Haryana Election

হরিয়ানা কি খরচার খাতায়

সম্পাদকীয় বিভাগ

 শেষ পর্যন্ত কি হরিয়ানায় জেতার আশা ত্যাগ করেছে বিজেপি? শেষ লগ্নে এসে প্রচারের যা হালচাল এবং শীর্ষ নেতৃত্বের যে গাছাড়া ভাব তাতে দলের কর্মীরাই রীতিমতো সন্দিহান। ২০১৪ সাল থেকে টানা দশ বছর হরিয়ানায় বিজেপি ক্ষমতায়। এই দশ বছরে রাজ্য রাজনীতিতে এবং মানুষের চিন্তা চেতনায় ভোল বদলের চেষ্টায় কোনও ঘাটতি রাখেনি। গোরক্ষার নামে গেরুয়া গুন্ডাগিরি কম হয়নি। ধারাবাহিকভাবে চালানো হয়েছে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির প্রয়াস। উত্তর ভারতের গোবলয়ের এই রাজ্যটিতে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ও বিভাজন পাকাপোক্ত করে রাজনীতিতে তার স্থায়ী প্রতিফলনের চেষ্টা হয়েছিল। নানাভাবে ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছিল ধর্মগুরুদের। কিন্তু তাতে যে চিঁড়ে বিশেষ ভেজেনি এবারের নির্বাচনী প্রচারে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে।
যে সিলেবাসকে সামনে রেখে বিজেপি তাদের স্থায়ী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠার ছক কষেছিল তাতে সাময়িক উন্মাদনা সৃষ্টি হলেও এবং আপাতদৃষ্টিতে হিন্দুত্ববাদের জয়ডঙ্কা বাজলেও তা স্থায়ী কোনও ছাপ ফেলতে পারেনি। উলটে এই ভোটের আবহে মানুষের কাছে ভয়াবহ বেকারি, কৃষি ও কৃষকের সঙ্কট, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, অগ্নিবীর প্রকল্প নিয়ে ক্ষোভ, দেশের জন্য পদকজয়ী কুস্তিগিরদের যৌন লাঞ্ছনা ইত্যাদিই প্রধান সিলেবাস হয়ে উঠেছে। দশ বছরের গেরুয়া শাসন হরিয়ানাকে অন্যতম সর্বোচ্চ বেকারির হারের রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে। হরিয়ানার ছেলে মেয়েরাই বিশ্ব ক্রীড়া মঞ্চে কুস্তি, বক্সি, শ্যুটিং ইত্যাদিতে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করে থাকে। সেই কৃতী মহিলারা যখন দিনের পর দিন বিজেপি সাংসদের যৌন লাঞ্ছনার শিকার হয় তখন দল ও সরকার নীরবতা পালন করে। মোদী সরকারের তিন কুখ্যাত কৃষকবিরোধী আইনের বিরুদ্ধে যখন ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন চলে তখন তার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান চালায় ডাবল ইঞ্জিনের সরকার। আজও কৃষকরা অনির্দিষ্টকালে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছে শম্ভু সীমান্তে। সেনাবাহিনীতে হরিয়ানার যুবকরা সর্বাধিক হারে যোগ দেয়। এটাই হরিয়ানার যুবকদের কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। মোদী সরকার অগ্নিবীর প্রকল্প চালু করে তাদের সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। কর্মহীনতায় জর্জরিত হরিয়ানার মানুষ কাজের জন্য বেআইনি পথে পাড়ি দেয় বিভিন্ন দেশে। যুদ্ধরত রাশিয়া ও ইজরায়েলেও গেছে সর্বাধিক হরিয়ানার মানুষ।
স্বাভাবিকভাবেই ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে মানুষকে অন্ধ বিজেপি সমর্থক করার চেষ্টা হলেও মানুষ জীবন-জীবিকার অনিশ্চতা ও দুঃসহ যন্ত্রণাকে আশ্রয় করে ক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে। তাই ভোটমুখী হরিয়ানায় শাসকের বিরুদ্ধে প্রবল ক্ষোভ কান পাতলেই শোনা যায়। এই প্রবল ভাটার টানকে জোয়ারে পরিণত করতে প্রথম দিকে কিছুটা উদ্যোগ নেওয়া হ‍‌লেও হাল ছেড়ে দেবার ইঙ্গিত মিলেছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী যার ভাবমূর্তিকে কাজে লাগিয়ে সব নির্বাচনে বিজেপি জিততে চায়, সেই নরেন্দ্র মোদীই প্রচারে নিরুৎসাহী। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে প্রচারে যথাক্রমে ১০ বার ও ৭ বার মোদী প্রচারে গেলেও এবার মাত্র চার বার গেছেন। তাছাড়া প্রচারে শেষ দু’দিন মোদী-শাহ দু’জনেই গরহাজির।
গত লোকসভা ভোটেই মোদী টের পেয়ে গেছেন তাঁর বহুল প্রচারিত ভাবমূর্তি অকেজো হয়ে গেছে। হরিয়ানার সেটা কোনও কাজে আসবে না। তাই প্রচারে ডাবল ইঞ্জিনের দশ বছরের সাফল্যের কথা বলার সাহস পাননি। বদলে লাগাতার কংগ্রেসকে গাল পেড়েছেন। এমনকি কংগ্রেসকে সাম্প্রদায়িক বলতেও তাঁর মুখে আটকায়নি। সম্ভবত এটাই চালুনির সুচের ছিদ্র খোঁজার উদাহরণ।
 

Comments :0

Login to leave a comment