Manipur Burning

ইম্ফলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িও জ্বালিয়ে দিল উন্মত্ত জনতা

জাতীয়

Manipur burning

বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি

‘মণিপুরের বীরেন সিং সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে’। নরেন্দ্রী মোদী মন্ত্রীসভার অন্যতম সদস্য রাজকুমার রঞ্জন সিং কোনও রাখঢাক না রেখেই এই অভিযোগ করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার পর শুক্রবার প্রকাশ্যে রাজ্যের বিজেপি সরকারকেই কাঠগড়ায় তুললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। 
বীরেন সিং সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে টানা অভিযোগ করে আসছে বিরোধীরা। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগকে পাত্তা না দিয়ে সেই বীরেন সিং-এর উপরই ভরসা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। এমনকি কেন্দ্রের তৈরি  শান্তি কমিটিতেও মুখ্যমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। কিন্তু মণিপুরে হিংসার জন্য এবারই প্রথম কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্য মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করলেন। কারফিউয়ের মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী  ইম্ফল শহরের কম্বা এলাকায় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় সহস্রাধিক জনতা। অবশ্য ঘটনার সময় মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের কেউ বাড়িতে ছিলেন না। মন্ত্রী সিং সরকারি কাজে কেরালায় রয়েছেন। তাঁর পরিবারের লোকজন দিল্লিতে আছেন। দুষ্কৃতীদের হামলার সময় মন্ত্রীর বাড়িতে ছিলেন তাঁর ৯ জন দেহরক্ষী ও বাড়ি পাহারার জন্য ১৩ জন নিরাপত্তা রক্ষী। উন্মত্ত জনতার রোষানলে পড়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান নিরাপত্তা রক্ষীরা। মন্ত্রীর বাড়ির গ্যারেজে থাকা ছ’টি গাড়ি (এরমধ্যে সরকারি গাড়িও রয়েছে), আসবাবপত্র, নথিপত্র সব পুড়ে গিয়েছে। মন্ত্রীর বাড়িতে থাকা এসকর্ট কমান্ডার দীনেশ্বর সিং জানান, রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ এক হাজার থেকে বারোশো মানুষ মন্ত্রীর বাড়ি আক্রমণ করে।


তখন নিরাপত্তা রক্ষীরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলেন। চিৎকার শুনে বিছানা ছেড়ে বাইরে বেরোতে দেখেন মন্ত্রীর বাড়ি লক্ষ্য করে চতুর্দিক থেকে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ছে উন্মত্ত জনতা। কিছু বুঝে উঠার আগেই গ্যারেজে আগুন লেগে যায়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে নিরাপত্তা রক্ষীরা যে যেদিকে পারেন পালিয়ে যান। আগুন নেভাতে দমকলের ইঞ্জিন এলেও তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি উন্মত্ত জনতা। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে মন্ত্রীর বাড়িতে তাণ্ডব চলে। কিন্তু সেনা ও আধাসেনা বাহিনীর জওয়ানদের ধারেকাছেও দেখা যায়নি। পরে অবশ্য ওই উন্মত্ত জনতার সঙ্গে সংঘর্ষ হয় নিরাপত্তা বাহিনীর।
এদিকে, শুক্রবার কেরালায় সংবাদমাধ্যমকে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সিং বলেন, ‘আমি এখন বলতে বাধ্য হচ্ছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মণিপুর সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। রাজ্যের প্রশাসনিক যন্ত্র নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। মন্ত্রীর বাড়ি পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রাতে আমার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এর আগে আরও দুইবার আমার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে। কিন্তু আমার বাড়ি রক্ষা করতে পারেনি সরকার।’ মন্ত্রী ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে  বলেন, ‘আমি নিজে হিন্দু। আমার বাড়িতে যারা আগুন দিয়েছে তারাও হিন্দু। অথচ আজ আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা নেই।’ উল্লেখ্য করা যেতে পারে, ইম্ফল শহর সম্পূর্ণভাবে মেইতেই উগ্রপন্থী সংগঠন আরামবাই টেঙল এবং মেইতেই লিপুনের দখলে। কারফিউয়েরই মধ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে টেঙলের সদস্যরা। এরাই মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু মন্ত্রী সরাসরি আরামবাই টেঙলের নাম না নিয়ে আক্রমণকারীরা হিন্দু বলছেন।

রাজকুমার রঞ্জন সিং বিদেশের পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। অমিত শাহর হিংসা কবলিত মণিপুর সফরের সময় তিনিও সঙ্গী হিসাবে ছিলেন। রাজ্যে হিংসার জন্য বীরেন সিংয়ের সঙ্গে সুরে সুর মিলিয়ে সেই সময় কুকিদের দায়ী করেছিলেন রাজকুমার। এবার নিজের বাড়িতে আগুন লাগায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সুর গিয়েছে বদলে। এবার অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকেই কাঠগড়ায় তুললেন তিনি।
আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার আগের দিন রাজ্যের একমাত্র মহিলা মন্ত্রী নেমচা কপিজেনের সরকারি বাংলোও জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।

এদিকে, ইম্ফল শহর মন্ত্রী-শূন্য হয়ে গেছে। কুকি জনগোষ্ঠীর মন্ত্রীরা দেড় মাস আগেই রাজধানী ছেড়ে পাহাড়ে চলে গিয়েছেন। মেইতেই গোষ্ঠীর মন্ত্রীরা গত দু’দিনে আবার দিল্লি গিয়েছেন তদবির করতে। শুক্রবার বিধানসভার অধ্যক্ষও কয়েকজন বিধায়ক নিয়ে দিল্লি গিয়েছেন। তাঁদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা। রাজধানীতে এখন শুধু মুখ্যমন্ত্রী আছেন। 
কুকিদের সংগঠন আইটিএলএফ, কুকি বিয়িঙ ইত্যাদি সংগঠনের টুইটার ও ফেসবুক পেজ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র।
মণিপুরের হিংসাত্মক ঘটনায় উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি রাজ্যের বিজেপি সরকারের অকর্মণ্যতাকেও দায়ী করেছে। কংগ্রেস বিজেপি’র বহু ঘোষিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের বেহাল দশার সঙ্গে মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আশ্চর্য নীরবতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। এদিন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও বিজেপি’র ডবল ইঞ্জিন সরকারের কী হাল, সেকথা বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, হিংসায় সরকারি হিসাবেই ১০০-র বেশি মৃত্যু হয়েছে, লক্ষের বেশি ঘরছাড়া, ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ রয়েছেন আশ্রয় শিবিরে। তাঁর প্রশ্ন, সব ধ্বংস হয়ে গেলে কি মুখ খুলবেন মোদী?

Comments :0

Login to leave a comment