Tourists flock to Palash, say traders

পলাশের টানে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়, বলেছেন ব্যবসায়ীরা

রাজ্য

পলাশ মাঝারি আকারের পর্ণমোচী বৃক্ষ। এটির বৈজ্ঞানিক নাম বুটিয়া মনোস্পার্মা। সংস্কৃত ভাষায় বলে কিংশুক, বাংলায় পলাশ। মনিপুরী ভাষায় পাঙ গোঙ নামে পরিচিত। পলাশের রং হলুদ, লাল ও লালচে কমলা। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্বেত পলাশ যদিও তা বিরল।
সুবাস না থাকলেও সৌন্দর্য ছড়াতে জুড়ি নেই পলাশের। বসন্ত আসে প্রকৃতির রাণী হয়ে। বাহারি সাজে তাঁর আগমন। রঙিন ফুলের ফুটন্ত পাপড়ি আর কোকিলের কুহু ডাকে মনে প্রেম জাগাতে বসন্তের জুড়ি মেলা ভার। বসন্তের হাজারো ফুলের মধ্যে পলাশ কারো মন কাড়েনি এ কথা কেউ অস্বীকার করতে পারেনা।  পলাশ গাছ তার ফুলের জন্যই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া পর্যন্ত এই গাছ বিস্তৃত। এই গাছ সর্বোচ্চ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে।
আগুনের রঙ লাগা পলাশ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরুলিয়ার উদ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম পরিবার নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন আরও দশটি পরিবার। গানে গল্পে আনন্দ হইচোইয়ে বাসের মধ্যেই কেটে গেলো সারারাত। সকলের ডেস্টিনেশন একটাই আগুনের রঙ লাগা পলাশ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ। গানে এবং কবিতায় মুখর এই নাম পলাশ। এই পলাশ ফুল জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনের। বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। পলাশে মুগ্ধ পর্যটকরা, খুশি ব্যাবসায়ীরা। পরের দিন সকালে আমরা উঠে ছিলাম অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে থাকা একটি লজে, সেই লজের মালিক জানোকি প্রসাদ মাহাত বলেন, ‘‘ পুরুলিয়ার পলাশের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বাংলার পর্যটন। পলাশের টানে প্রতি বছর পুরুলিয়ায় পর্যটকের ভিড় বাড়ে। পাহাড় জুড়ে রয়েছে শাল, শিমূল, মহুয়া, পাহাড় ঘীরে পলাশ ফুল গাছের সমারোহ। দোলের এখনও বাকি, তবুও এই সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়গুলোতে ব্যাপক ভিড় জমেছে পর্যটকদের। গত কয়েক বছর এই সংখ্যাটা ব্যাপক হারে বেড়ে গিয়েছে। শুধু দোল পূর্ণিমার সময় যে এই জেলায় পলাশ থাকে তা নয়, দোলের পরেও পলাশ থাকে পুরুলিয়ায়। শুধুমাত্র আগুনের রঙ লাগা পলাশ ফুল দেখতেই আগেভাগে ভিড় জমান পর্যটকরা। পলাশ দেখার জন্য আগে থেকেই হোটেল বুকিং হতে শুরু করেছে। তবে দোলের পরে সেই চাহিদা খুব একটা থাকে না।’’
তবে লজ মালিক পর্যটকদের আপ্যায়নে কোন ত্রুটি রাখলেন না। আমাদের টিম সহ ওই লজ থাকা অনান্যদের ছৌ নাচ দেখার সুযোগ করে দিলেন। স্বচক্ষে সামনে থেকে দেখলাম ছৌ নাচ। অসাধারণ লাগলো, তবে ছৌ নাচ নয় পলাশের সৌন্দর্যে অপেক্ষায় রইলাম সকলেই। ফাল্গুনের শুরু থেকেই শোভা ছড়াচ্ছে পলাশ। লাল মাটি, পাহাড়ের কোলে ফুটতে শুরু করেছে পলাশ। পলাশে পলাশে ছেয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া। লালে লাল গোটা প্রান্তর। পিচ ঢালা রাস্তার দুদিকে শুধু লাল আর লাল। রাস্তার বুক চিরে দাঁড়িয়ে থেকে পর্যটকদের চোখ জুড়াচ্ছে পলাশের মোহনীয় রূপ। চোখে পড়ছে শুধু পলাশের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য। বসন্তের শুরুতেই যেন প্রকৃতির ভালোবাসার কথা জানান দিতে হেঁসে উঠেছে পলাশ। হাজারো কুঁড়ির ভিড়ে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। গারো পাহাড়ের আনাচে কানাচে শোভা পাচ্ছে ফুটে থাকা পলাশ ফুল। প্রকৃতির এই অপরূপ রঙের সাজ দেখে যেন চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। ঋতুরাজের রূপ দেখে প্রকৃতি প্রেমীরা মেতে উঠছেন আনন্দে। 


পুরুলিয়া জেলার পলাশে জঙ্গলগুলি হয়ে উঠেছে লাল। চারিদিক শুধু লালে লাল ৷ পলাশের এই অপরূপ সৌন্দর্যকে উপভোগ করার জন্য পুরুলিয়া জেলায় প্রচুর পর্যটকের ভিড় জমেছে। এই পলাশের মালা গেঁথে স্থানীয় কিছু অসহায় মানুষ অল্পকিছু পয়সায় বিনিময়ে তুলে দিচ্ছেন পর্যটকের হাতে। সেই মালা পড়ে আনন্দে মাতছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। সেল্ফি তুলে স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন সেই ছবি। পলাশ যেন বসন্তের ফাগুন-প্রকৃতির মন রাঙানোর দায় নিয়েছে। পলাশের কুড়ি ডানা মেলেছে, ফুটছে। গাছের নিচে যেন পলাশফুলের বিছানা। ডালে বসে ডালে পাখি। এক কথায় অসাধারণ সেই দৃশ্য অনেকেই গাছের তলায় দাঁড়িয়ে দেখছেন। আবার কেউ ছবি তুলে বন্দি করে রাখছেন হাতে থাকা মুঠো ফোনে। আবার সেই ছবি পোষ্ট করে মনের আনন্দ উপভোগ করছেন। পলাশ ফুলের এমন মোহনীয় রূপ মনোমুগ্ধ করছে।‌ আগুন রাঙা পলাশ ফুল জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে লাগে পলাশের ছটা। শীতের জরাজীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই পলাশ ফুলের রঙিন পাঁপড়িতে নতুন সাজে সেজে ওঠেছে প্রকৃতি। পলাশের ফাগুন হাওয়ার পরশ লেগেছে প্রকৃতিতে। আগুন লাগা পলাশ আর পাখির কলতান আরো মধুর করে তুলেছে ঋতু রাজের অস্তিত্বকে। দমদমের বরাহনগর থেকে পুরুলিয়ায় ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষীকা চন্দ্রানী চ্যাটার্জিকে দেখা গেল, পলাশ ফুল হাতে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ার করে আনন্দে ফাগুনের গান গাইছেন। শুধু তিনি নন পলাশের মোহনীয় রূপ এক ঝলক দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। কেউ কেউ আবার গাড়ি থামিয়ে নিজেকে পলাশের সাথে ক্যামেরা বন্দি করছেন। অনেকেই আবার ঝড়ে পড়া পলাশের পাঁপড়ি কুড়িয়ে নিচ্ছেন। ফাগুনের আলতো বাতাসের দোল লাগতেই গাছ থেকে ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ে রাশি রাশি পলাশ ফুল। বসন্তের শুরুতেই পলাশ ফুলের মুগ্ধতা ছড়িয়ে সৌন্দর্য জানিয়ে দিচ্ছে বসন্ত বুঝি এলো রে।

Comments :0

Login to leave a comment