Tram

ট্রাম বাঁচানোর স্বার্থে রুখে দাঁড়াতে হবে

রাজ্য

নিরাপদ, সস্তা, দূষণহীন ট্রাম পরিবহণকে আরও আধুনিক রূপে বজায় রাখার দাবিতে কলকাতার নাগরিকদের সোচ্চার হতে আবেদন করেছে কলকাতা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন। বুধবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, কলকাতা পুলিশ, কলকাতা কর্পোরেশন এবং রাজ্য পরিবহণ দপ্তর মিলিতভাবে ট্রামকে তুলে দিতে চাইছে। সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই সাংবাদিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে বলেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন আর জমি হাঙরদের হাত থেকে কলকাতার ট্রামকে রক্ষা করতে হলে এখনই রুখে দাঁড়াতে হবে। ট্রামহীন কলকাতা কলকাতাই নয়, আধুনিকীকৃত রূপে ট্রামকে সচল রাখতে হবে। 
রাজ্য সরকার ট্রাম তুলে দিত চাইলেও ট্রাম বাঁচানোর লড়াই এখন আদালতে। কলকাতা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবাশিস ভট্টাচার্য এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, আদালতের নির্দেশে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অগ্রাহ্য করে কলকাতার মেয়র, কলকাতা কর্পোরেশন এবং পরিবহণ দপ্তর ট্রাম তুলে দিয়ে কেবলমাত্র এসপ্ল্যানেড-খিদিরপুর রুটে ‘হেরিটেজ’ হিসাবে ট্রাম রুট বহাল রাখতে চাইছে। এতে কলকাতার সর্বনাশ হবে। এই উদ্যোগের পিছনে বড় ধরনের দুর্নীতি সক্রিয় রয়েছে। 
এই প্রসঙ্গেই সেলিম বলেছেন, ২০১১ সালে কলকাতায় ৪০টি রুটে ট্রাম চালু ছিল। বামফ্রন্ট সরকার নতুন ট্রাম রুট চালু করেছিল, এইচআরবিসি’র টোল ট্যাক্সের টাকায় কলকাতায় ট্রাম রাস্তাকে কংক্রিটে বাঁধাই করেছিল। এখন বিশেষজ্ঞরা কলকাতার দূষণের জন্য সাইক্লিং এবং ট্রাম পরিবহণে জোর দিচ্ছেন, অথচ সরকার খিদিরপুর রুট ছাড়া ট্রাম তুলে দিতে চাইছে। এটা কি শৌখিন পরিবহণের ‘জয় রাইড’ নাকি! বয়স্ক, মহিলা, শিশুদের সুবিধাজনক, দূষণহীন ট্রামকে গণপরিবহণ হিসাবে চালু রাখতে হবে। পুলিশ ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট’র দায়িত্বে, তারা পরিবহণ নীতি তৈরি করার কে? পরিবহণ নীতি তৈরির বিশেষজ্ঞদের কথা শুনতে হবে। আরও আধুনিক, কম ওজনের, কম বিদ্যুৎভোগী, দ্রুতগামী ট্রামের দিকে অগ্রসর হতে হবে। পৃথিবীর বহু শহরে ট্রাম ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আর ট্রামকে বাদ দিলে কলকাতা শহর কলকাতাই থাকে না।  
ট্রাম তুলে দেওয়ার পিছনে দুর্নীতির অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, ট্রামের পুরানো গাড়ি ভেঙে হাওয়া করে দেওয়া হচ্ছে, বন্ধ রুটের ট্রামের তার কোথায় গেল? আর সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হচ্ছে ট্রাম ডিপোর জমি নিয়ে। প্রোমোটারদের স্বার্থে গিলে ফেলার ব্যবস্থা হচ্ছে ট্রামের জমি।
দেবাশিস ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছেন, ট্রামের জমি বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে পাঠিয়ে ট্রামের কী লাভ হচ্ছে? সরকারি কোষাগার ভরানোর জন্য ট্রাম কি দুধেলা গাই?   
ট্রাম লাইনের জন্য যানজট হওয়া, ট্রাম লাইনে মোটর সাইকেলের চাকা পিছলে দুর্ঘটনায় মৃত্যু— ইত্যাদি যা যা বহুল অপপ্রচার রয়েছে, সেগুলো তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে নস্যাৎ করে দিয়েছে কলকাতা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে নগর পরিকল্পনাবিদ ও হাইকোর্ট গঠিত কমিটির সদস্য দীপঙ্কর সিনহা বলেছেন, যানজট বা দুর্ঘটনার অজুহাত দিয়ে ট্রাম তুলে দেওয়া হাস্যকর। বাগানে গোরু ঢোকার সমস্যা হলে গোরু আটকাবো নাকি বাগানের গাছ কেটে সাফ করে দেব? একটা মেট্রোপলিটন শহরে অনেক ধরনের যান চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হয়। দ্রুতগামী বিমান আছে বলে বাকি গাড়ি তুলে দেওয়া যায় না, এমনকি দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন আছে বলে লোকাল ট্রেনকে অপ্রয়োজনীয় বলা যায় না। তেমনি মেট্রো রেল হয়েছে বলে ট্রাম তুলে দেওয়ার যুক্তিও ধোপে টেকে না। 
ট্রামের জমি বিক্রিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, একটা ঘনবসতিপূর্ণ শহরে যে পরিমাণ ফাঁকা জমি থাকা দরকার তার সামান্যও কলকাতায় নেই। বাস ট্যাক্সির স্ট্যান্ড নেই, সারি দিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। আজ ট্রামের জমি বেচে দিলে ভবিষ্যতে আর সেগুলো পাওয়া যাবে? কলকাতা কি আর বাসযোগ্য থাকবে? 
সুইচ অন ফাউন্ডেশন’র পক্ষে পরিবেশ কর্মী অজয় মিত্তলও ট্রামকে সচল রাখার দাবি করেছেন। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষও কলকাতায় ট্রাম চালু রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। তবে এই বিষয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ওপরে আস্থা প্রকাশ করে তাঁকেই আবেদন করেছেন ট্রামকে রক্ষার জন্য।

Comments :0

Login to leave a comment