MONDA MITHAI – PALLAV MUKHAPADHAYA | MOLLA NASIRUDDIN – NATUNPATA | SATURDAY 6 JUNE 2024

মণ্ডা মিঠাই – পল্লব মুখোপাধ্যায় | মোল্লা নাসিরুদ্দিন - নিছকই রসিকতা ? – নতুনপাতা | শনিবার ৬ জুলাই ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHAI  PALLAV MUKHAPADHAYA  MOLLA NASIRUDDIN  NATUNPATA  SATURDAY 6 JUNE 2024

মণ্ডা মিঠাই

মোল্লা নাসিরুদ্দিন - নিছকই রসিকতা ?

পল্লব মুখোপাধ্যায়

নতুনপাতা

 

নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তথা মোল্লা নাসিরুদ্দিনের নাম শোনেননি এমন মানুষ বিরল। তাঁকে
কিংবদন্তি বললেও কম বলা হবে। বিশ্বের এমন কোনও প্রান্ত নেই যেখানে নাসিরুদ্দিন
হোজ্জার গল্প প্রচলিত নয়। তাঁর জীবন সম্বন্ধে খুব বেশি জানা না গেলেও সাধারণভাবে
ধারণা করা হয়, ত্রয়োদশ শতকে বর্তমান তুরস্কের এসকিসেহির প্রদেশের সিভ্রিহিসার
শহরে তাঁর জন্ম। কেউ কেউ বলেন তাঁর জন্মস্থানের দাবিদার তুর্কির আকশিহার। কারও
মতে তাঁর জন্ম হয়েছিল তুরস্কের খোর্তো গ্রামে। অবশ্য কেউ কেউ বলেন, তাঁর জন্ম
আধুনিক ইরানের পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের খোয় শহরে। আবার কোনও কোনও
ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দাবি নাসিরুদ্দীনের জন্ম আর কর্মস্থল ছিল চীনদেশেই। মধ্য
এশিয়ায় মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজ্জা পরিচিত নাসিরুদ্দিন এফেন্দি নামে। এই ‘এফেন্দি’
সম্মানসূচক পদবী | এই নামেই সমাজের জ্ঞানী ব্যক্তিদের অভিহিত করার রেওয়াজ
ছিল মধ্য এশিয়ায়। অনেকের মতে পেশায় তিনি ছিলেন কাজি বা বিচারক | ইসলামের নানা
গুঢ় তত্ত্বে তিনি ছিলেন সুপন্ডিত |
গল্পের ভান্ডারের নিরিখে নাসিরুদ্দিন, গোপাল ভাঁড় বা বীরবলের থেকে এক ধাপ এগিয়ে
আছেন। কোনও বাঁধা দেশ-কালের চৌহদ্দিতে তাঁকে আটকে রাখা যায়নি। গ্রিকরাও
তুর্কিদের কাছ থেকে নিয়ে নাসিরুদ্দিনকে তাদের লোককথার (ফোক-লোর) অংশ করে
নিয়েছে। মধ্যযুগে বড় কর্তাদের নিয়ে মস্করা করার জন্যে নাসিরুদ্দিনের গল্প চালু ছিল।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন-এ তাঁকে "জনগণের বীর" আখ্যায়িত করে ছবি (ফিল্ম) তোলা
হয়েছে। চীনের জনসাধারণতন্ত্রে তাঁর গল্প সংকলিত করে বই বেরিয়েছে চৈনিক ও
ইংরেজি ভাষায়। জার্মান বিশ্বকোষেও তাঁর নাম পাওয়া যায়। বলকান ও মধ্য এশিয়ার
সর্বত্র নাসিরুদ্দিনের দারুণ খাতির। প্রতি বছর বিরাট করে তুর্কির আকশিহার-এ
নাসিরুদ্দিন উৎসব হয়। নাসিরুদ্দিন সেজে তাঁর বিখ্যাত রসিকতাগুলি অভিনয় করে
দেখানো হয়। তাঁর গল্পগুলি তুরস্কের বাইরে মূলত মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে ব্যাপকভাবে
প্রচলিত। এর বাইরে ইউরোপের গ্রিস, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া আর জার্মানিতেও প্রচলিত
আছে। চীনেও এই কিংবদন্তী জনপ্রিয় |
সুফি দার্শনিকরা তাঁদের তত্ত্বশিক্ষায় নাসিরুদ্দিনের গল্প ব্যবহার করেন। লোককে
বলা হয়, পছন্দমতো একটি গল্প বেছে নাও, তারপর গভীরভাবে তার তাৎপর্য চিন্তা
করো। জ্ঞান আসে ধ্যান থেকে। বেইরুট-করাচির বিশেষজ্ঞদের মতে, নাসিরুদ্দিন ছিলেন
সত্যিসত্যিই সুফি গুরু।

নাসিরুদ্দিন-তৈমুর, বীরবল-আকবর, গোপাল-কৃষ্ণচন্দ্র এই জুড়ির কথা মানুষের মুখে
মুখে ফেরে । নাসিরুদ্দিন-বীরবল-গোপাল-এঁরা সবাই খুব সাধারণ মানুষ । চালচুলো নেই,
পয়সা-কড়ি নেই, খানদানি বংশেও কেউ জন্মাননি। রাজা-বাদশার দয়া কুড়িয়েই বাঁচতে হয়।
কিন্তু এক জায়গায় এঁদের জয় হয়েছে । রাজা-বাদশার মুখের ওপর জবাব দিতে এঁদের জুড়ি
নেই। এক দিক দিয়ে দেখলে, সাধারণ মানুষ (অবস্থার ফেরে যাঁদের মাথা নিচু করে দিন
কাটাতে হয়) রাজা-বাদশার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন এই গল্পগুলি দিয়ে। রাজার
আছে লোক-লস্কর হীরে-জহরৎ ঢাল-তলোয়ার। সাধারণ মানুষের সম্বলের মধ্যে স্রেফ
বুদ্ধি। আর এটিই তো সবচেয়ে বড় কথা। রাজা-বাদশার আছে টাকার জোর, গায়ের জোর ।
তাতে কী এসে যায়? যদি না থাকে আসল জোর অর্থাৎ বুদ্ধির জোর? নাসিরুদ্দিন-
বীরবল-গোপাল-এর অনেক গল্পে এই কথাটিই ঈষৎ চাপা গলায় বলা থাকে। যতদিন
পৃথিবীতে রাজতন্ত্রের গাজোয়ারি থাকবে, এসব গল্প কখনই পুরনো হবে না।
নাসিরুদ্দিনের উপস্থিত বুদ্ধি ও বিজ্ঞতার খ্যাতি দেশ ও কালের সীমানা ছাড়িয়েছে |
যদিও কোনও কোনও গল্পে তাঁকে পাওয়া যায় বোকা ও নেহাতই সাদাসিধে মানুষ হিসেবে।
ফলে নাসিরুদ্দিন অত্যন্ত বুদ্ধিমান নাকি সাধারণ মেধার মানুষ ছিলেন তা নিয়ে জল্পনার
শেষ নেই। তবে তিনি যাই থাকুন, নাসিরুদ্দিনের গল্পগুলি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে
মানুষকে নির্মল আনন্দ জুগিয়ে আসছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment