Recruitment scam

এবার পৌরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই

রাজ্য

রাজ্যের পৌরসভাগুলির নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত করতে পারবে সিবিআই। শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এই নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে সিবিআই এফআইআর দায়ের করে এই তদন্তের কাজ শুরু করতে পারবে। সাত দিনের মধ্যে এই রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। এর ফলে রাজ্যের যে ৯০টি পৌরসভায় কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির প্রাথমিক অভিযোগ উঠেছে, সেগুলির তদন্ত করার দায়িত্ব পেল সিবিআই। 
রাজ্যের স্কুলগুলিতে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত করতে গিয়ে অনেক আগেই পৌরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির তথ্য ইডি এবং সিবিআই’র হাতে এসেছে। টাকা নিয়ে পৌরসভায় কর্মী নিয়োগের সংবাদ প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছিলেন, ‘‘আমার কানে পৌরসভার কর্মী নিয়োগের দুর্নীতির কথা এসেছে, এব্যাপারে পৌর দপ্তরকে অনুসন্ধান করতে বলেছি। দুর্নীতি হলে তা বরদাস্ত করা হবে না।’’ তারপর থেকেই ফিরহাদ হাকিম এনিয়ে আর এক পা এগনোর সাহস দেখাতে পারেননি। তৃণমূলের মধ্য থেকেই ফিরহাদকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছিল।  
শুক্রবার ইডি’র পক্ষ থেকে কলকাতা হাইকোর্টে পৌর দুর্নীতির যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে, তার কপি আগেই সরকারি আইনজীবী বা গভর্নমেন্ট প্লিডারের কাছে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু খুবই বিস্ময়ের বিষ‌য়, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায় এদিন সরকারি আইনজীবী এজলাসে হাজির হননি। ফিরহাদ হাকিমের দপ্তরের মামলা, অথচ সরকারি আইনজীবী আদালতে অনুপস্থিত। এই নিয়েও আদালতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। রাজ্যে ৯০টি পৌরসভায় কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা পড়েছে। ইডি’র জমা দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্মী নিয়োগে পৌরসভাতেও ব্যাপক অনিয়মের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত পৌরসভায় কর্মী নিয়োগে ১০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের হিসাব পাওয়া গিয়েছে। এই টাকার অঙ্ক অনেক অনেক বাড়বে। 
ইতিমধ্যে স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার হয়েছে অয়ন শীল। ইডি অয়ন শীলের সল্টলেকের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে আদালতকে জানিয়েছিল, ‘‘আমরা সোনার খনিতে প্রবেশ করেছি। এখান থেকে অনেক কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হবে।’’ পৌরসভার কর্মী নিয়োগে অস্বচ্ছতা রয়েছে ও বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে কর্মী নিয়োগ হয়েছে, এসব তথ্য আগেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে এসেছিল। কিন্তু অয়ন শীলের ফ্ল্যাটে তল্লাশির পরই ইডি আদালতের শরণাপন্ন হয়ে পৌরকর্মী নিয়োগে দুর্নীতির রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর নির্দেশে বলেছেন, পৌরকর্মী নিয়োগে যে আর্থিক লেনদেন হয়েছে, তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সিবিআই এই তদন্ত করতে পারবে। নতুন করে এই দুর্নীতি নিয়ে এফআইআর দায়ের করা যাবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশে আরও বলেছেন, এই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই আধিকারিকদের সর্বতো সাহায্য করবেন রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং রাজ্যের মুখ্য সচিব। 
এদিন পৌরকর্মী নিয়োগে দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্ব সিবিআই’র হাতে দেওয়ার সময় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মন্তব্য করেন, এক জন সাধারণ মানুষ ১০ হাজার টাকা রোজগার করার জন্য প্রাণান্তকর পরিশ্রম করছেন। আর অর্পিতা মুখার্জির মতো মানুষের কাছে এত টাকা। দু’টো-একটা ব্যবসা থাকলে এত টাকা রোজগার করা যায়। এক ধরনের নেতাদের স্পর্শ করলেই কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এই দুর্নীতির বৃত্ত রাজ্য ছড়িয়ে রয়েছে। একদিকে মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছেন, অন্যদিকে কোটি কোটি টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। মানুষকে নিয়েই এই দেশ। মানুষকে সুরক্ষা দিতে হবে। 
স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতির বহু মামলার শুনানি কলকাতা হাইকোর্টে চলছে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সৌমেন নন্দীর দায়ের করা মামলায় শুক্রবার পৌরকর্মী নিয়োগ অন্তর্ভুক্ত হলো। বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে ধৃত অয়ন শীলের কাছ থেকে ইডি যে তথ্য পেয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যে প্রায় প্রতিটি জেলায় পৌরকর্মী নিয়োগে টাকা লেনদেন হয়েছে। 
এদিন মামলাকারীর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম বলেন, রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের নেতা-নেত্রীরা টাকার বিনিময়ে নিয়োগে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। শুধু স্কুল বা পৌরসভা নয়, সমস্ত ক্ষেত্রেই নিয়োগে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকা নেওয়া এখন দস্তুর হয়ে গিয়েছে। এই দুর্নীতির সঙ্গে নেতা-মন্ত্রীরাও জড়িয়ে রয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সবাইকেই যে চাকরি দেওয়া হয়েছে, তা নয়। অনেকের কাছ থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা নেওয়া হলেও তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়নি। এমন বহু তথ্য হাতে এসেছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বান্ধবী অর্পিতার বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার হয়েছে। তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের পরিবারও জেলে রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির তদন্তে কিছুটা গতি এসেছে। ফলে গ্রেপ্তার হয়েছেন তৃণমূল নেতা তাপস মণ্ডল, কুন্তল ঘোষ, অয়ন শীল, জীবনকৃষ্ণ সাহা সহ আরও অনেকে। এই অয়ন শীল এবং কুন্তল ঘোষের কাছে কোটি কোটি টাকার হদিশ পাওয়া গিয়েছে। এবার নতুন করে তদন্তের সামনে আসছে রাজ্যের পৌর দপ্তর।

Comments :0

Login to leave a comment