এলাকাবাসীর দাবি, স্কুলের সামনে বেসরকারি সিকিউরিটি গার্ড বসানো হয়েছে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এই জমি এক প্রমোটারকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলবাড়ি ভেঙে শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স তৈরি হবে।
তৃণমূলের স্থানীয় কর্মীদের বক্তব্য, পুরনো স্কুলের জায়গায় ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল তৈরি করা হবে। বালীগঞ্জের বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয় এর উদ্যোগ নিয়েছেন।
কিন্তু কোনও নোটিশ ছাড়া কিভাবে সেটা সম্ভব? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।
পার্কসার্কাস এলাকার লিন্টন স্ট্রিট। এলাকা জুড়ে নিম্নবিত্ত মানুষের বসতি। তাঁদের সন্তানদের লেখাপড়া শেখার এক বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান ছিল বেনিয়াপুকুর বিদ্যাপীঠ।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল স্থানীয়রা মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না। চাপা ভয়ের পরিবেশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জনের থেকে পাওয়া টুকরো টুকরো কথার নির্যাস, ২০১১ সালের পর থেকে স্কুলকে শুকিয়ে মারার চক্রান্ত শুরু হয়েছে। স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হয়না। ধাপে ধাপে পড়ুয়া কমানো হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে সরাসরি প্রমোটারের হাতে স্কুল তুলে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের প্রশ্ন, স্কুলকে যদি ভেঙে নতুন করে তৈরি করা হয়, তাহলে তার নোটিশ কোথায়? এখনও বেশ কিছু প্রাথমিক পড়ুয়া এই স্কুলে পড়ে। তাদের অন্য স্কুলে পাঠানোর হল না কেন? নতুন করে ভবন কতদিনে তৈরি হবে?
এই ঘটনায় কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র পারিষদ সদস্য আমিরুদ্দিন ববি এবং বাবুল সুপ্রিয়’র দিকেই ইঙ্গিত করছেন স্থানীয়রা।
৬০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন সিপিআই(এম) কাউন্সিলর মনজার এহসানের ভূমিকা রয়েছে স্কুলবাড়ি ভাঙার ঘটনাকে জনসমক্ষে তুলে ধরার ক্ষেত্রে। তিনি বলছেন, ‘‘বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে এমএলএ-এমপি ফান্ডের টাকায় দেবেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, মিলি আল আমিন মিশন, করায়া স্কুল, পার্ক সার্কাস স্কুলের মত স্থানীয় স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হয়েছে। এখন শাসকদলের মদতে স্কুল ভাঙা হচ্ছে। আমরা কোন রাজত্বে বাস করছি?’’
বেনিয়াপুকুর বিদ্যাপীঠের কয়েকটি ঘর নিয়ে এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের জন্য ইয়ং হোপফুল স্কুল নামে একটি অবৈতনিক বিদ্যালয় চালায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সেই পাঠশালায় একশো’র কাছাকাছি পড়ুয়া লেখাপড়া করে। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, রাতের অন্ধকারে বুলডোজার এনে স্কুল গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে উঠে যাওয়ার জন্য। আমরা উঠে গেলে এই বাচ্চাদের কি হবে?
ইয়ং হোপফুল স্কুলের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবার থেকে তাঁদের স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে গিয়েছে। ছুটির পরে ফের পাঠশালা খোলা যাবে কিনা, সেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে তাঁদের মধ্যে।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘স্কুল টিকিয়ে রেখে স্কুলের উন্নয়ন করা সরকারের দায়িত্ব। ছবিতে দেখলাম স্কুল বিল্ডিং ভেঙে মাঠ করে দেওয়া হয়েছে। আমি নিশ্চিত, কোনও প্রমোটার এর পিছনে রয়েছে। তৃণমূল সরকারের আমলে আগেও এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। আমরা মামলা করে স্কুল বাঁচিয়েছি। প্রমোটাররা বাধ্য হয়েছে স্কুল চালু রাখতে। বর্তমানে শিক্ষা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এখানে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল তৈরির নামে বেসরকারি স্কুল তৈরি হবে কিনা, সেই বিষয়েও নজর রাখতে হবে।’’
এই প্রসঙ্গে বেনিয়াপুকুর বিদ্যাপীঠের টিচার ইনচার্জ বলাই মহেশের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
Comments :0