মোদীর হাতেই নির্বাচন কমিশন বেছে নেওয়ার ক্ষমতা রাখতে বিরোধীদের তাড়িয়ে দিয়ে সংসদে যে আইন পাশ করিয়েছে কেন্দ্র, তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই এবার মামলা হলো সুপ্রিম কোর্টে। শীতকালীন অধিবেশনে বিরোধী মুক্ত সংসদে হট্টগোলের মধ্যে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার নিয়োগের নয়া বিল পাশ হয়েছে। বিলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গত ২৮ ডিসেম্বর নয়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনের গেজেট নোটিফিকেশনও হয়ে গিয়েছে। মধ্য প্রদেশের কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুর মঙ্গলবার নয়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন বাতিল করার আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের করলেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে দেশে নির্বাচন কমিশনার বাছলে আর কোনও নিরপেক্ষতাই থাকবে না। তাই অবিলম্বে এই আইন বাতিলেরই আরজি রেখেছেন ঠাকুর।
ঠাকুর তাঁর আবেদনে জানিয়েছেন, কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের নয়া আইন সংবিধানের ৭এবং ৮ধারাকে সরাসরি লঙ্ঘন করেছে। এই নয়া আইনে দেশের সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন বিপন্ন হবে। তিনি জানান, নয়া আইনে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা কেন্দ্র নিজের হাতে কুক্ষিগত করেছে। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে কোনও নিরপেক্ষতা থাকবে না। তাই এই আইন বাতিলের আবেদন জানান ঠাকুর। ঠাকুরের আইনজীবী গোপাল সিং জানান, নয়া আইনে নির্বাচনার কমিশনার নিয়োগের স্বাধীন ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মোদী সরকার চিফ ইলেকশন কমিশনার অ্যান্ড আদার ইলেকশন কমিশনার্স (অ্যাপয়েনমেন্ট কনডিশন্স অব সার্ভিস অ্যান্ড টার্মস অব অফিস) বিল পাশ করিয়ে বদল করেছে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সব নিয়মকানুন। আগে কমিশনার নিয়োগ প্রক্রিয়ায়, প্রধানমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে ছিল মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সিলেকশন কমিটি। এবারে সংশোধন এনে পুরানো সিলেকশন কমিটির কাঠামো পুরো বদলে দেওয়া হলো। সিলেকশন কমিটি থেকে সরাসরি বাদ দেওয়া হলো প্রধান বিচারপতিকে। সেখানে এবারে নয়া সিলেকশন কমিটিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা। স্বাভাবিক ভাবেই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে চূড়ান্ত ক্ষমতা মোদী বা প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকছে। স্বাভাবিক ভাবে এতে শাসক দলের হাতে থাকছে তাদের পছন্দ মতো নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ ও নির্বাচন পরিচালনার যাবতীয় ক্ষমতা। দেশে ভোট পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত ভাবেই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এদিকে সিলেকশন কমিটি ছাড়াও প্রার্থী বাছাই করতে সার্চ কমিটি নিয়ন্ত্রণে বদল আনা হয়েছে নয়া নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনে। সিলেকশন কমিটি যে সার্চ কমিটির প্যানেল থেকে নাম স্থির করবে, সেই সার্চ কমিটি গঠনের রাশও শাসক দলের হাতে রাখা হয়েছে। আইনে আগে বলা ছিল, ক্যাবিনেট সচিবের নেতৃত্বে সার্চ কমিটি তার প্যানেলের নাম তৈরি করবে। এবারে আইন বদলে ক্যাবিনেট সচিবকে সরিয়ে দিয়ে আইন মন্ত্রীর নেতৃত্বে সার্চ কমিটি তৈরির ব্যবস্থা করা হলো। কমিটিতে আরও থাকবেন আইন মন্ত্রীরই পছন্দ মতো দু’জন সচিব পর্যায়ের অফিসার। মোট তিন জনের এই সার্চ কমিটি সম্ভাব্য নির্বাচন কমিশনারদের নাম স্থির করবে। এদিকে নির্বাচন কমিশনার অপসারণের নিয়মেও বদল আনা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অপসারণের নিয়মকেই নির্বাচন কমিশনার অপসারণের ক্ষেত্রে চালু করা হচ্ছে নয়া আইনে। নির্বাচন কমিশনারদের আইনি সুরক্ষাও বাড়ানো হয়েছে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, নির্বাচন চলাকালীন তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা দায়ের করা যাবে না। সেই সঙ্গে প্রশাসনিক স্তরে নির্বাচন কমিশনারের পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির সমতুল্য হবে। কমিশনাররা বিচারপতিদের মতোই বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলে নয়া আইনে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
Supreme Court
নয়া নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা সুপ্রিম কোর্টে
×
Comments :0