ফের এক প্রতিবন্ধী ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা পিংলায়। শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাসে অবরুদ্ধ এই পিংলাতে গত আট মাসে এই নিয়ে চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটল। তার মধ্যে দুটি ক্ষেত্রেই প্রতিবন্ধী কিশোরীর উপর এমন বর্বরোচিত ঘটনা। প্রতিটি ঘটনাতেই অভিযুক্ত মমতা ব্যানার্জির দলের বেপরোয়া উন্মত্ত বাহিনী।
প্রতিবন্ধী স্কুল ছাত্রীর ওপর এই বিকৃত লালসার ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার রাতে। পিংলার থানা এলাকার এক গ্রামে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে হাট থেকে ফেরার পর ঘটনাটি জানতে পারেন নির্যাতিতা ঐ প্রতিবন্ধী যুবতীর মা। রক্তাক্ত, সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ঘরের মধ্যে মেয়েকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সেই অবস্থায় মেয়েকে ঘর থেকে কোনমতে বের করে পিংলা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর মা। পরে ঐ প্রতিবন্ধী, একাদশ শ্রেণির ছাত্রীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এদিনও হাসপাতালে সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণায় কাহিল হয়ে পড়েন বারে বারে। পরিবারের সদস্যরাই কোনমতে নিজেরাই কোলে করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। রোগী নিয়ে যাওয়ার কোনও ট্রলিও পাওয়া যায়নি এই হাসপাতালে।
এই পিংলা থানায় এর আগেও এক প্রতিবন্ধী যুবতীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেছিল তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য অভিজিৎ মণ্ডল সেই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিল। পিংলাতেই এক খেতমজুর দলিত গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ সহ খুনের ঘটনাও ঘটে গত ১৯ এপ্রিল । এই ঘটনায় তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীরা জড়িত ছিল এবং গ্রেপ্তার ও জেল হয়। গত আট মাসে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ধর্ষণের ১৩টি ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা তিনটি।
পরিবারের সদস্য সহ প্রতিবেশীদের বক্তব্যে জানা যায় মঙ্গলবার নির্যাতিতার মা বিকেল তিনটের সময় ঘর থেকে বেরোন। বাবা পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে থাকেন। ঘরে ঐ প্রতিবন্ধী কিশোরী একাই ছিলেন। মা হাটে গিয়ে ছিলেন ঘরের বাজার করতে। ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ঘরে এসে দেখেন মেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে। চোখে মুখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সমস্ত ঘটনা মাকে জানান।
অভিযুক্ত গ্রামেরই যুবক আহম্মদুল্লা খান। গ্রামে তৃণমূলী মাতব্বরদের গ্রাম কমিটির সদস্য। গ্রাম কমিটির সভা হলে এই তৃণমূলের তরফে এই যুবকের দায়িত্ব সকলকে খবর দেওয়ায়। জানা যায় মঙ্গলবার সন্ধ্যার মুখে ঐ প্রতিবন্ধী ছাত্রীর বাড়িতে একটা খাতায় সই করাতে এসেছিল অভিযু্ক্ত আহম্মদুল্লা খান। বাড়িতে অন্য কেউ না থাকায় যুবকটি জোর করে ঘরে ঢুকে বলে খাতায় সই করে দিতে হবে এবং বুধবার গ্রাম কমিটির সভা হবে সেটা যেন তার মা-কে বলে দেয়। এরপরে ঘরের মধ্যেই প্রতিবন্ধী ছাত্রীর ওপর অত্যাচার চালায়। একসময় সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তারপরেও অত্যাচার চলে। ঐ যুবকের সঙ্গে আরও কেউ ছিল কিনা সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানাতে চায়নি।
এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই গ্রামের তৃণমূলী মাতব্বররা নিজেদের মধ্যে সালিশি সভা করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু গ্রামে জনরোষের চেহারা দেখে পিছিয়ে যায় তৃণমূলী নেতারা। ক্ষুব্ধ, উত্তেজিত গ্রামবাসীর ঐ যুবকের বাড়ি ঘেরাও করে তাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। রাত নটার সময়ে গ্রামে পুলিশ যায়। গ্রামবাসীদের চাপে ঐ যুবককে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে। বুধবার মেদিনীপুর আদালতে অভিযুক্ত যুবককে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দেন।
এমন বর্বরোচিত ঘটনাকে আড়াল করার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে গ্রামের তৃণমূল নেতারা। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষজন, মহিলা সমিতির নেতৃত্ব তৎপর হওয়ায়, পুলিশ প্রশাসনকে চাপ দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে।
Comments :0