গুজরাট বানিয়েছেন তিনি নিজে। এই সুরেই নিজের আত্মপ্রচারে মগ্ন হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার কাপরাদায় বিজেপি’র নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। মোদী বলেন, ‘‘প্রত্যেক গুজরাটি আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, প্রত্যেক গুজরাটি সরব। তাঁদের স্বরে অন্তরের কথাই উঠে আসে। আমি এই গুজরাট তৈরি করেছি।’’
নির্বাচনী বিধিনিষেধ চালু হওয়ার পর এটাই প্রথম জনসভা মোদীর। ডিসেম্বরের ১ ও ৫ তারিখ ভোট গুজরাটে। ফল ঘোষণা ৮ ডিসেম্বর। ওই দিনই ঘোষণা হবে হিমাচল প্রদেশের ফলও। কিন্তু গুজরাটে ভোটের দিন পরে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে নির্বাচনী বিধিনিষেধ জারি হয়েছে হিমাচল প্রদেশের পরে। সেই সুযোগে টানা সরকারি অনুষ্ঠানে একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মোদী।
বালসাদ জেলার কাপ্রাদা বিধানসভা কেন্দ্র আদিবাসী প্রধান অঞ্চল। এই নির্বাচনে আদিবাসীদের সমর্থনের দিকে বিশেষ জোর দিয়েছে বিজেপি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রায় দু’দশক ধরে গুজরাটের ক্ষমতায় বিজেপি থাকলেও আদিবাসী ভোটে কংগ্রেসের দখল সমীহ করার মতো। আদিবাসী এলাকায় উচ্ছেদজনিত কারণে ক্ষোভ রয়েছে। ক্ষোভ রয়েছে আর্থিক সঙ্কটে থাকা বহু অংশের। গুজরাটে বিজেপি সরকারের স্বৈরাচারেও ক্ষোভ কম নয়। এদিন মঞ্চ থেকে বাস্তবের ঠিক উলটো ভাষ্য তৈরি করতে চেয়েছেন মোদী। সরবে, এমনকি দল হিসেবে বিজেপি-ও নয়, তুলে ধরতে চেয়েছেন নিজেকে।
মোদীর ভাষণের পর শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ- আদৌ কতটা নিজের কথা বলতে পারেন গুজরাটের মানুষ। ফের প্রশ্ন উঠেছে ‘গুজরাট মডেল’ নিয়েও। ২০০২’তে সংখ্যালঘু গণহত্যার সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের সময় গরিব বস্তি এলাকা ঢাকতে অস্থায়ী দেওয়াল তৈরি হয়েছিল। রোজগার, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ দেশের আর প্রান্তের মতো রয়েছে এরাজ্যেও।
বিভিন্ন অংশই মনে করিয়েছে যে মুসলিম সংখ্যালঘুদের কার্যত দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করে রাখার লক্ষ্যে শাসন কেড়েছে সব অংশেরই নাগরিক অধিকার। উঠে এসেছে কোভিডে অব্যবস্থার স্মৃতিও। সত্য সামনে এলে কন্ঠরোধের বহু নজির আলোচনায় উঠেছে। কোভিড মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে কারচুপির তথ্য সামনে আনায় ‘দৈনিক ভাস্কর’ ও ‘ভারত সমাচার’ পত্রিকার অফিসে আয়কর দপ্তর হানা দেয়।
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি স্থাপনের জন্য নর্মদা জেলায় প্রায় ৫ হাজার আদিবাসী পরিবারকে। বিশ্বের উচ্চতম মূর্তি বানাতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঝয়েছে ১৬টি আদিবাসী গ্রাম। ৭৫ হাজার মানুষ যাঁরা বনবস্তিতে থাকতেন, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। এই অভিযোগে বারবার আন্দোলনে নেমেছেন আদিবাসীরা আদিবাসীরা। কিন্তু আন্দোলন যাতে প্রতিহত করা যায় সে কারনে গুজরাট সরকার ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড টুরিজম গভর্ন্যান্স’ আইন চালু করেছিল। প্রতিবাদীদের বক্তব্য, উন্নয়নের নামে যেভাবে হোক আদিবাসীদের জমি নেওয়ার এই আইন। জল, জঙ্গল, জমির অধিকার কেড়ে বাস্তুতন্ত্রও ধ্বংসের এই গুজরাটও মোদীর হাতেই তৈরি।
কেমন গুজরাট তৈরি করেছেন মোদী? তুলনায় এসেছে প্রতিবাদী তিস্তা শেতলবাদের জেল এবং বিলকিস বানো ধর্ষণে সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তির প্রসঙ্গও। বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে মুক্তির ব্যবস্থা করে কেন্দ্র এবং রাজ্যে বিজেপি’র সরকার।
বিরোধী কংগ্রেসকে ‘বিভাজনের শক্তি’ আখ্যা দিয়েছেন মোদী। তিনি বলেছেন, ‘‘গত কুড়ি বছর ধরে এরা গুজরাটের বদনাম করেছে। মানুষ সহ্য করবে না।’’
Comments :0