Electricity bill

গ্রামীণ সম্পদ তৈরির টাকায় মেটানো হবে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল

রাজ্য

গ্রামের পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতের টাকায় মেটানো হবে পঞ্চায়েতের বিপুল পরিমাণ বকেয়া বিদ্যুৎ বিল!
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল টাকা রাজ্যের ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েতে পড়ে আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ করা টাকায় এখন রাজ্যে পঞ্চায়েত এলাকায় বিদ্যুতের বিল মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। রাজ্যে ১৫ মাস ধরে ১০০ দিনের কাজ বন্ধ পড়ে আছে। আবাস যোজনায় টাকা দেয়নি কেন্দ্র। ক্ষোভ জানিয়ে এক সপ্তাহ পর কলকাতায় ধরনায় বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। অথচ রাজ্যের গ্রামীণ পরিকাঠামো খাতের টাকায় কর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি না করে বিদ্যুৎ বিল মেটাবে রাজ্য সরকার।
১০০দিনের কাজের টাকা বন্ধ হওয়ার পর থেকে জেলা সফরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় গ্রামীণ রাস্তা উন্নয়নে জোর দিতে বলেছিলেন। কিন্তু রাস্তা ছেড়ে পঞ্চায়েত দপ্তরই এখন বিদ্যুৎ পুড়িয়ে সম্পদ সৃষ্টির টাকায় বিলের খরচ মেটাবে। 
পঞ্চায়েত দপ্তরের বিশেষ সচিব সপ্তাহ আগে রাজ্যের সব জেলাশাসকদের কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতেই জেলাশাসকদের বলা হয়েছে, আপনার জেলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে আছে। ওই বিদ্যুৎ বিল মেটানোর পথ কী? জেলাশাসকদের জানানো হয়েছে,  কেন্দ্রীয় সরকারে পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের বিপুল টাকা জেলায় পড়ে আছে। ওই টাকা দিয়েই মিটিয়ে দিতে হবে বকেয়া বিদ্যুতের বিল। 
রাজ্যে এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ দপ্তরের কাছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। পৌরসভাগুলির কাছ থেকে বিদ্যুত বিলের বকেয়ার পরিমাণ এখন ৩১৮ কোটি টাকা। পঞ্চায়েত ও পৌরসভা মিলিয়ে প্রায় ৬৬৮ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। বিপুল এই বকেয়া থাকার কারণে বেশ কয়েক দফায় ডব্লিউবিএসইডিসিএল (ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশান কোম্পানি লিমিটেড)- এর তরফ থেকে পঞ্চায়েত দপ্তরে বিল মিটিয়ে দেওয়ার চিঠি গেছে। বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া থাকায় বণ্টন কোম্পানির কোষাগারে চাপ বাড়ছে। তার থেকেই বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির উদ্বেগ ছিল, এই আর্থিক দায়ভার না কাটাতে পারলে আগামীদিনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ঋণ ও অর্থ সাহায্য দু’টি পেতে সমস্যায় পড়বে কোম্পানি।  এখন সেই বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের টাকা মেটানোর জন্য রাজ্য সরকার পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের পাঠানো ‘আনটায়েড’ খাতের টাকা খরচ করার নির্দেশ দিয়েছে। 
পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের দুই পদ্ধতিতে টাকা আসে প্রতিটি রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে। ‘টায়েড’ খাতের টাকায় গ্রামীণ এলাকার রাস্তাঘাট, পানীয় জল, জল পরিশোধন ও নিকাশি সহ পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে খরচ করার কথা। একইভাবে ‘আনটায়েড’ খাতের টাকাও কোনও কাজে খরচ করা যাবে, তার গাইডলাইন আছে। মূলত পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশপাশি জন পরিষেবার কথা উল্লেখ করে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে খরচের কথা বলা আছে। তবে তা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ খরচের কথা জানানো আছে। কিন্তু পঞ্চায়েত দপ্তরের তরফ থেকে পাঠানো চিঠিতে অর্থ কমিশনের নিয়মকে কোনও তোয়াক্কা করা হয়নি। বিধি ভঙ্গ করেই কেন্দ্রের অর্থ কমিশনের টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল মেটানোর জন্য জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘ এমনিতেই ১০০দিনের কাজ, আবাস যোজনার দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রের নজরদারিতে আছে রাজ্য। অর্থ কমিশনের টাকা খরচ নিয়ে এখনও চোখ পড়েনি কেন্দ্রীয় সরকারের। এরপর অর্থ কমিশনের টাকা খরচ কীভাবে হচ্ছে তা কেন্দ্রীয় সরকার তদন্ত শুরু করলে রাজ্যের বিপদ বাড়বে।’’ 
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চায়েতে মানুষের অধিকার কেড়ে সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে বেছে নিয়েছিল প্রসাধনী উন্নয়নকে। তাই এক, একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ২০০ থেকে ৩০০বাতিস্তম্ভ বসিয়ে জ্বালানো হয়েছে আলো। অতীতে এই বাতিস্তম্ভে কোনও মিটার সংযোগ ছিল না। কিন্তু ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি গ্রামের সমস্ত বাতিস্তম্ভের সঙ্গে মিটার সংযোগ করে নেয়। তারপর থেকেই দফায়, দফায় বাড়তে থাকে বিদ্যুৎ বিল। 
রাজ্যে অতীতে কখনও বিদ্যুৎ বিল মেটানোর জন্য অর্থ কমিশনের টাকা খরচ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয়নি। কারণ, অতীতে রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের টাকা খরচ করে মেটানো হত জন পরিষেবার খাতে ব্যয়। গত এক দশকে এরাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে শাসক দল। কর আদায়ের ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে পঞ্চায়েতের আয় বাড়ানোর পথকে আটকে দিয়ে বিপুল খরচ বাড়ানো হয়েছে। যার অবধারিত প্রভাব পড়েছে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায়। গ্রাম পঞ্চায়েত জমি, বাড়ি, বাড়ি তৈরির অনুমোদন, ট্রেড লাইসেন্স, পঞ্চায়েত এলাকায় ফেরি সার্ভিস সহ প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ক্ষেত্র থেকে কর আদায় করার ক্ষমতা দেওয়া আছে। স্থানীয় সরকার হিসাবে গ্রাম পঞ্চায়েত ‘বাই-ল’ তৈরি করে আয় বাড়াতে পারে। পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাধারণসভা থেকে আয় বাড়ানোর ‘বাই-ল’ তৈরি করে তা অনুমোদন করাতে হয় গ্রামসভার বৈঠকে। এরাজ্যে মমতা ব্যানার্জির আমলে গ্রাম সংসদসভা, গ্রামসভাই উঠে গেছে। ফলে সরকার এখন বাধ্য হয়ে অর্থ কমিশনের টাকা দিয়ে মেটাবে বিদ্যুতের বিল।

Comments :0

Login to leave a comment