সূর্য মিশ্র
লেনিনের মৃত্যুর পর মার্কসবাদের বিকাশে কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক লেনিনের অবদানগুলিকে স্মরণ করেই মার্কসবাদ লেনিনবাদকে কমিউনিস্ট মতবাদ হিসাবে গ্রহণ করে। কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের ব্যাখ্যা ছিল এই যে লেনিনবাদই সাম্রাজ্যবাদের যুগের মার্কসবাদ। বলা বাহুল্য, মার্কস এঙ্গেলসের মৌলিক অবদানগুলির ওপরে ভিত্তি করেই লেনিন সাম্রাজ্যবাদের যুগের বৈশিষ্ট্যগুলিকে ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং তার পাশাপাশি সেগুলির সফল প্রয়োগের জন্য সংগ্রাম, সংগঠন, রণনীতি ও কৌশলগত কর্তব্যগুলি নির্দিষ্ট করেছিলেন এবং তা প্রয়োগ করেছিলেন। পরবর্তীকালে ফ্যাসিবাদের উত্থান ও তার মোকাবিলায় এগুলি ভূমিকা পালন করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই সংগ্রাম ছড়িয়ে পড়ে এবং জয়যুক্ত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয় ও বিলোপের পরেও চীন ভিয়েতনাম কিউবা কোরিয়া লাওসে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং অন্যান্য দেশে সংগ্রাম জারি আছে। মার্কসের মূল শিক্ষা ও লেনিনবাদী পথ থেকে বিচ্যুতি ও বিকৃতির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের বিপর্যয় সত্ত্বেও উপরোক্ত পাঁচটি দেশে সমাজতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম এখনও অব্যাহত আছে।
লেনিনের কথায় ‘মার্কসবাদ কোনও আপ্তবাক্য নয়, কর্মক্ষেত্রের পথনির্দেশ’। এই কথাগুলি মনে রেখেই ২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া এবং এখনও পর্যন্ত চলা দীর্ঘ বিশ্ব পুঁজিবাদী সঙ্কট বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছে। একথা ঠিক যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতেও পুঁজিবাদের সঙ্কট কিছুকালের জন্য কাটিয়ে ওঠা গেছিল। তার কারণ সাম্রাজ্যবাদী যুগে পুঁজিবাদের সঙ্কট কাটানোর জন্য তথাকথিত জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের ধারণায় ‘উদারবাদী’ কেইনসীয় নীতি প্রয়োগ করা ছাড়া পুঁজিবাদীদের সামনে অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না। ১৯৭৩ সালে চিলিতে প্রতিবিপ্লবের পর এই কেইনসীয় উদারবাদের পরিবর্তে ‘নয়া উদারবাদ’ এর নামে প্রতিক্রিয়াশীল পর্বের যাত্রা শুরু হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত বিপ্লব (STR), আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির বিশ্বায়ন, সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বগুলি স্তিমিত করতে সাহায্য করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সংশোধনবাদী নেতৃত্ব এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার পরিবর্তে মার্কসবাদ লেনিনবাদকেই বিসর্জনের পথ বেছে নিয়েছিল। কিন্তু এখনকার পাঁচটি সমাজতান্ত্রিক দেশ সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লেনিনের এনইপি এবং ‘নির্দিষ্ট পরিস্থিতির নির্দিষ্ট বিশ্লেষণ’ করার পথে শত সহস্র সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এগিয়ে চলেছে। এছাড়াও ৭৬টি দেশের কমিউনিস্ট পার্টি নিজেদের মধ্যে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে এখনকার নয়া ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইতে আছে।
বিশ্বযুদ্ধের আগে যে মহামন্দা দেখা দিয়েছিল তার প্রেক্ষাপটে ইউরোপে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছিল, সেই মন্দা তিন চার বছর স্থায়ী ছিল। কিন্তু এখনকার অর্থনৈতিক সঙ্কট ২০০৮ সালে শুরু হয়ে বিশ্বব্যাপী চলছে। একশো বছর আগের সঙ্কট ব্যাপক বা মহামন্দা ছিল, কিন্তু এখনকার সঙ্কট দীর্ঘতর। যেহেতু আন্তঃ সাম্রাজ্যবাদী দ্বন্দ্ব এখন সাময়িকভাবে হলেও স্তিমিত, তাই এখনকার নয়া ফ্যাসিবাদের মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ ভিন্নতর, কিন্তু অসম্ভব নয়। চলতি বছরে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ নিজ নিজ দেশের সাধারণ নির্বাচনে রায় দিচ্ছেন বা দেবেন। জনসংখ্যার বিচারে এর মধ্যে সর্ববৃহৎ আমাদের দেশ ভারতের জনসাধারণ এই সংগ্রামেই রয়েছেন।
ইউক্রেন কিংবা প্যালেস্তাইন ঘিরে যুদ্ধোন্মাদনা সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের মদত পেলেও সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব যে একেবারে স্তিমিত হয়ে গেছে একথা বলা যায় না। আমরা মনে করি, ‘সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’ লেনিনের এই ব্যাখ্যা এখনও প্রাসঙ্গিক। কিন্তু এই স্তরের (stage) মধ্যেই বিভিন্ন পর্যায়ে (phase) কিছু বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন হতে পারে, যদিও সেগুলি এই মূল স্তরেরই অন্তর্গত। ভারতের বর্তমান শাসক আরএসএস বিজেপি’র পূর্বসূরিরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্যাসিবাদের পক্ষ নিয়েছিল এবং এখনও নয়া ফ্যাসিবাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি অনুসরণ করে চলেছে। ইতালিতে মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী কর্পোরেট রাষ্ট্র এবং জার্মানিতে হিটলারের ইহুদি বিদ্বেষী উগ্র জাতীয়তাবাদের ধারণার সংমিশ্রন ঘটিয়েছে তারা ভারতে কর্পোরেট হিন্দুত্ববাদী রাজত্ব কায়েম করতে। ভারতের সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভগুলির প্রত্যেকটি এখন আক্রান্ত। স্বাধীনতার পরে মোদীর গত ১০ বছরের শাসনকালের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিচ্ছে কেন এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে পরাস্ত করা প্রথম ও প্রধানতম কর্তব্য। আমাদের রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের গঠন, নামকরণ, নির্বাচনী প্রতীক লাভ ইত্যাদির পিছনেও আরএসএস বিজেপি’র অবদান অনস্বীকার্য এবং সেই জন্যই মমতা ব্যানার্জি তাদের দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়েছিলেন। দেশের ও রাজ্যের শাসক দলের নীতি ও দুর্নীতির বিষয়ে পরিমাণগত ছাড়া গুণগত কোনও ফারাক নেই। নির্বাচনী বন্ডে পাওনার হিসাব দেখলে বিজেপি’র পরেই তৃণমূলের স্থান লক্ষণীয়। এরাজ্যে মমতা ব্যানার্জির উত্থানকালে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র সচিবের দুই বারের সাক্ষাতের দৃষ্টান্তও নজিরবিহীন।
এই সব কারণে এবারের লোকসভা নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে যতদূর সম্ভব একত্রিত করার কৌশল নিতে হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে এই নির্বাচনী কৌশলের সঙ্গে মার্কসবাদ লেনিনবাদের বা মতাদর্শের সম্পর্ক কোথায়? এই প্রসঙ্গে বলা যায়, লেনিন সাম্রাজ্যবাদের ৫টি বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তার মূল কথা হচ্ছে, লগ্নি পুঁজির একাধিপত্য ও তা কায়েমের জন্য আন্তঃ সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। লেনিন ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখে যাননি। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সপ্তম কংগ্রেস ফ্যাসিবাদকে লগ্নিপুঁজির সবচাইতে প্রতিক্রিয়া সন্ত্রাসমূলক উগ্র জাতীয়তাবাদী অংশের আগ্রাসী একনায়কত্ব বলে চিহ্নিত করেছিল। লেনিন আরও সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন, এই সাম্রাজ্যবাদের যুগে লগ্নিপুঁজি বলতে শিল্প-পুঁজির পরিবর্তে ফিনান্স বা মুদ্রা পুঁজি বিপুল প্রাধান্য পায়, যার সঙ্গে উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের কোনও সম্পর্ক নেই, এটা মূলত ফাটকাবাজির কারবার। লেনিনের ভাষায় ‘যারা কুপন কেটে জীবনধারণ করে, কোনোরকম উৎপাদনে অংশগ্রহণ থেকে যারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, কুঁড়েমিই যাদের পেশা।’ লেনিন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদ পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর’ নামক লেখায় ১৯১৩ সালে রাশিয়ার ১১টি বৃহৎ ব্যাঙ্কের মূলধন বিনিয়োগে উৎপাদনপুঁজি ও ফাটকা পুঁজির তুলনামূলক অংশের তথ্য তুলে ধরে দেখিয়েছিলেন যে ফাটকা পুঁজির অংশ উৎপাদন পুঁজিকে ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে তখন ফাটকা পুঁজি ছিল ১৬৮৯ লক্ষ রুবল, আর উৎপাদন পুঁজি ছিল ১৩৬৪ লক্ষ রুবল। বলা বাহুল্য, তখনকার সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে এই অনুপাত ছিল ফাটকা পুঁজির পক্ষে আরও বেশি পরিমাণে।
সমসাময়িক বিশ্বের এই অনুপাত সঠিকভাবে পাওয়া মুশকিল, কারণ এই সময়ে ফাটকা পুঁজির রূপ ও চরিত্র কল্পনাতীতভাবে বদলে গেছে। ফাটকা পুঁজি যাকে এখন লুটেরা পুঁজি বলা হয় তার আদিম চরিত্র বুঝতে হলে মার্কসের কথায় ফিরে যেতে হবে। মার্কসের লেখা ক্যাপিটালের তিন খণ্ডেই পুঁজির আদিম সঞ্চয়ের কমবেশি বিবরণ পাওয়া যায়। মার্কসের আবিষ্কারের মূল বিষয় ছিল পণ্য উৎপাদনের জন্য আবশ্যিক শ্রম সময় বাড়িয়ে কীভাবে উদ্বৃত্ত মূল্য সৃষ্টি হয় যা পুঁজিতে রূপান্তরিত হয়। এটাই ছিল শিল্প পুঁজির শোষণের মূল রূপ। আবার এটাও সত্য যে শিল্প উৎপাদনের মূলধন জুগিয়েছিল উপনিবেশ থেকে লুট করা লুটেরা পুঁজি। উদ্বৃত্ত মূল্যের শোষণের চরিত্র হলো শ্রমশক্তির প্রকৃত মূল্যের একাংশ আত্মসাৎ (appropriation) করা। কিন্তু লুটেরা পুঁজির মৌলিক চরিত্রে উৎপাদন, কলকারখানা, শ্রমিক এসবের কোনও অস্তিত্ব নেই, মার্কসের ভাষায় যাকে বলে expropriation। লেনিন তাঁর সময়ে লুটেরা পুঁজি তথা ফাটকা পুঁজি পরিমাণগত দিক থেকে কীভাবে উৎপাদন পুঁজিকে ছাড়িয়ে যায় তা দেখিয়েছেন।
বিষয়টি আরও সহজভাবে বোঝার জন্য আমরা ভারতের চলতি সাধারণ নির্বাচনে তথাকথিত নির্বাচনী বন্ডকে একটি উদাহরণ হিসাবে ধরে নিতে পারি। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল এই ৬ বছরে সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী বন্ডে প্রাপ্ত মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর অর্ধেকের বেশি পেয়েছে বিজেপি। এই টাকার উৎস কী? যে কোম্পানিগুলি এই টাকা দিয়েছে তাদের একাংশের জন্মই হয়েছে মাত্র ৩ বছরের মধ্যে, আরেক অংশ লোকসানে চলছে অথচ মোট আয়ের চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করেছে বন্ড কিনতে। এটা ঠিকই যে কেন্দ্রীয় সরকারের ইডি সিবিআই ইত্যাদি এজেন্সির চাপ এর একটা কারণ, কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। কিছু কোম্পানির ব্যালেন্সসিট এমনভাবে তৈরি যাতে আয় কম করে বা লাভকে লোকসান হিসাবে দেখানো হয়, বাকিটা কালো টাকা। তাছাড়া কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির চাপে বাধ্য হয়ে বন্ড কিনে শাসক দলকে দিলেও সরকারই তাদের লোকসান মিটিয়ে মুনাফার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে নানা অবৈধ পথে। আসলে মোট লুটের পরিমাণ এই ১৬ হাজার কোটি টাকার বহুগুণ বেশি। বলা হয়েছে, বন্ডের টাকা রাজনৈতিক দল না তুললে সেই অংশ নাকি চলে যাবে ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলে। পিএম তথা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কেয়ার বা দেখভালের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই, কারণ এর অছি পরিষদ রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যরা। আদতে এই সংস্থাটি বেসরকারি, এর খোঁজখবর কে রাখে? সরকার লুট করলে লুটেরাদের রোখে কে?
আসলে অন্যান্য দেশের মতোই ভারতেও কর্পোরেট পুঁজি ও শাসককূলের প্রকৃত সম্পদের ঠিকঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায় না, কারণ তার বেশিরভাগই কালো। এই কালো টাকাও সব দেশের মধ্যে নেই, বিদেশের কোনও না কোনও বেনামী কোম্পানিতে গচ্ছিত আছে, এগুলিকে শেল কোম্পানি বলা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে কলকাতাতেও এরকম শেল কোম্পানি আছে যাদের হয়তো অফিস কিংবা কর্মচারীও নেই। ঠিকানা মিলিয়ে যদি বা একটা ধুলোময়লা জমা বন্ধ ঘর পাওয়াও যায় সেখানে টাকার হিসাব পাওয়া যাবে না। এই পুঁজির পরিমাণ ও ঠিকানা খুঁজে পাওয়া মুশকিল, কারণ সেটা সিন্দুকে বন্দি নেই, বিশ্বের কোনও না কোনও জায়গায় হয়তো ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং কোনও উৎপাদন ছাড়াই তার পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছে। এমনকি লন্ড্রিতে কাপড় কাচার মতো কালো টাকাকে সাদা করার অসংখ্য মানি লন্ডারিং ব্যবস্থাও গড়ে উঠেছে। এগুলি হিমশৈলের চূড়ামাত্র, বেশিরভাগটাই গভীর জলের নিচে।
শুধু নির্বাচনী বন্ড নয়, কী হয়েছে ফ্রান্স থেকে যুদ্ধ বিমান রাফালে কেনা নিয়ে কেলেঙ্কারিতে? কী হয়েছে ইজরায়েল থেকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেনা নিয়ে? নানা প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় সম্প্রতি আদানী গোষ্ঠী নিয়ে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে, যা নিয়ে একটি কথাও বলেননি প্রধানমন্ত্রী। যেমন ‘কালীঘাটের কাকু’র কণ্ঠস্বর পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে নিশ্চুপ এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন মার্কস তাঁর ক্যাপিটাল তৃতীয় খণ্ডে (পৃষ্ঠা ২৬৭-৫০৫) যেখানে এই পুঁজির চরিত্রকে কাল্পনিক বা বানানো (fictitious) বলে উল্লেখ করেছিলেন। দেশের লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র বিমানবন্দর, রেল, বন্দর, খনিজ সম্পদ, জমি, জল থেকে সন্দেশখালির ভেড়ি, শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ইত্যাদি যা কিছুর প্রকৃত মালিক দেশের জনসাধারণ সেই সবই এখন নিলাম ছাড়াই সস্তায় বিকোচ্ছে কর্পোরেটের কাছে। দিল্লি থেকে কলকাতা অজস্র দুর্নীতির উপাখ্যানের পিছনে রয়েছে এই লুটেরা পুঁজি বা ক্রোনি ক্যাপিটাল, মোট পুঁজিতে যার অংশ শতকরা ৮০ ভাগের কম নয়।
আগেই বলা হয়েছে লেনিন কেন সাম্রাজ্যবাদের যুগে লগ্নি পুঁজির উত্থানের গুরুত্ব বিশদে ব্যাখ্যা করেছিলেন। এখন তার বিরুদ্ধেই ভারত সহ বিশ্বজুড়ে লড়াই সংগ্রাম চলছে। এই লড়াই আসলে লুটে খাওয়ার বিরুদ্ধে খেটে খাওয়া মানুষের লড়াই। এই জন্যই বাংলায় বামফ্রন্ট সরকার পরিবর্তনের পরে প্রথম ব্রিগেড সমাবেশেই সভাপতির সংক্ষিপ্ততম ভাষণে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ডাক দিয়েছিলেন, ‘বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও, তৃণমূল হটাও বাংলা বাঁচাও।’ সেই রণধ্বনির মূল তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা এখন আরও বেশি।
Comments :0