Israel-Gaza

শিশুদের লাশে ভোর হচ্ছে গাজায়

আন্তর্জাতিক

 রাষ্ট্রসঙ্ঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে পাত্তা না দিয়ে গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে বোমাবর্ষণ আরও তীব্র করেছে ইজরায়েল। রবিবার ভোরে গাজার বৃহত্তম হাসপাতাল আল শিফার কাছ ঘেঁষে ইজরায়েলী যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলা হয়েছে। এই হাসপাতালে উপচে পড়ছে আহতদের ভিড়। হাসপাতাল প্রাঙ্গণেই আশ্রয় নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এই হাসপাতাল কার্যত গাজার একমাত্র চিকিৎসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইজরায়েল চাইছে তা বন্ধ করতে। যে কোনও সময়ে এই হাসপাতালেই সরাসরি বোমাবর্ষণ হতে পারে। কোনও প্রমাণ ছাড়াই ইজরায়েল অভিযোগ করেছে, এই হাসপাতালে হামাসের একটি কম্যান্ড পোস্ট রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য দপ্তর এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, ইজরায়েল হাসপাতালে বোমা মারার আগে এই প্রচার তৈরি করছে। হাসপাতালে আশ্রয় নেওয়া মাহমুদ আল-সাওয়া বলেছেন, হাসপাতালে পৌঁছনো যাচ্ছে না। গোটা এলাকা ওরা বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাইছে। আল কুদ হাসপাতালের কাছেও ইজরায়েল বোমাবর্ষণ করেছে। 
গাজায় ইজরায়েলী আক্রমণে চিহ্নিত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০০৫। মৃতদের ৩৩৪২জন শিশু, ২০৬২ মহিলা। আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ঢুকে ইজরায়েলী সেনারা হত্যা করেছে ১১২জনকে। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘর্ষের দীর্ঘ ইতিহাসে এত মৃত্যু কখনও হয়নি। 
টর্চ নিয়ে উদ্ধার 
গাজায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রায় পুরোই বিচ্ছিন্ন। রাতে যখন ইজরায়েলী বোমাবর্ষণ চলছে তখন উদ্ধারের জন্য ভরসা টর্চ। সংবাদমাধ্যমের ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইজরায়েলী বোমায় বিধ্বস্ত বাড়ির মধ্যে ঢুকছেন প্রতিবেশীরা। খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। অধিকাংশই মৃত। চেষ্টা চলছে গোঙানি ও আর্তনাদ শুনে কাছাকাছি পৌঁছানোর। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে একজনের আর্তস্বর : আমার সব সন্তানকেই ওরা মেরে ফেলেছে, এখন আমি আর কোথায় যাব? সকালের আলো ফুটলে শিশুদের মৃতদেহ পরপর শুইয়ে রাখা হচ্ছে। সাংবাদিক আজাইজা এমনই একটি ভিডিও পাঠিয়ে ক্যাপশন লিখেছেন: ‘রান্দা, নাবিল, হাসান, লানার সকাল’। 
শুধু মৃত্যুর শংসাপত্র 
প্যালেস্তাইনের চিত্র সাংবাদিক বেলাল খালেদ সাদা চাদরে মোড়া এক শিশুর দেহের ছবি পাঠিয়েছেন। শিশুটির নাম দেওয়া হয়েছিল উদয় আবু মহসেন। জন্মেছিল শনিবার, ইজরায়েলী বোমায় মারা গেছে রবিবার। তার কাফনের ওপরে লেখা রয়েছে : ‘উদয় আবু মহসেনের বয়স এক দিন। তার জন্মের সার্টিফিকেট হয়নি কিন্তু মৃত্যুর সার্টিফিকেট হয়ে গেছে।’ 
সাহায্যের জন্য হাহাকার 
খাদ্য, ওষুধ, পানীয় জলের তীব্র হাহাকারের মুখে গাজায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাহায্য ভাণ্ডারে জোর করে ঢুকে পড়ছেন হাজার হাজার মানুষ। দেইর আল-বালায় এই ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই লক্ষণ মারাত্মক। তিন সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ চলার পরে গাজার মানুষ সন্ত্রস্ত, হতাশ, মরিয়া। বস্তুত মিশর সীমান্তের রাফা দিয়ে যেটুকু মানবিক সাহায্য আসছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। গাজার বিস্তীর্ণ অংশে তা পৌঁছে দেওয়ায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। শরণার্থী সংস্থার পক্ষ থেকে আশ্রয় শিবিরে তা পৌঁছে দেবার চেষ্টা চলছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, প্রত্যেক ঘণ্টায় গাজার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের আবেদন সত্ত্বেও মানবিক কারণে সংঘর্ষবিরতি না করে ইজরায়েল আক্রমণ তীব্র করছে। চোখের সামনে বিশ্ব দেখছে এক মানবিক বিপর্যয়। 
বন্দি বিনিময়ে রাজি 
গাজায় হামাসের শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এদিন বলেছেন, অবিলম্বে সমস্ত বন্দিকে মুক্তি দিতে হামাস প্রস্তুত রয়েছে। বিনিময়ে ইজরায়েলের জেলে যে হাজার হাজার প্যালেস্তিনীয় বন্দি রয়েছেন তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। উল্লেখ্য, ইজরায়েলের জেলে প্রায় ৫ হাজার প্যালেস্তিনীয় বন্দি রয়েছেন। সংঘর্ষ শুরু হবার পরে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও জেনিন থেকে কয়েকশত প্যালেস্তিনীয়কে আটক করেছে ইজরায়েলী সেনারা। এমনকি বালকদেরও বন্দুকের মুখে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, প্যালেস্তিনীয় যুবক ও নাবালকদের এভাবে অপহরণ ও বন্দি করে চাপ তৈরি করছে ইজরায়েল। 
সংঘর্ষ চলছে 
ইজরায়েল যুদ্ধের প্রসার ঘটানোর কথা বলেই গাজার মাটিতে স্থল বাহিনী পাঠিয়েছে। তারা গোলাবর্ষণও করছে। কিন্তু প্রতিরোধের মুখেও পড়তে হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম গাজায় ইজরায়েলী সাঁজোয়া গাড়ি লক্ষ্যে করে পালটা আক্রমণ চালিয়েছে হামাস। এরেজে মুখোমুখি সংঘাতে ইজরায়েলী বাহিনী এগতে পারেনি। ইজরায়েলের দুটি ট্যাঙ্ক উড়িয়ে দিয়েছে প্যালেস্তিনীয় বাহিনী।
 

Comments :0

Login to leave a comment