Kuwait Fire

মেয়ের জন্মদিনে ফেরা হল না, দ্বারকেশ্বরের দেহ ফিরছে মেদিনীপুরে

রাজ্য

চিন্ময় কর- পশ্চিম মেদিনীপুর

কুয়েতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দা দ্বারিকেশ্বর পট্টনায়েকের (৫২) দেহ কখন আসবে সেই নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রাত জাগছে দাঁতনের গ্রাম। 
বুধবার ভোররাতে এমন ঘটনায় ৪২ ভারতীয়ের মৃত্যুতে রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার দাঁতন থানার খণ্ডরুই গ্রামে জন্মভিটে। তাঁর মেয়ের পড়াশোনার জন্য মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লীতে একটি বাড়ি বানান। গত চার বছর তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে মেদিনীপুর শহরেই থাকেন। যে সংস্থায় তিনি কাজ করতেন তারাই  অগ্নিকাণ্ডের খবর জানায় পরিবারকে। 
বুধবার ভোররাতে কুয়েতের রাজধানী শহরের দক্ষিণে মাঙ্গাফ এলাকার যে বহুতল আবাসনে আগুন লাগে, সেই আবাসনেই শতাধিক ভারতীয় শ্রমিকদের সঙ্গে ছিলেন দ্বারিকেশ্বরও। ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে ভারতীয় ৪২ জন।
শুক্রবার প্রশাসন জানায় যে মৃতদেহ রাত আটটার দিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে। পরে জানানো রাত দশটা নাগাদ দেহ মেদিনীপুরে আসতে পারে। রাজ্য বা কেন্দ্রের সরকার এবং প্রশাসনের গাফিলতিতে ক্ষুব্ধ পরিবার। মৃত দ্বারিকেশ্বর পট্টনায়েকের শ্বশুর কমলাকান্ত পট্টনায়েকের অভিযোগ, প্রশাসন যথেষ্ট তৎপর থাকেনি।
খবর পেয়ে দাঁতনের গ্রামে শোকের ছায়া যেমন তেমনি মেদিনীপুর শহরের শরৎপল্লীতেও প্রতিবেশীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।  
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত এক মাত্র মেয়ে ঐশী পট্টনায়কের জন্মদিন সেপ্টেম্বরে। সেই সময় বাড়ি ফেরার কথা ছিল দ্বারিকেশ্বরের। স্ত্রী অন্তরা পট্টনায়েক বলেন, ‘‘সব কিছু ত্যাগ করে বিদেশে ছিলেন। মেয়েকে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। আর কয়েকটা বছর পর বিদেশে থেকে দেশে ফিরে আসার কথা বলতেন। এত বড় বাড়ি মেদিনীপুর শহরে, অবসর সময় কাটাবেন বলে বানিয়ে ছিলেন। পাকাপাকি ভাবে দেশে ফিরবে কফিনবন্দি দেহ।’’
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আঠাশ বছর আগে কর্মসূত্রে প্রথমে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছিলেন দ্বারিকেশ্বর। সেখান থেকে বাহরিন এবং পরে কুয়েত। কুয়েতেই গত কুড়ি বছর ধরে একটি নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতেন তিনি। প্রমোশন পেয়ে এনবিটিসি নামক ওই সংস্থার সুপারভাইজার পদও পেয়েছিলেন। 
বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ সংস্থার তরফে নিশ্চিত করা হয় মৃতদের তালিকা। জানা যায়, মৃত ভারতীয়দের মধ্যে বেশিরভাগই কেরালার বাসিন্দা। এছাড়াও, তামিলনাড়ু, ওড়িশার কয়েকজন আছেন বলে জানা গেছে। 
মৃত দ্বারিকেশর পট্টনায়েকের শ্যালক সায়ন্তন পট্টনায়েক বলেন, ‘‘জামাইবাবু প্রতিদিন সকালে দিদিকে ফোন করতেন। বুধবার সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও ফোন করেননি! ফোনেও পাওয়া যাচ্ছিল না জামাইবাবুকে। এরপরই, জামাইবাবুর সহকর্মী, যিনি কেরালার বাসিন্দা, তাঁকে ফোন করে দিদি। কিন্তু উনি ছুটি নিয়ে নিজের বাড়ি এসেছেন। তিনিই কিছুক্ষণ পর খোঁজ নিয়ে দুর্ঘটনার কথা জানান এবং আমাদের টিভি দেখতে বলেন। তারপরই আমরা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করি। দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বলা হয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সকলকেই। তখন থেকেই আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃত্যু-সংবাদ দেওয়া হয়। দিদি, ভাগ্নীকে সামলানোই মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।
সায়ন্তন জানান, "শুক্রবার সংস্থার তরফে দেহ কলকাতা বিমানবন্দরে পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। ওখান থেকে আমরা গ্রামের বাড়িতে (খন্ডরুইয়ে) নিয়ে যাব। ওখানেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment