের ঘটনার জন্য প্রাক্তন বিধায়ক হাওকিপ দায়ী নন। তিনি তাঁর ইম্ফলের বাড়িতেই ছিলেন। দেহরক্ষীরাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।

এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট বারবার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং মোটেই সচেষ্ট নন, তা সোমবারের ঘটনায় ফের প্রমাণিত হয়েছে। এখনও রাজ্যে বিচ্ছিন্ন হিংসার ঘটনা ঘটছে। কুকি জনগোষ্ঠীর মানুষ আতঙ্কে মিজোরামে আশ্রয় নেওয়া নিত্যদিনের হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীদের রাজ্যের জনজাতিদের নিরাপত্তা দিতে কার্যত ব্যর্থ। 

Comments :0

Login to leave a comment