RESERVE BANK NPA

পাঁচ বছরে কর্পোরেটকে ঋণছাড় ১০.৫৭ লক্ষ কোটি, জানাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক

জাতীয়

ব্যাঙ্কের ২.০৯ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ ছাড় দেওয়া হয়েছে কেবল এক বছরে। পাঁচ বছরে ঋণছাড়ের অঙ্ক ১০.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা!

তথ্যের অধিকার আইনে দায়ের এক আবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। দেশের মুদ্রা ব্যবস্থার নিয়ামক এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, ‘রাইট অফ’ মানে ঋণছাড় নয় বলে সরকার দাবি করলেও, বাস্তবে সেই টাকা আর ব্যাঙ্কের ঘরে ফেরত আসে না বললেই চলে। কারণ, ‘রাইট অফ’ বা ব্যাঙ্কের সম্পদের থেকে খারিজ করা ঋণের মাত্র ১৮.৬০ শতাংশ ফিরেছে ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায়। 

গত ২২ জুলাই ‘রোজগার মেলা’ করে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দাবি, অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় ভারতের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। কংগ্রেসকে লক্ষ্য করে মোদী বলেছেন, ‘‘অতীতের সরকার জাতীয় স্বার্থের তুলনায় ক্ষমতার লোভকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এখন তা শুধরানো হয়েছে। ভারতীয় ব্যাঙ্ক ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক স্তরে সবচেয়ে শক্তিশালী।’’

বিভিন্ন অংশেরই বক্তব্য, ভারতীয় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত বহুদিন থেকে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কই তার মেরুদণ্ড। মোদী বরং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা ভেঙে দিচ্ছেন। বেসরকারি একচেটিয়া শিল্পকে যে হারে ছাড় দিচ্ছেন অতীতে তা করা হয়নি। ছাড় আড়াল করতে তথ্যে কারচুপি করা হচ্ছে। 

কারচুপির অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ঋণ ‘রাইট অফ’ বা খাতা থেকে সরানো। ঋণবাবদ কিস্তির টাকা ব্যাঙ্ক ফেরত না পেতে থাকলে তাকে ‘অনাদায়ী ঋণ’  ঘোষণা করে সরকার। ‘রাইট অফ’ ঘোষণা করলে সম্পদের খাতা থেকে সেই ঋণ সরানো হয়। ফলে অনাদায়ী ঋণ টাকার অঙ্কে কমে যায় হিসেবের খাতায়। দেখানো যায় ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য ভালো। বিজেপি নেতারা বারবারই বলছেন ‘রাইট অফ’ মানেই ঋণ মকুব করা বা ছাড় নয়। 

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে ‘রাইট অফ’ করা ঋণের অঙ্ক ৫লক্ষ ৮৬ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। তার মধ্যে মাত্র ১৮.৬০ শতাংশ বা ১ লক্ষ ৯ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা ফিরেছে ব্যাঙ্কের ঘরে। কিন্তু ‘রাইট অফ’ ঘোষণার কৌশলে দেখানো হয়েছে মোট ঋণের মাত্র ৩.৯ শতাংশ অনাদায়ী। যদি ‘রাইট অফ’ হিসেবে ধরা হয় তা’হলে এই হার দাঁড়াবে ৭.৪ শতাংশে। অনাদায়ী ঋণ দেশে আসলে ১০ লক্ষ ৩২ কোটি টাকা। 

বিভিন্ন সময়েই দেখা গিয়েছে মজুরি বা বেতন থেকে আয় হয় যে অংশ, তার ক্ষেত্রে ঋণছাড় সামান্যই। এমনকি ছোট-মাঝারি ব্যবসাও ঋণছাড়ের বিশেষ সুযোগ পায় না। সেই সুবিধা  পায় বড় মাপের ব্যবসায়িক সংস্থাগুলিই। সরকারি ছাড়ের সুযোগ পেয়েছে এমনকি বড় মাপের জালিয়াতিতে জড়িয়ে বিদেশে পালানো বিজয় মালিয়া বা মেহুল চোকসিদের সংস্থা। অথচ কৃষিঋণ মকুবের দাবি উঠলে এই সরকারই তাকে অর্থনীতির পক্ষে সহনীয় নয় বলে থাকে। 

রিজার্ভ ব্যাঙ্কে আবেদনের ভিত্তিতে এই তথ্য প্রকাশ করেছে ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’। 

Comments :0

Login to leave a comment