রাজ্য সম্মেলনের আগে পরপর কর্মসূচি নিয়েছে সিপিআই(এম)। বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে রাজ্য কমিটির সভা। ২২-২৫ ফেব্রুয়ারি হুগলীর ডানকুনিতে রাজ্য সম্মেলন। ২৫ ফেব্রুয়ারি হবে প্রকাশ্য সমাবেশ।
২৭ তম রাজ্য সম্মেলনের আগে এটিই ছিল রাজ্য কমিটির শেষ সভা। এদিন কলকাতার মুজফ্ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
তিনি বলেন যে রাজ্য কমিটির এই বৈঠকে সম্মেলনের খসড়া প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে চলমান আন্দোলন নিয়েও।
সেলিম বলেন, আজকেই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের সামনে জাল স্যালাইন কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। আসল দোষীদের না ধরে ডাক্তারদের শাস্তি দিচ্ছে সরকার। এদিনই স্কুল শিক্ষায় চাকরিপ্রার্থী এবং শিক্ষকদের মিছিল হয় কালীঘাটে। তার ওপরে পুলিশ হামলা করেছে। আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেলিম বলেন, এই সরকার নিয়োগ দিতে পারছে না। কিন্তু সঙ্গত দাবিতে আন্দোলনে নামলে পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীকে হত্যার ৬ মাস পূর্ণ হচ্ছে। ওই দিনই নিহত চিকিৎসক-ছাত্রীর জন্মদিনও। তার প্রতিবাদে কলেজ স্ট্রিট থেকে আর জি কর হাসপাতাল প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে ‘অভয়া মঞ্চ’ সহ বিভিন্ন সংগঠন। সেইদিন আমরা সবাই বিচার চাইব। এই মিছিলকে সমর্থন জানাচ্ছি। মানুষকে আহ্বান আসার জন্য।
আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। পাশাপাশি ওই দিনটি বামপন্থী প্রকাশনা সংস্থাগুলি ‘রেড বুক ডে’ পালন করে। ভাষা দিবস গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে। ভাষা আন্দোলন দেখিয়েছিল ধর্মের ওপরে মাতৃভাষার অধিকারকে রেখেছিলেন বাংলাদেশের মানুষ। তিনি এই প্রসঙ্গেই বলেন যে স্বাধীনতার সেই ইতিহাস ভুমিলয়ে দিতে নেমেছে প্রতিক্রিয়ার শক্তি।
সেলিম জানিয়েছেন যে রাজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রকাশ কারাত। ২৫ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ। কারাতের পাশাপাশি সেলিম, দেবলীনা হেমব্রম, মীনাক্ষী মুখার্জি, দেবব্রত ঘোষ বক্তা থাকবেন। রাজ্য জুড়ে সম্মেলনের প্রাক্কালে প্রচার চলবে। সম্মেলন উদ্বোধনের দিন রাজ্যের সর্বত্র পার্টিকর্মীরা পার্টি পতাকা উত্তোলন করবেন।
তিনি জানান যে কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরুদ্ধে সারা দেশের সঙ্গে এরাজ্যেও বামপন্থীদের ডাকে ১৪-২০ ফেব্রুয়ারি চলবে প্রচার অভিযান। তিনি বলেন, বাজেটে বেকারি আরো বাড়বে। কৃষকদের ফসলের দাম দেওয়ার জন্য বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি পালন করেনি সরকার। তার বিরুদ্ধে চলবে প্রচার।
এদিনই কলকাতা হাইকোর্টে রাজ্য জানিয়েছে স্যালাইনে সমস্যা ছিল না। মুখবন্ধ খামে রাজ্য সরকার আদালতে এই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তবে বিভিন্ন স্তর থেকে রিপোর্টে এমন দাবিই রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, এই সরকার সর্বদা অপরাধীদের পক্ষে। অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মিথ্যাচার করে। এটি আরেকটি মিথ্যাচার। বিষাক্ত স্যালাইনে মৃত্যু হয়েছে। ডাক্তারদের উলটে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এই সব টেন্ডার কোথা থেকে হয় আমরা জানি। স্বাস্থ্যভবন থেকে হয় না ক্যামাক স্ট্রিট থেকে হয় না কালীঘাট থেকে হয়! সেখানে কত কাটমানি থাকে? তার জন্যই তো থ্রেট কালচার হাসপাতালগুলিতে লড়াই। সেই লড়াই চলছে।
ডেউচা পাঁচামীতে এদিন খননে নেমে স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকে। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, এই প্রকল্পের কোনও স্বচ্ছতাই নেই। কে করছে, কেন করছে কেউ জানে না। আমাদের আদিবাসী নেতারা জেলাশাসককে প্রশ্ন করেছিল। আপনার অফিসের নিচে কয়লা আছে জানলে উঠে যাবেন? আমরা আদিবাসী বলে আমাদের তুলে দেওয়া হচ্ছে।
সেলিম বলেন, উচ্ছেদ হবেন আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু মানুষ। তিনি বলেন যে কোনওরকমে পাথর তুলতে চাইছে রাজ্য। এরপর এই পাথরের টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতি হবে। প্রকল্প ঘিরে পরিকল্পনা স্বচ্ছ করার দাবিও তোলেন তিনি।
শিল্প সম্মেলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রত্যেক বছর মোচ্ছব হয়। ভালো হচ্ছে বাংলার মিডিয়ার কাছে মেনু প্রকাশ করুক। ক্রোনি ক্যাপিটালের কাছে উজাড় করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু একটার পর একটা যে শিল্পের কথা বলা হয়েছে দেখা যাবে তার বাস্তবায়ন নেই।
আরেক প্রশ্নে সেলিম বলেন, বামফ্রন্ট সরকার প্রথম দশ বছরে পঞ্চায়েত, ভূমি সংস্কার, ফুড ফর ওয়ার্ক, রেশনের মাধ্যমে বহু মানুষকে দারিদ্রসীমার ওপরে তুলে আনতে পেরেছিল। জ্যোতি বসু সরকারের সময়ে সেই সাফল্য সবচেয়ে বেশি। এই তথ্য আন্তর্জাতিক স্তরেও স্বীকৃত।
MD Salim State Conference
আন্দোলনের পথ বেয়েই রাজ্য সম্মেলন, কর্মসূচি জানালেন সেলিম
×
Comments :0