অনির্বাণ দে: বহরমপুর
শ্রমজীবী মানুষের উপর আক্রমণে মোদী আর মমতা এক। পশ্চিমবঙ্গে কাজ নেই। তাই শ্রমিকরা এতো সংখ্যায় অন্য রাজ্যে যাচ্ছেন। যে শ্রমিকরা দেশ গড়তে ভিনরাজ্যে কাজ করছেন তাঁদের বাংলাদেশি বলা হচ্ছে। এই কাজ করছে বিজেপি। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কী করছেন? মোদী আর মমতা খেটেখাওয়া মানুষের জন্য নয়। এঁদের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে হবে।
শুক্রবার বহরমপুরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির একাদশতম রাজ্য সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে এই কথা বললেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এ আর সিন্ধু।
এদিন বহরমপুর এলআইসি অফিসের উল্টোদিকে সমাবেশে সিন্ধু বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ন্যূনতম মজুরি কতো? জবাব দিতে হবে মমতাকে। অন্যদিকে কেরালায় লাল ঝান্ডার সরকার সম্মানজনক ন্যূনতম মজুরি লাগু করেছে। এরাজ্যে কেন মজুরি এত কম? রাজ্যের অঙ্গনওয়াড়ি, মিড ডে মিল, আশাকর্মীদের কত টাকা দেন মমতা ব্যানার্জি? এর জবাব দিতে হবে।
সমাবেশে অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন অফ অঙ্গনওয়াড়ি ওয়ার্কার্স অ্যান্ড হেল্পার্স’র সভানেত্রী উষা রানি বলেন, দেশের মা ও শিশুদের জন্য আইসিডিএস ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে সরকারের সঙ্গে পাড়ায় পাড়ায় কাজ করেছেন আইসিডিএস কর্মীরা। কিন্তু তৃণমূলের সরকার আর বিজেপি সরকার আইসিডিএস কর্মীদের বিরুদ্ধে, প্রকল্প কর্মীদের বিপক্ষে কাজ করছে। এই দুই সরকার রুটি রুজি দিতে পারছে না। এই সরকার বদলাতে হবে।
তিনি বলেন, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র বাঁচাতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে আইসিডিএস কর্মীদের মোবাইলের জন্য বরাদ্দ টাকা লুট করেছে সরকার। অন্যদিকে অ্যাপের নামে শিশুদের ভোজনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেন্দ্র, রাজ্য দুই সরকার এই কাজ করছে। যে সরকার বলছে আধার আবশ্যক নয়। সেই সরকার রেশন দেওয়ার জন্য, শিশুদের খাবার দেওয়ার জন্য মোবাইল ফোন কিনতে বলছে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই হবে। রাস্তার লড়াইও হবে।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আইসিডিএস কর্মী সমিতির রাজ্য সম্পাদক শিলা মন্ডল, কার্যকরী সভানেত্রী ইন্দ্রানী মুখার্জি, সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা প্রমুখ। ছিলেন মহিলা সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক সেখ হাসিনা, শ্রমজীবি মহিলা আন্দোলনের নেত্রী কৃষ্ণা চ্যাটার্জি, সাবিনা ইয়াসমিন প্রমুখ।
সিন্ধু বলেন, কেন্দ্রের সরকার প্রচার করছে যে শ্রম কোডে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা আসবে। এটা প্রতারণা। বরঞ্চ মোদী ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। মমতা ব্যানার্জিও একই কাজ করছে। এই দুইয়ের বিরুদ্ধেই লড়াই। এসআইআর’র মাধ্যমে দেশের গরিব মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। একে রুখতে হবে।
সমাবেশ থেকে দাবি উঠেছে অঙ্গনওয়ারী কর্মী, সহায়িকাদের সরকারি কর্মচারীর স্বীকৃতি দিতে হবে। ন্যূনতম মজুরি, গ্রাচুইটি, পেনশন দিতে হবে। প্রতিটি সেন্টারের পরিকাঠামো দিতে হবে।
নেতৃত্ব বলেছেন, আইসিডিএস কর্মীদের উপর কেন্দ্র ও রাজ্যের বঞ্চনা চরম যায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। নিয়মিত মজুরি পাওয়া যাচ্ছে না। ডিম, সবজির দামের সঙ্গে বাজারের দামের সামঞ্জস্য নেই। পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মা ও শিশুরা। ফোনে রিচার্জের টাকা দেওয়া হচ্ছে না। পোষণ অ্যাপের মাধ্যমে আইসিডিএস কর্মীদের শোষণ করা হচ্ছে।
সম্মেলন উপলক্ষ্যে কমরেড নিলীমা মৈত্র, মহারানী কোনার, টগর দে নগর হিসেবে বহরমপুরের নামকরণ হয়। এদিন বহরমপুরে ঋত্বিক সদনে কমরেড চন্দ্রিমা সাহা মঞ্চে সম্মেলন উদ্বোধন করেন এআর সিন্ধু। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেছেন শীলা মন্ডল। শুরু হয়েছে প্রতিনিধিদের আলোচনা। সম্মেলনে রাজ্যের ২৯৪ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। আইসিডিএস কর্মীদের অধিকার অর্জনে টানা লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা উঠে আসছে আলোচনায়।
Comments :0