Jyotipriya Mallick

অবস্থার উন্নতি, মেয়েকে ইডি-র কাছে পাঠালেন বালু

রাজ্য


রবিবার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালের সিসিইউ থেকে ৩৭৪ নম্বর কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ৩টেয় বৈঠকে বসবে জ্যোতিপ্রিয়র চিকিৎসা সম্পর্কিত মেডিক্যাল বোর্ড। তাকে হাসপাতালে রাখার আর প্রয়োজন আছে কিনা, তা বোঝা যাবে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তের পর। 
সরকারের বনমন্ত্রীর চিকিৎসা সহ অন্যান্য বিষয়ে খবর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পার্থ চ্যাটার্জি গ্রেপ্তার হওয়ার দিনই তাকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জি। পরে মন্ত্রীসভা থেকে পার্থকে সরিয়ে দেন মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু স্নেহের ‘বালু’র ক্ষেত্রে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। গ্রেপ্তারের আগেই জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালুর পাশে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘বালু মারা গেলে ইডি’র বিরুদ্ধে এফআইআর করা যেতে পারে।’’ বার্তা সেখানেই স্পষ্ট ছিল। আগামী ৯ নভেম্বর রাজ্য মন্ত্রীসভার পরবর্তী বৈঠক। তার আগে জ্যোতিপ্রিয়র বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তের গতিপ্রকৃতি কিছুটা বোঝা যাবে বলেই মমতা ব্যানার্জি তাই তার আগে বালুর বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত তিনি নেবেন না বলেই তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে। তবে এই সময়েই একসময়ে বিজেপি-তে চলে গিয়ে ফের তৃণমূলে ফিরে আসা রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রীকে সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে তৃণমূলের একটি অংশ। কারণ, হাওড়ার ওই নেতা একসময় বনমন্ত্রী ছিলেন। ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি তৃণমূলের দায়িত্বে ছিলেন।
রবিবার সকালে মন্ত্রী চিকিৎসকদের জানান, তিনি বাঁ হাতে জোর পাচ্ছেন না। এরপর তাঁর এমআরআই করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চেস্ট থেরাপিও করা হয়। উদ্বেগ কমানোর জন্য শনিবার রাতে জ্যোতিপ্রিয়কে ঘুমের ওষুধও দেওয়া হয়েছিল বলে ইডি জানতে পেরেছে। এদিন ইডি’র এক প্রতিনিধিদল হাসপাতালে গিয়ে ধৃত মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার রিপোর্ট নেন। সোমবার আদালতে তা ইডিকে জানাতে হবে। 
রবিবার সকালে ধৃত জ্যোতিপ্রিয়র মেয়ে প্রিয়দর্শিনী মল্লিক গিয়েছিলেন সিজিও কমপ্লেক্সে। ছিলেন সামান্য কিছুক্ষণ। কেন এসেছেন, এই প্রশ্নে বিরক্ত বালু-কন্যা সাংবাদিকদের বুম ঠেলে সরিয়ে বলে উঠেছেন,‘‘রাস্তা আটকে আছেন কেন? যেতে দিন।’’ ইডি সূত্রে জানা গেছে তাঁর বাবার চিকিৎসা এবং পারিবারিক আয় সংক্রান্ত কিছু তথ্য ইডি’র হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। গাড়িতে উঠে চলে গেছেন তিনি। তবে জ্যোতিপ্রিয়র অনুমোদন নিয়েই প্রিয়দর্শিনী গিয়েছিলেন সিজিও কমপ্লেক্সে।
গত ২৭ অক্টোবর ভোরে ইডি জ্যোতিপ্রিয়কে গ্রেপ্তার করে। সেদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তাঁকে তোলা হয়। আদালত তাঁর ইডি হেপাজতের নির্দেশ দেয়। শুনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বস্ত ‘বালু’। তাঁকে বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ইতিমধ্যে তদন্তকারীরা ২৫টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করেছে। তাতে রেশন দুর্নীতি মামলা সংক্রান্ত একাধিক তথ্য আছে বলে তদন্তকারীরা নিশ্চিত। শনিবার জ্যোতিপ্রিয়র বর্তমান আপ্ত সহায়ক অমিত দে এবং প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক অভিজিৎ দাসকে জেরা করেছিলেন গোয়েন্দারা। জেরার সময় তাঁদের মোবাইল ফোন খোলা হয়েছিল। তা ছাড়াও আরও অনেকগুলি মোবাইল ফোন তল্লাশির সময় ইডি পেয়েছে। এর আগেও নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধৃত মানিক ভট্টাচার্য় এবং সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের ক্ষেত্রে মোবাইল থেকে মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধার করেছিলেন গোয়েন্দারা। রেশন-দুর্নীতির তদন্তে উদ্ধার ফোনগুলি ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হবে বলে সোমবার ইডি সূত্রে জানা গেছে।
আর এদিনই দীঘায় তিনটি চালু হোটেল, আরও দুটি নির্মীয়মাণ হোটেলের সঙ্গে বাকিবুর রহমানের সম্পর্ক পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট। রবিবার ইডির তদন্তকারীরা পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা, তাজপুর এলাকায় কিছু জায়গায় তদন্ত করেছেন। 
ইডি-’র এক অফিসারের কথায়,‘‘উত্তর ২৪ পরগনার তিনজন একটি সমবায় তৈরি করে এই পাঁচটি হোটেল খোলার উদ্যোগ নেয়। নিউ দীঘার এই হোটেলগুলিতে বাকিবুর একাধিকবার এসেছে বলে আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জেরার সুযোগ পেলে আমরা এই হোটেলগুলির সম্পর্কে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারি।’’ এই বিষয়ে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী, পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা অখিল গিরির প্রতিক্রিয়া হলো,‘‘কে কোথায় হোটেল করেছে, কার কার যোগাযোগ তার সঙ্গে তা আমি জানি না। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’’ হোটেল মালিকদের সংগঠনও এই বিষয়ে এদিন কোনও কথা বলতে চায়নি।
যদিও তৃণমূলের ওই জেলারই এক নেতার কথায়,‘‘বালুদার দীঘাতে হোটেল আছে, এমনটি আমরা শুনেছি। ‘হোটেল আমার দীঘা’, ‘মেঘবালিকা’, ‘বিচ ভিউ’ নামের এইসব হোটেলগুলি যারা চালায়, তারা বালুদারই লোক, তাঁর জেলারই লোক, তাও আমরা শুনেছি।’’ ইডি সূত্রে জানা গেছে, ওই হোটেল সংশ্লিষ্ট সংস্থার ৩জন কর্মীকে আটক করা হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment