Post Editorial

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়: শাসকের চক্ষুশূল কেন?

উত্তর সম্পাদকীয়​

মালিনী ভট্টাচার্য


যারা আমার জন্য এত খাটল, যারা আমাকে নির্বাচনে জিততে সাহায্য করল, তাদের চাকরি দেব না তো কাদের দেব? আলবাৎ দেব। আমার ন্যায্য কোটার চাকরি, কার সাহস আছে তা নিয়ে কথা বলার? ইত্যাদি আরও অনেককিছুই বলছেন রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী। 

না, আশ্চর্য হইনি। তাঁর দল, তাঁর সরকারের যোগ্য প্রতিনিধি হিসাবেই কথাগুলো বলেছেন।

শুধু বহুযুগের ওপার থেকে মনে আসছে আরেক সময়ের কথা। বিগত ষাট-সত্তরের দশকে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন তাঁরা সোচ্চারে এমন কথা বলতেন না, কারণ আজকের ব্রাত্যদের চেয়ে তাঁদের আত্মবিশ্বাস ঢের বেশি ছিল। তাঁরা কখনো মনে করেননি তাঁদের ক্ষমতাচ্যূত করার মতো কোনও প্রতিপক্ষ কোথাও আছে। সদ্য গজানো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষে আমরা তখন স্লোগান দিতাম

‘চালকল তেলকলওয়ালাদের দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো চলবে না’। তাঁরা সবাই কিন্তু চালকল-তেলকলের মালিক ছিলেন না; বরং তাঁদের কোনও পূর্বপুরুষ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে অর্থদান করেছিলেন বলেই তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়টাকে নিজেদের মৌরসীপাট্টা বলে মনে করতেন। সেদিক থেকে তাঁদের হকের ভিত্তিটা হয়তো একটু বেশি জোরদার ছিল আজকের শাহেনশাহদের চাইতে যারা বলে, আমার দপ্তর থেকে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মাইনে দিই বলে এখানে আমার কথাই চলবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সেসময়ে ঠিক সেইভাবেই ক্ষমতাসীনদের নানাবিধ ‘ন্যায্য কোটা’র ভিত্তিতে চলত, যেভাবে আজকের শিক্ষা দপ্তরের অধীশ্বর চাইছেন।


 

ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যাদবপুর সত্যিই একটি মফঃস্বলি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল, গড়িয়াহাটের দিক থেকে আসতে হলে লেভেল ক্রসিং-এ আটকানোর সমূহ সম্ভাবনা ছিল, সুবোধ মল্লিক রোডের দু’পাশে ছিল খোলা ড্রেন, গেটগুলো অনেক ছোট ছিল। পিছনদিকে রেললাইনের ওপারে পড়ে ছিল বিস্তীর্ণ খোলা জমি। তবু তার গর্ব ছিল তার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলি, আর ১৯০৫ সালে স্থাপিত জাতীয় শিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে তার নাড়ির সংযোগ। তখন কলা অনুষদে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের নাম একটু একটু শোনা যাচ্ছে। কলা ও বিজ্ঞানের অন্য বিভাগগুলি তখন নাবালকত্ব পেরোয়নি। 


 

তখন উপাচার্য ড. ত্রিগুণা সেন। তিনি শিক্ষাপ্রেমী ও ছাত্রবৎসল ছিলেন। তাঁর বহুবিস্তৃত প্রভাবে কলা ও বিজ্ঞান বিভাগগুলিতে কিছু দিকপাল শিক্ষক ও শিক্ষাসংগঠকের সমাবেশ ঘটে যা বিভাগগুলির বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। শুনেছি, ছাত্ররা তাঁর কাছে কোনও দাবি নিয়ে ধরনা দিতে গেলে তিনি তাদের সঙ্গে মাঠে বসে আলোচনার মাধ্যমেই তাদের ক্ষোভ মেটাতেন। থাকতেন ক্যাম্পাসেই একটি ছোট বাড়িতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষী ছাড়া কোনও বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল বলে শুনিনি। এটা সত্যি যে পরবর্তী এক দুর্যোগ সঙ্কুল সময়ে আরেক জনপ্রিয় উপাচার্য অধ্যাপক গোপালচন্দ্র সেন ক্যাম্পাসের ভিতর তাঁর বাসস্থানের কাছে খুন হয়েছিলেন। এটা বহিরাগত দুষ্কৃতীদের কাজ ছিল। যারা আজ সেকথা তুলে যাদবপুরের ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করতে চাইছে, আবার নিজেরাই বহিরাগত দুষ্কৃতীদের বিশ্ববিদ্যালয়-প্রাঙ্গণে ঢুকিয়ে দেবার ছক কষছে—  এটা তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই।


 

সে সময়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ জনসমাজকেও নিপুণ চক্রান্তে দ্বিধাবিভক্ত করা গিয়েছিল, কিছু রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে, কিছু ছাত্রকে আন্দোলনের বলি হতে আমরা দেখেছি। আবার এটাও মনে পড়ে যে কলা ও বিজ্ঞান অনুষদের কিছু শিক্ষক ক্লাস ফেলে দৌড়ে চার নম্বর গেটের কাছে ছাত্রদের দুটি যুযুধান পক্ষের মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন, তখনকার মতো তাদের রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামিয়েও দিয়েছেন। সদ্য গড়ে-ওঠা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে প্রবীর রায়চৌধুরি ও রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিভাগে বিভাগে ঘুরে শিক্ষকদের ভয় ও সংশয় দূর করার চেষ্টা করেছেন। আর একটি মজবুত কর্মচারী সমিতি, যাদের তখন প্রশাসনে কোনই অংশীদারি ছিল না, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু যাদের নখদর্পণে ছিল, ক্যাম্পাসে–ঢোকা সিআরপি’র পিটুনি খেয়েও কঠিন সময়ে ধৈর্য বজায় রেখেছে।


 

প্রথম পর্বে যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষে থেকে তা গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিত্বের প্রতাপেই তা করেছিলেন, পরিচালনা ও প্রশাসনে গণতন্ত্রের প্রয়োজন নিয়ে তাঁদের তেমন মাথাব্যথা ছিল না। বিভাগগুলিতে বিভাগীয় প্রধানরাই ছিলেন সর্বেসর্বা। তাঁদের পছন্দ-অপছন্দেই বিভাগের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হত। শিক্ষকদের ক্ষমতা ছিল খুবই সীমিত। যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন তাঁদের কারোরই বেতনক্রমের কোনও বালাই ছিল না। তবু ছাত্র-শিক্ষকদের তৎপরতায় নতুন কিছু জিনিষ ঘটেছে সেসময়ে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই পশ্চিমবঙ্গে প্রথম রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেন। গড়ে উঠছিল খুব সক্রিয় একটি ফিল্ম ক্লাব। পিছনের উন্মুক্ত স্টেডিয়ামে প্রতি শীতে ধ্রুপদী সঙ্গীতের একটি জলসা হতো।


 

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এটা অবধারিত ছিল যে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের রোজকার শরিক তারা স্বাভাবিকভাবেই চাইবেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে সক্রিয় অংশীদারিত্ব আরও বাড়ুক। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতনক্রম এবং তাঁদের অন্যান্য নানা অধিকারের প্রশ্ন নিয়ে সত্তরের দশকে একটি সর্বভারতীয় আন্দোলনও চলছিল। একবার তা নিয়ে লাগাতার শিক্ষক ধর্মঘট হয়। তার শরিক ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও। তার কিছুদিন বাদেই কলা অনুষদের স্নাতক পরীক্ষা শুরু। ক্লাস না নিলেও কিছু কিছু ধর্মঘটী শিক্ষক পড়ুয়াদের ক্ষতির কথা ভেবে জানিয়ে রেখেছিলেন, কারো কিছু জ্ঞাতব্য বিষয় বা আলোচনার বিষয় থাকলে শিক্ষকের বাড়িতে তারা তা নিয়ে যে কোনও সময়ে আসতে পারে। এমনই ছিল শিক্ষক-ছাত্রের নিবিড় সম্পর্ক।


 

বামফ্রন্ট সরকার আসার পরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে নতুন আইন ও স্ট্যাটুটগুলি চালু হলো, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮১ সালে। তার পিছনে অনেকদিনের এই আন্দোলনগুলি ছিল। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাজগতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অভ্যন্তরে এই আইন ও কার্যবিধিগুলি প্রচুর সজীব আলোচনা, তর্কবিতর্কের মধ্য দিয়ে গৃহীত হয়েছিল। রাজ্য সরকার আইনগুলির মধ্য দিয়ে নিয়োগ এবং বেতনক্রমের আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণ করল, অন্যদিকে নিয়োগের পদ্ধতি, ছাত্রভর্তি, বিভাগ পরিচালনা, পাঠক্রম, পঠনপাঠনের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ইত্যাদি সর্ববিষয়ে অধ্যাপকদের সঙ্গে শিক্ষাকর্মী, গবেষক এবং ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর অধিকাংশ দায়িত্ব বর্তালো।


 

বিভাগগুলিতে প্রধান পদটি হলো সময়সীমার অধীন। বোর্ড অব স্টাডিজ-এর এক্তিয়ার বাড়ল। উপাচার্যের পদটি যাবতীয় কর্মকাণ্ডের প্রধানের পদ। নিয়োগের পদ্ধতিতে তাঁর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য একে কেন্দ্র-রাজ্যের খেয়োখেয়ির জায়গা না বানিয়ে সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের বিষয়টিকে ন্যায্য স্থান দেওয়া হলো। সবদিকেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একচ্ছত্র প্রাধান্য কাটিয়ে কিছুটা ভারসাম্যের ব্যবস্থা হলো। প্রশাসনের সর্বস্তরে অভ্যন্তরীণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রাধান্য এরই বার্তা দেয়।


 

অনেক সমস্যা সত্ত্বেও এর পরের সময়ে, বিশেষত নব্বইয়ের দশক ও তার পরের দশকে এই ব্যবস্থার সুফল বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েছে। তিনটি অনুষদেই শিক্ষার মানের প্রভূত উন্নতি হয়, যার প্রতিফলন পড়ে জনমানসে যাদবপুর সম্বন্ধে অনুকূল প্রতিক্রিয়ায়। গবেষণার উৎকর্ষ ক্রমশ অনুভূত হয় বিশেষত উপাচার্য শঙ্কর সেনের আমল থেকে, যখন আন্তঃবিভাগীয় স্কুলগুলি বিকশিত হতে থাকে; গবেষণার স্বীকৃতি আসে মঞ্জুরি কমিশনের ‘বিশেষ সাহায্য প্রকল্পে’ (SAP) দেশের মধ্যে সবচেয়ে

বেশিসংখ্যক বিভাগ অন্তর্ভুক্ত হবার মধ্য দিয়ে। সমাজের সাধারণ মানুষের কাজে লাগার মতো বহু প্রকল্প গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও তার শিক্ষক–গবেষকেরা নানা সম্মানে ভূষিত হন।


 

আমার অভিজ্ঞতা থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির উদ্দেশ্য নয়, অতীতের জন্য বিলাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার বজায় রেখে পরিচালনায় স্বচ্ছতা আনা যায়, সীমিত সামর্থ্যকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষায় উৎকর্ষ আনা সম্ভব এই কথাটাই আমি বলতে চাইছি। নিয়োগ, ছাত্রভর্তি, পরিকাঠামো তৈরির বিষয় ইত্যাদি যদি সর্বজনসম্মত প্রকাশ্য বিধি মেনে করার অভ্যাস তৈরি হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি জনসাধারণের কাছে সরকারি কোষাগারের অর্থ খরচে দায়বদ্ধতা বজায় রাখে, তাহলে বাইরে থেকে কখনো অবাঞ্ছিত রাজনৈতিক চাপ এলেও তার মোকাবিলা করা যায়।


 

আমি একথাই বলতে চাই যে, বিগত চোদ্দ বছর ধরে সরকার পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্কটের কারণ শুধু এই নয় যে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার তাদের আর্থিক দায়িত্ব পালন করছে না। যাদবপুর এবং আরো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের যে ভিত্তি আগের দশকগুলিতে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছিল এবং এরাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার যাকে সর্বদাই যোগ্য মর্যাদা দিয়েছিল, তাকে নয়া শিক্ষানীতির নামে অরাজকতার অঙ্ক কষে এই দুই সরকার সম্পূর্ণ নষ্ট করারই চেষ্টা করেছে। যাদবপুর একটি একক বিশ্ববিদ্যালয়; স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন সেখানে একই জায়গায় হয়, অনেকগুলি সম্পৃক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা ছড়িয়ে নেই।

এর সুবিধা এই যে নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলা অনেক সহজ। 


 

অন্যদিকে তার জীবন্ত হৃৎপিণ্ডটি যেহেতু একই জায়গায় রয়েছে সেখানে একবারে শক্তিশেলের আঘাত করা অনেক সহজ। এরাজ্যে তৃণমূল সরকারের গোড়া থেকেই সেদিকে লক্ষ্য ছিল। পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সংশোধনী আইন দুটিতে (২০১১ ও ২০১২) সব জায়গায় এবং যাদবপুরেও, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা অনেক কমানো হয়েছে শুধু তাই নয়, বস্তুত বিভিন্ন স্তরের কাউন্সিলগুলিতে কোনও নির্বাচনই হয়নি। মনোনীত সদস্যরাই কাজ চালাচ্ছেন। নির্বাচনের জন্য যে স্ট্যাটুট বা বিধি তৈরি হবার কথা তাও এখন পর্যন্ত হয়নি। সরকার একবার নিজেই সেই উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু নেটে প্রকাশিত খসড়া স্ট্যাটুটে স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা এতই প্রকট ছিল যে শিক্ষকেরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে বাধ্য হন। ছাত্র-সংসদ নির্বাচনের দাবি এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে অন্যতম দাবি ছাড়া আর কী?


 

উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারকে ক্ষুণ্ণ করে সংশোধনীর মাধ্যমে পুরোপুরি রাজ্যসরকারের অনুকূলে নিয়ে আসা হয়েছে। ইউজিসি’র সাম্প্রতিক যে প্রস্তাবে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বত্র উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতাদখল করতে চাইছে এবং যার আমরা বিরোধিতা করছি, তার প্রাথমিক আদল এরাজ্যের শাসকদলই তো তৈরি করেছিল। আজ কেন্দ্র-রাজ্যের টানাটানিতে উপাচার্য পদের মর্যাদাই গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। উপাচার্যের আসনটিরও কোনও স্থায়িত্ব নেই। তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ কেন করবেন না? এই নিরাপত্তার অভাবের জন্য কি আন্দোলনরত ছাত্রেরাই দায়ী, না যারা বহিরাগত দুষ্কৃতী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ঢোকে তারা? অন্যদিকে আবার অধ্যাপক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় উপাচার্যের গুরুত্ব এতটা বাড়ানো হয়েছে যাতে বশংবদ উপাচার্যকে দিয়ে শাসক সেই প্রক্রিয়াতেও খুশিমতো হস্তক্ষেপ করতে পারে।


 

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, কুকুরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে তাকে যতো ইচ্ছে বদনাম দাও। উপরে যে কটি কাঠামোগত পরিবর্তনের উদাহরণ দিলাম তার যে কোনও একটি সফল হলেই তা কুকুরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পক্ষে যথেষ্ট। বোধহয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃৎপিণ্ডের সঠিক হদিশটা পাওয়া যায়নি বলে সেটা এখনো করা যায়নি। আমি মনে করি, সেই জীবন্ত হৃৎপিণ্ড রয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসমাজ, তার ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের দীর্ঘদিনের গড়ে তোলা পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে।

আজ সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই তাকে দুর্বৃত্ত শাসকের ক্যাম্পাস-দখলের চেষ্টাকে প্রতিহত করতে হবে। অর্জিত স্বাধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment