মণ্ডা মিঠাই
সাপ-লুডো
শুভশ্রী রায়চৌধুরী
নতুনপাতা
অন্ধকার সময় ফিরে দেখা – প্রায় দুই বছর যাবত সারা পৃথিবী জুড়ে ছেয়ে আছে এক প্রকার ভাইরাস ‘করোনা’। এই ভাইরাস আটকাতে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ‘লক-ডাউন’ জারি করা হয়েছে। আমাদের দেশেও গত ২৩-শে মার্চ থেকে লক-ডাউন জারি করা হয়েছে। এতে আমাদের স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত সব কিছু বন্ধ। কিন্তু মহামারি ঠেকানো যায় নি। আমরা ঘরে আটকে গেছি। বাড়ির বাইরে আমাদের বের হতে দেওয়া হ্য় না। বন্ধু প্রতিবেশীদের সাথেও মেলামেশা বন্ধ। সব সময় মাস্ক পড়ে থাকতে হত। এমন কি টিউশন পড়াও বন্ধ। ঘরে বন্ধ থাকা এই দীর্ঘ সময় সত্যিই ভয়ঙ্কর। নিরুপায় হয়ে ঘরে বসে নিজেদের মধ্যে খেলা যায় এমন কয়েকটি খেলা শিখে নিতে হয়েছে। এমনই একটা খেলা সাপ-লুডো, এটা সাপ ও সিঁড়ির খেলা।
সাপ-লুডোতে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত লেখা ঘর কাটা থাকে। দশটি লাইন, প্রতি লাইনে ১০টি ঘর, মোট ১০০টি। একেবারে নীচের লাইনের বাম দিক থেকে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০। তার উপরের লাইনে ডান দিক থেকে ১১, ১২, ...২০, তৃতীয় লাইনে বাম দিক থেকে ২১,২২, ২৩, ২৪ ...৩০ । এভাবে সর্বোচ্চ লাইনে ডান দিক থেকে ৯১, ৯২, ৯৩ ... ১০০।
আমি যে বোর্ডে খেলি তাতে আটটা মই এবং আটটা সাপ আছে। মইয়ের গোড়ায় পড়লে উঠে যাও, সাপের মুখে পড়লে নেমে যাও। প্রথম মই ৪নং ঘরে, এখানে গুটি এলে তা মই ধরে উঠে ১৪ নং ঘরে চলে যাবে। দ্বিতীয় মই ৯নং ঘরে, এখানে থেকে সোজা ৩১ নং ঘরে। তৃতীয় মই ২০ নং ঘরে এখান থেকে ৩৮নং ঘরে পৌঁছে যাওয়া যায়। চতুর্থ মই ২৮ নং ঘরে, এটি সবচেয়ে বড় মই, এখান থেকে সোজা ৮৪ নং ঘরে চলে যাও। পঞ্চম মইটি ৪০ নং ঘর থেকে সোজা ৬৯ নং ঘরে। ষষ্ঠ মইটি ৬৩ নং ঘর থেকে ৮১ নং ঘর পর্যন্ত। অষ্টম মইটি ৭১নং ঘর থেকে ৯১ নং ঘর পর্যন্ত উঠে গেছে।
প্রথম সাপ ১৭ নং ঘরে, এর মুখে পড়লে নীচে ৭নং ঘরে নেমে আসতে হবে। দ্বিতীয় সাপ ৫৪নং ঘরে, এখান থেকে নেমে আসতে হবে ৩৪নং ঘরে। এরপর তৃতীয় সাপ ৬২ থেকে নামিয়ে দেয় ১৯ নং ঘরে ও চতুর্থ সাপ ৬৪ থেকে নামিয়ে দেয় ৬০-নং ঘরে। এই দু’টি সাপ একে বারে গায়ে গায়ে। তাই প্রfয়ই এর যেকোনও একটার খপ্পরে পড়তে হয়। পঞ্চম সাপটি সবচেয়ে বড়, ৮৭ থেকে নামিয়ে দেয় ২৪-এ। বোর্ডের সবচেয়ে কঠিন লাইন ১০ নং লাইনটি। এখানে রয়েছে ষষ্ঠ (৯২ থেকে নামিয়ে ৭৩), সপ্তম (৯৫ থেকে নামিয়ে ৭৫) এবং অষ্টম (৯৯ থেকে নামিয়ে ৭৮) সাপগুলি। এই লাইনে পৌঁছে আবার নীচে নেমে যাওয়া খুবই মন খারাপের বিষয়, কিন্তু অন্য খেলোয়াড়দের মজা। সবচেয়ে দুঃখের ৯৯-তে পৌঁছে সাপের মুখে পড়া।
খেলা শুরু, লুডোর মোট চার রঙের একটি করে গুটি নিয়ে সর্বোচ্চ ৪ জন এই খেলা খেলতে পারে। প্রথমে সবারই গুটি এক নং ঘরের বাইরে বাম দিকে। লুডোর ছক্কা ফেলা খেলা শুরু, যার প্রথমে পুট (১) পড়বে তার খেলা শুরু হবে, তার গুটিটা ১নং ঘরে রেখে। অন্যান্যদের খেলাও এভাবে পুট ফেলে শুরু করতে হবে। ছক্কায় যা পড়বে গুটি তত ঘর এগিয়ে যাবে। মইয়ের মুখে পড়লে মইয়ের মাথায় উঠে যাবে। সাপের মুখে পড়লে লেজ পর্যন্ত নেমে যাবে। এভাবে এগোতে-পিছোতে যে গুটি ১০০-র ঘরে পৌঁছবে তার গুটি পেঁকে গেল বা জয়ী হল।
সাপ-লুডোতে এই ওঠা-নামাটাই মজার।
Comments :0