Mamata jitti property

জিট্টির সঙ্গে পরিবারের যৌথ সম্পত্তি কেন, নীরবই মমতা

কলকাতা

ভয় দেখিয়ে জোর করে তাঁর ভাই সমীর ওরফে কার্তিক ব্যানার্জি এবং ভাইয়ের স্ত্রী কাজরী ব্যানার্জিকে বিজেপি’তে টানার চেষ্টা করা হয়েছে বলে বিধানসভায় অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোমবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের ওপরে বিতর্কে অংশ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমার ভাই এবং ভাইয়ের বউকে ভয় দেখিয়ে, জোর করে বিজেপি-তে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু ওরা যায়নি। কারণ, ওরা জানে দিদি বকবে, রাগ করবে।’ 
 বিজেপি’তে যোগদানের চাপের উল্লেখ করলেও বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পরিবারের সঙ্গে কয়লা পাচারকাণ্ডের যোগ অস্বীকারের কোনও যুক্তি তথ্য হাজির করতে পারেননি। তার বদলে যথারীতি তিনি বিজেপি’র প্রতিহিংসার রাজনীতি, দলবদলের রাজনীতি উল্লেখ করলেন, এমনকি কয়লা পাচারে মানি লন্ডারিংয়ে অভিযুক্ত মনজিৎ সিং গ্রেওয়ালের সঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছবিও দেখালেন। কিন্তু সেই মনজিৎ তথা জিট্টি ভাইয়ের সঙ্গে যৌথ সম্পত্তি তাঁর পরিবারের আছে কিনা তা সযত্নে এড়িয়ে গেলেন। বিধানসভার অধিবেশনে দাঁড়িয়ে যেভাবে মনজিতের ছবি মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়েছেন তাতে স্পষ্ট যে মনজিতের দায় তিনি ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। কিন্তু ভাই কার্তিক ব্যানার্জি ও ভ্রাতৃবধূ কাজরী ব্যানার্জির সঙ্গে এমন ব্যক্তির যৌথ সম্পত্তি কী করে হলো, সেই জবাব দেওয়ার পথে এক পাও হাঁটেননি মুখ্যমন্ত্রী। 
  ইডি-সিবিআই’কে ব্যবহার করে বিজেপি’তে টানার কৌশল এবং তৃণমূলে থাকাকালীন দুর্নীতি করে বিজেপি’তে যোগ দেওয়ার গদ্দারির অভিযোগ তুলে আসল প্রশ্নকে চাপা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।  বিধানসভায় তিনি বলেছেন, ‘সবাইকে ইডি, সিবিআই দেখাচ্ছে। তৃণমূলের যত দোষ! গদ্দার সেজেছে সাধু বেশ।’ কিন্তু গদ্দারদের ঠিক কতটা দোষ, আর তৃণমূল তথা তাঁর পরিবারের ঠিক কতটা, সেই হিসাব তিনি উল্লেখই করেননি। কোন অপরাধ ফাঁস করে দেওয়ার ভয় ইডি-সিবিআই স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ভাই ও ভাইয়ের বউকে দেখাচ্ছে, সেটাও তিনি সামনে আনেননি। 
  গত বুধবার কয়লা পাচারকাণ্ডের তদন্তে বালিগঞ্জে এক বেসরকারি সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ইডি নগদ ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে। তদন্তে নেমে মনজিৎ সিংহ গ্রেওয়াল ওরফে জিট্টি ভাই নামে এক ব্যক্তির কথা জানতে পারেন তদন্তকারীরা। অতি প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক ব্যক্তির হয়ে টাকা পাচারের টাকা পার্কিং করতেন তিনি বলে অভিযোগ।  শুধু তা-ই নয়, ইডি সূত্রে জানা গেছে, এই মনজিতের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইয়ের পরিবারের যৌথ সম্পত্তির হদিশও পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এই অভিযোগের পরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর ভাই কার্তিকের সঙ্গে জিট্টি ভাইয়ের ছবিও প্রকাশ করেছেন। সোমবার বিধানসভায় এর পালটা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে মনজিতের ছবি দেখান মমতা ব্যানার্জি। তারপর বলেন, ‘আমি মন্দিরে, মসজিদে যাই, গুরুদ্বারেও গিয়েছি। আমার ছবি দেখানো হচ্ছে। কার্তিক এবং কাজরী বিজেপি-তে যোগ না দেওয়াতেই তাঁদের নিশানা করা হচ্ছে।’ 
 অন্যদিকে, শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভায় প্রেস কর্নারে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যে ছবিটি দেখিয়েছেন সেটি বিবেক মেলার। আমি যখন তৃণমূলে ছিলাম, তখন ওঁর ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় বিবেক মেলা করতেন। আমি ওই বিবেক মেলাতে যেতাম কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে। মেলায় কে থাকবেন, মঞ্চে কে উঠবেন, কার পাশে থাকবেন, সে সব ঠিক করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়।’ 
এভাবে বিধানসভার আলোচনায় সরকারপক্ষ এবং বিরোধীপক্ষ, দুই পক্ষ পরস্পরের গায়ে কাদা লাগিয়ে নিজেদের অভিন্ন দেখানোর চেষ্টা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই শুভেন্দু অধিকারীকে গদ্দার সম্বোধনে ‘সব দোষ তৃণমূলের!’ বলে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন। কিন্তু নিজের গায়ের কাদা মোছার কোনও চেষ্টাই করেননি। 
 মূল প্রশ্ন চাপা দিতে এদিন বিধানসভার অধিবেশনে নাটকীয়তাও রাখা হয়েছিল। রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে আলোচনার সময় বিজেপি বিধায়করা ‘পিসি চোর’, ‘ভাইপো চোর’ বলে স্লোগান দিয়েছেন। আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ভাষণ দেওয়ার সময় অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তরজায় জড়িয়েছেন। অধ্যক্ষ শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যর কিছু অংশ কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব উত্থাপনও করেন তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়। এমনকি তাঁকে সাসপেন্ড করার দাবিও করেন। অন্যদিকে, বিজেপি বিধায়করা ওয়াকআউট করেন। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভাষণ দেওয়ার সময় আগ বাড়িয়ে বলেন, ‘আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বিরোধী দলনেতার হয়ে।’  
 তাঁরই অভিযুক্ত ‘গদ্দার’র হয়ে এভাবেই ক্ষমা চেয়ে মীমাংসা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী! বুধবার এই বিধানসভাতেই তথ্য কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। তাহলে সেখানে কি আরও কিছু মীমাংসা হয়ে যাবে? এই প্রশ্নও উঠছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment