RANI RASHMONI RALLY CPI(M)

‘মাথা উঁচু করেই লড়ব, বাংলা বাঁচাতে’: ঘোষণা সমাবেশে

রাজ্য কলকাতা

RANI RASHMONI RALLY CPIM সোমবার রানি রাসমণি রোডের সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন দেবলীনা হেমব্রম। (নিচে) কল্লোল মজুমদার।

‘‘টানা ৩৪ বছর সরকার চালিয়েছে বামফ্রন্ট। কোনও মন্ত্রী বা নেতাকে চুরির দায়ে হিড়হিড় করে টেনে তোলার সাহস দেখাতে পারেনি কোনও সিবিআই। যতই হামলা হোক এই সত্যি মুছে দেওয়া যাবে না। মাথা উঁচু করেই লড়বে বামপন্থীরা।’’ 

বক্তা দেবলীনা হেমব্রম। সোমবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ সমাবেশ তখন ফেটে পড়ছে স্লোগানে। সিপিআই(এম)’র এই কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য তখন মনে করাচ্ছেন যে ‘পরিবর্তন’ নিজে নিজেই আসেনি।  একের পর এক খুন, বামপন্থী কর্মীদের লাশ, ঘরছাড়া করার পর্ব চালানো হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়। তারপরই জুড়েছেন, ‘‘আমরা ভুলে যাইনি। হিসেব রেখেছি। হিসেব রেখেছেন মানুষ, সারা পশ্চিবঙ্গ তৈরি হচ্ছে জবাব দিতে।’’  

সে প্রস্তুতি কলকাতা শহরে, গ্রামে কিভাবে খানিক আগেই ব্যাখ্যা করেছেন কল্লোল মজুমদারও। সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক বলেছেন রাজনৈতিক প্রেক্ষিতও। পার্টির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এই সদস্য বলেছেন, ‘‘জেলে শিক্ষামন্ত্রী। ঘনিষ্ঠের ফ্ল্যাট থেকে বেরচ্ছে নগদ ৫০ কোটি টাকা। গার্ডেনরিচে ছোট এক ব্যবসায়ীর খাটের তলা থেকে বেরচ্ছে ১৮ কোটি টাকা। আর রাজ্যের মন্ত্রী, কলকাতার মেয়র ফিরাদ হাকিম বলছেন এসব চললে কেউ রাজ্যে ব্যবসা করতে আসবে না। কেমন মন্ত্রীর মেধা!’’  

রাজনীতিকে দুর্নীতিতে, দুর্বৃত্তায়নে ছেয়ে ফেলার আয়োজন ব্যাখ্যা করেছেন মজুমদার। বলেছেন, ‘‘বিজেপি সরকার চালু করেছে নির্বাচনী বন্ড। কর্পোরেট টাকা দেবে কিন্তু জনগণ জানবেন না। এই অস্বচ্ছ পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী বিজেপি। তারপরই রয়েছে এ রাজ্যের তৃণমূল।’’  

মানুষ কী বলছেন?

মজুমদার বলেছেন, ‘‘আমরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি। মহল্লায়-পাড়ায় অনেকেই বলছেন তৃণমূল দলটা আর টিকবে না। এই সরকার থাকবে না। আপনারা হয়তো কিছু ভুল করেছেন। কিন্তু বাংলার এই অবস্থা ছিল না।’’

কোন অবস্থা? 

যে বাংলায় শিক্ষক সম্মান পান না। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচিত ছাত্র-সংসদ থাকে না। কাজ নেই। দলে দলে গ্রাম থেকে, শহর থেকে যুবরা চলে যাচ্ছেন বাইরে। মজুমদার বলেছেন, ‘‘প্রতিবাদ তাই সর্বত্র। আর ঠিক তাই তৃণমূল কংগ্রেসের এখন সবচেয়ে বড় ভরসা পুলিশ। আমরা মানুষের পক্ষে বাংলার পক্ষে কর্মসূচি নেবই। রাস্তায় নামবই। পুলিশের ভরসা ছাড়া তৃণমূলের আর কিছু নেই। পুলিশের চোখরাঙানি থাকবে, চোখে চোখ রেখেই চলবে কর্মসূচি। খড়কুটোর মতো উড়ে যাবে তৃণমূল।’’  

আর বিজেপি। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ সজোরে বলেছেন, মানুষের হয়ে প্রকৃত বিরোধী বামপন্থীরাই। হেমব্রম বলেছেন, ‘‘বিজেপি কী? ‘আগে রাম পরে বাম’ কথা ছড়ানো হয়েছিল। মিডিয়া সহায়তা করেছিল। বিজেপি মানে বিভাজন। দেশ বিক্রি করছে। মানুষকে দেউলিয়া করছে।’’ 

মজুমদার বলেছেন, ‘‘কেরোসিন ১০০ টাকা, গ্যাস হাজার টাকা ছাড়িয়ে। ব্যাঙ্ক, বিমা, শিল্প, কৃষি সব ধান্দাবাজ কর্পোরেটকে লুটের জন্য খুলে দিচ্ছে বিজেপি। এদের বড় অস্ত্র মানুষের ঐক্যকে ভেঙে দিতে পারে। ফলে আরও বড় দায়িত্ব আমাদের।’’ 

তিনি নির্দিষ্ট করেছেন, আন্দোলনের পথ ধরেই আরও বড় দায়িত্ব নিতে হবে বামপন্থীদের। বাড়াতে হবে বৃত্ত। আরও শক্তিকে টেনে আনতে হবে একজোটে প্রতিরোধের ময়দানে। তাই প্রস্তুতি কেবল একটি বড় জমায়েতে হচ্ছে না। চলছে পাড়ায়-মহল্লায় লাগাতার কর্মসূচি, মানুষের কাছে পৌঁছানো। মজুমদার বলেছেন, ‘‘বহু মানুষ নৈতিক, আর্থিকভাবে সঙ্গে না থাকলে এ কাজ করা সম্ভব হতো না।’’  

 হেমব্রম এবং মজুমদার দু’জনেই মনে করিয়েছেন দায়িত্ব। আরও বড় সংগ্রাম, আরও সাহস, আত্মত্যাগ করতে হবে। দেবলীনা হেমব্রম বলছেন, ‘‘আমাদের পকেট ভরার মোহ নেই। আমরা রাজ্যকে বাঁচাতে চাই। সংগঠিত হতে হবে আরও বেশি করে। আমরা পারব।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment