Demonetisation RBI Objections

নোট বাতিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তি সুপ্রিম কোর্টে গোপন করেছে কেন্দ্র

জাতীয়

Demonetisation RBI Objections

সুপ্রিম কোর্টে নোট বাতিলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রবল আপত্তির কথা বেমালুম গোপন করে গেছে মোদী সরকার। চলতি ডিসেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে নোট বাতিলের সরকারি প্রক্রিয়া গ্রহণ নিয়ে যে হলফনামা সহ নথি পেশ করেছে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাতে জানানো হয়নি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নোট বাতিলে আপত্তির প্রসঙ্গ। তার প্রয়োজনীয় নথিও কোর্টে পেশ করা হয়নি। তা গোপন করে গেছে কেন্দ্র। উল্লেখ্য, মোদী সন্ধ্যায় নোট বাতিল ঘোষণার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বোর্ড সেই সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। সেই সিদ্ধান্তের নথি কোথায়? গোপন করতে সুপ্রিম কোর্টকেও কি তা আড়াল করা হচ্ছে? 


সুপ্রিম কোর্টে নোট বাতিল মামলার রায় ঘোষণার আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও মোদী সরকারের এই তথ্য গোপনের প্রসঙ্গ আর বড় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নোট বাতিল নিয়ে কোর্টের শুনানি নিয়ে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে জাতীয় দৈনিক ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’। প্রসঙ্গত আগামী ২ জানুয়ারি নোট বাতিল নিয়ে রায় প্রকাশ করতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তার আগেই নোট বাতিলে মোদীর একতরফা সিদ্ধান্তের যে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা তা আরও স্পষ্ট হয়েছে এই তথ্য ফাঁস হওয়াতে। সংবাদে প্রকাশ, কোর্টে পেশ করা হলফনামাতে দেখা যায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো প্রতিষ্ঠানের নোট বাতিল সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তিকে গুরুত্ব দেয়নি কেন্দ্র। এমনকি কোর্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তির নথিকে গোপন করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় আচমকা ৫০০ এবং ১ হাজার টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন মোদী। তাঁর দাবি ছিল, সকলের মতামত বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত। তা ভিত্তিহীন প্রমাণ হয়েছে নথি গোপনে। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেনিয়ম হয়েছে বলে ৫৬টি আবেদনের ভিত্তিতে এই মামলা দায়ের হয়েছে। তার শুনানি শেষ হয়েছে।


নোট বাতিলের পর ছয় বছর পেরিয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন মামলা ঝুলেই ছিল আদালতে। সম্প্রতি তার শুনানি শেষ  হয়েছে। নোট বাতিলের ক্ষেত্রে সরকারি যে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাতে বেনিয়ম হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতামত গ্রহণ করা হয়নি। বিরোধীদের মূল অভিযোগ ছিল এতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতামত গ্রহণ করেনি মোদী সরকার। সুপ্রিম কোর্ট পেশ করা কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পেশ করা নথিতে দেখা যাচ্ছে তাতে যে আপত্তির বিষয় সামনে এসেছিল তা বাদ দেওয়া হয়েছে। নথিতে তা উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে  প্রকাশ ২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদী নোট বাতিল ঘোষণা করার ঠিক আগে বেলা ৫.৩০ মিনিটে  রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের বৈঠক হয়। আড়াই ঘণ্টা বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্তে মোদী সরকার যে যে কারণে নোট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় তা অপ্রয়োজনীয় বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়। 

 

বোর্ড তার বৈঠকে তথ্য পরিসংখ্যান সহ মোদীর নোট বাতিলের যুক্তি খারিজ করে দেয়। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রের যৌথ হলফনামায় নোট বাতিলের যুক্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, জাল টাকা উদ্ধারে তারা এই নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বোর্ড জাল টাকা উদ্ধারে এই সিদ্ধান্ত জরুরি নয় বলে জানায়। বোর্ডের মত দেশে ১৭ লক্ষ কোটি টাকার যে লেনদেন চলে তাতে জাল টাকার পরিমাণ এতটাই কম যে তার জন্য নোট বাতিলের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দরকার পড়ে না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বোর্ডের আপত্তি সুপ্রিম কোর্টে হলফনামায় কেন্দ্র এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কেউ জানায়নি, উল্লেখ পর্যন্ত করেনি।

 


এদিকে কালো টাকা সব ৫০০ এবং ১০০০ টাকার মতো বড় নোটেই মজুত থাকে। নোট বাতিলের পক্ষে এই প্রচার চালিয়েছিলেন মোদী। এই প্রচার ভিত্তিহীন বলেই জানিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বোর্ড। নির্দিষ্টভাবেই বোর্ড এই যুক্তিতে আপত্তি জানিয়ে বলে, যারা কালো টাকা মজুত রাখে তারা নগদ টাকা মজুত রাখে না। তারা সেই টাকায় বেনামে সোনা গয়না জমি বাড়ি সহ নানা সম্পদ কিনে মজুত রাখে। তাই বড় নোট বাতিলে নগদ কালো টাকা ধরা কোনোভাবে সম্ভব নয় বলে বোর্ড তার আপত্তি জানায়। কোর্টে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের এই আপত্তির কথাও হলফনামায় জানায়নি।

 


অর্থনীতিতে নগদ লেনদেন বেড়ে চলায় দুর্নীতি বেড়ে চলার সম্ভাবনা থাকে বলে তা নিয়ন্ত্রণে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত বলে প্রচারে জানিয়ে এসেছেন মোদী। তিনি বলেছেন, ২০১১-১২ সাল থেকে ২০১৫-১৬ সাল দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির (জিডিপি) সঙ্গে লেনদেনের অনুপাত ১১ শতাংশের থেকে বেশি  হয়েছে। আমেরিকায় যেখানে এই অনুপাত মাত্র ৭.৭৪ শতাংশ। নোট বাতিলে জিডিপি লেনদেনে অনুপাতের বৃদ্ধি বেড়ে চলা অন্যতম কারণ বলে জানানো হলেও দেখা গিয়েছে নোট বাতিলের পরে সেই অনুপাত আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এনিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা কেন্দ্রের তরফে কোনও যুক্তি কোর্টে রাখা হয়নি। প্রসঙ্গত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট অনুসারে ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ সালে এই অনুপাতের ছিল যথাক্রমে ১২ শতাংশ ও ১৪.৪ শতাংশ। 

 

ডিসেম্বরে পেশ করা হলফনামায় কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ২০১৬ সালে জিডিপি এবং লেনদেনে অনুপাতের হিসাব দেখিয়ে নোট বাতিলে যৌক্তিকতা বোঝালেও নোট বাতিলের ছয় বছর পরেও বর্তমানে সেই অনুপাত আরও বেড়ে চলার কারণ কী তার ব্যাখ্যা করা হয়নি।

Comments :0

Login to leave a comment