Mizoram bridge collapse

শোকস্তব্ধ মালদহের গ্রামে ফিরল ১৮ দেহ

রাজ্য

Mizoram bridge collapse

গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে কেউ স্বামী, কেউ সন্তান কেউ বাবা বা ভাইয়ের দেহ হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় দুর্বিষহ প্রতিটা মুহূর্ত কাটাচ্ছিলেন। মালদহ জেলার রতুয়া থেকে ইংরেজবাজার, গাজোল থেকে কালিয়াচকের গ্রাম নিদ্রাহীন দু’রাত কাটিয়েছে।
অবশেষে শুক্রবার রাত ৯টার কিছু পরে সেই মিজোরামের সাইরঙ থেকে কফিনবন্দি হয়ে ফিরলো মালদহ জেলার ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিকের দেহ। মিজোরামে রেলসেতু ভেঙে মালদহের ২৩জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। ২২ জনের দেহ উদ্ধার হলেও রতুয়ার চৌদুয়ার গ্রামের বাসিন্দা সেনাউলের দেহ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি। এদিন দুপুর দেড়টা নাগদ সেনাবাহিনী আইজল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে ভেঙে পড়া রেলসেতুর ধ্বংসস্তূপ থেকে সেনাউলের দেহ উদ্ধার করে। বৃহস্পতিবার সকালে সাইরঙ থেকে অ্যাম্বুলেন্স করে মিজোরাম প্রশাসন ১৮ জনের দেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করে। শিলচর থেকে তা এদিন রাতে মালদহে পৌঁছায়। আরো চারটি দেহ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে অ্যাম্বুলেন্স রওনা দিয়েছে। তা পৌঁছাবে শনিবার। আর সেনাউলের দেহ গ্রামে রবিবার পৌঁছানোর কথা।

এদিন দুপুর থেকে রতুয়ার চৌদুয়ার গ্রামে হাজারও মানুষ জড়ো হন। এই চৌদুয়ার গ্রামের একটি পাড়ারই ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে মিজোরামের রেল সেতু দুর্ঘটনায়। রতুয়ার কুতুবগঞ্জ, সুলতানগঞ্জ, কোকরামারি, নাগরাই, পরাণপুর গ্রামেরও বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি জায়গাতেই মৃতদের বাড়ির সামনে জড়ো হন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। অপেক্ষার অবসান হয় রাত ৯টা নাগাদ। একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে শুরু করে গ্রামে। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। সাইদুর রহমানের পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। বাবা-ছেলে একই সঙ্গে মিজোরামে নির্মাণকাজে গিয়েছিলেন। একই পাড়ার ১১ জনকে হারিয়ে শোকে বাক্‌রুদ্ধ গোটা চৌদুয়ার গ্রাম। রাত ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ সেখানে পৌঁছায় দেহ। রাতেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
তার আগে এদিন দুপুরে রতুয়ার চৌদুয়ার গ্রামে মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের উপস্থিতিতে রেল আধিকারিকরা মৃতদের পরিবারের ১০ লক্ষ টাকা (নগদ ৫০ হাজার টাকা ও সাড়ে নয় লক্ষ টাকা চেকে) তুলে দেন।
এদিন সকালেই রাজ্যপালের বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে করে মালদহে আসার কথা ছিল। সকালে হাওড়া স্টেশনে বন্দে ভারতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেওয়ায় বিকল্প একটি ট্রেনে ১১টা ৪০ নাগাদ তিনি মালদহে আসেন। সেখান থেকে এরপরে রতুয়ায় যান রাজ্যপাল। মৃতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। এপরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, ‘‘এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে তাই দেখতে হবে আমাদের সকলকে। আমরা মৃত প্রতিটি পরিবারের শ্রমিকদের পাশে আছি। রেল দপ্তরের তরফে নিহত শ্রমিকদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহতদের ২০ লক্ষ টাকা ও অল্পবিস্তর আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের কল্যাণে সবাইকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।’’
সিপিআই(এম) ও সিআইটিইউ নেতৃবৃন্দ গত বুধবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই কখনও রতুয়া কখনও ইংরেজবাজারে মৃতদের গ্রামে গিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক সদস্যের চাকরির দাবি তুলেছেন। যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী চপ-ঘুগনির দোকান দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তা যে আসলে গ্রামের কর্মসংস্থান ও কাজের আকালের নিদারুণ বাস্তবতাকে লঘু করে দেওয়ার চেষ্টা, তাও স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ।

এদিন বিকাল থেকেই রতুয়ার চৌদুয়ার গ্রামে হাজির ছিলেন সিআইটিইউ’র জেলা সভাপতি প্রণব দাস, সম্পাদক দেবজ্যোতি সিনহা, পরিযায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক কামাল সেখ, রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের জেলা সভাপতি নুরুল ইসলাম, কৃষকসভার জেলা সম্পাদক প্রণব চৌধুরি, রতুয়া-২ এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুন্তল চ্যাটার্জি, ভুবন চন্দ্র কুমার, চৈতন্য মণ্ডল, শেখ তাবরেজ, তাপস মিশ্র, দীপঙ্কর ঘোষ প্রমুখ। 
মৃত ২৩ জনের মধ্য এই রতুয়া-২ নম্বর ব্লকে ১৬ জন। ইংরেজবাজারের সাত্তারি গ্রামের পাঁচজন যুবকের মৃত্য হয়েছে। গাজোলে আলিনগর গ্রামে একজনের ও কালিয়াচক-১ নম্বর ব্লকের ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment