Shibu Hazra

শিবুর বিরুদ্ধে আরও ধর্ষণের অভিযোগ

রাজ্য জেলা

একাধিক বার ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সন্দেশখালি -২নং ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি শিবপ্রসাদ হাজরা। বুধবার তার বিরুদ্ধে আরও একটি ধর্ষণের মামলা রুজু হয় সন্দেশখালি থানায়। বুধবার বসিরহাট মহকুমা আদালতে অভিযোগকারিণীর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। এ বার দ্বিতীয় অভিযোগ দায়ের হলো আদালতে। পুলিশ সূত্রে খবর, শিবু সহ মোট ৩ জনের বিরুদ্ধে এই নয়া অভিযোগ দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে শিবপ্রসাদ ওরফে শিবু হাজরার পোলট্রি ফার্মের কেয়ার টেকার ভানু মণ্ডলের নাম রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
জেলিয়াখালির বাসিন্দা শিবপ্রসাদ হাজরাকে গত শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় ন্যাজাট থানা এলাকা থেকে। শিবুর গ্রেপ্তারের পর সন্দেশখালি-২নং ব্লকের দলীয় সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোকে। 
গত ৫জানুয়ারি সাত সকালে রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ইডি’র অভিযানের পর সন্দেশখালির ত্রাস শেখ শাহজাহান বেপাত্তা হয়। তারপর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না শিবপ্রসাদ হাজরার। জমি দুর্নীতি থেকে মহিলাদের উপর নির্যাতন— তৃণমূলের ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিস্তর। জনরোষের চাপে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শনিবার শিবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। রবিবার বসিরহাট থানা থেকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলার সময় শিবুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্থানীয়দের একাংশ। এমনকি থানার সামনে শিবুকে দেখে ‘চোর-চোর’ স্লোগানও ওঠে। 
অন্যদিকে, বুধবারই সন্দেশখালির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহ একাধিক বিষয়ে সন্দেশখালি থানায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন তাঁরা। দু’ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক। পুলিশের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনতেই এই বৈঠক বলে সূত্রের খবর। পাশাপাশি সন্দেশখালির পাঁচটি জায়গায় মোট দশটি সিসিটিভি-র ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, নতুন করে যাতে কোনও রকম অশান্তি না ছড়ায়, তার নজরদারির জন্যই এই বন্দোবস্ত হয়েছে। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, তৃণমূলের বাহিনী যখন রাতে মহিলাদের ডেকে পাঠাতো, জমি দখল করতো তখন ক্যামেরা কেন বসেনি? যখনই সবাই রুখে দাঁড়ালো, তখনই বসছে সিসিটিভি? জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে। এসবের মধ্যেই এবার সরেজমিনে বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সন্দেশখালিতে এলেন ডিজিপি।
সন্দেশখালিতে এখনও অনেক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি বসানো রয়েছে। এদিকে ফুঁসছে সন্দেশখালির আন্দোলনকারী মহিলারা। মুখ্যমন্ত্রী আগেই আন্দোলনকারীদের বহিরাগত, সাজিয়ে নিয়ে আসা তকমা লাগিয়ে দিয়েছেন। যা নিয়ে নতুনপাড়া পাত্র পাড়া মাইতি পাড়া নস্কর পাড়া সহ অন্যান্য গ্রামের মহিলারা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে বলেন আমাদের আধার কার্ড, রেশন কার্ড আছে। ভোটার লিস্টে নাম আছে। আমরা বহিরাগত? মঙ্গলবার একটি বৈদ্যুতিন চ্যানেলে বসে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্যে আগুনে ঘি পড়ার মতো জ্বলে উঠেছেন সন্দেশখালির নির্যাতিতা আন্দোলনকারী মহিলারা। তারা বলেন কুণাল ঘোষ সন্দেশখালির মায়েদের অপমান করেছেন। যারা ধর্ষিতা তারা মুখ দেখালে উনি তাদের দায়িত্ব নেবেন তো? মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কেন আসছেন না সন্দেশখালিতে?
এদিকে, সন্দেশখালিকাণ্ডে যে সব অভিযোগ উঠেছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিক এবং ডিজি রাজীব কুমারকে নোটিস দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রাজ্যের দুই শীর্ষ কর্তার থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব তলব করা হয়েছে। এদিন স্বতঃপ্রণোদিতভাবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে একথা জানানো হয়েছে। এর আগে জাতীয় মহিলা, শিশু ও তফসিলি কমিশনের প্রতিনিধি দল সন্দেশখালি ঘুরে গিয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদলও সন্দেশখালিতে যাবে বলে এদিন জানানো হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment