Poonch Eid

ধূমধাম নয়, নমাজ করেই ঈদ পালন সাঙ্গিওতে

জাতীয়

Poonch Eid


সীমান্তের সেই গ্রামে এদিন না ছিল আনন্দ, না ছিল কোনও উৎসবের ধূমধাম। স্রেফ নমাজ পড়েই যে যাঁর ঘরে ফিরে গিয়েছেন ওঁরা। এমন শোকের মুহূর্তে কি উৎসবের মেজাজ আসে?
মাত্র সাড়ে তিন হাজার মানুষের বসবাস জম্মুর পুঞ্চ জেলার রাজৌরি সেক্টরের ছোট্ট গ্রাম সাঙ্গিওত-তে। ওই গ্রাম শনিবার ঈদ পালন করেনি নিহত জওয়ানদের স্মরণে। ‘‘আমরা এবার আড়ম্বর করে ঈদ পালন করিনি। শুধু নমাজ হয়েছে। জওয়ানদের মৃত্যুতে গোটা গ্রাম শোকস্তব্ধ। ওঁরা তো বৃহস্পতিবার এই গ্রামের জন্যই ইফতারের সরঞ্জাম ট্রাকে চাপিয়ে নিয়ে আসছিলেন,’’ সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে ঘরে বসেই মোবাইলে বেদনাভরা কন্ঠে কথাগুলি বলছিলেন সাঙ্গিওতের সরপঞ্চ মুখতিয়ার খান। সেদিনের নৃশংস সন্ত্রাসবাদী হানার নিন্দা করে মুখতিয়ার বললেন, ‘‘গোটা গ্রামের মুসলিম জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এবার কোনও ঈদ পালন করা হবে না। শুধু নমাজ হবে। নিহত জোয়ানদের স্মরণে আমরা বিশেষ নমাজও করি।’’


সেদিন ট্রাকে ফল, সবজি সহ ইফতারের অন্যান্য সরঞ্জাম চড়িয়ে ভারতীয় জওয়ানরা যাচ্ছিলেন সাঙ্গিওতে। গ্রেনেড হানায় প্রাণ হারান পাঁচ জওয়ান। ভীম্বার গলি ছাউনি থেকে ওইসব জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার সময় ভাটা দুঁরিয়ায় সন্ত্রাসবাদী হামলার কবলে পড়ে জওয়ানদের ট্রাক। জওয়ানরা ছিলেন রাষ্ট্রীয় রাইফেলস্‌’র, তাঁরা সন্ত্রাসবাদী মোকাবিলা অভিযানে যুক্ত ছিলেন। ‘‘গোটা গ্রাম এদিন সেনাবাহিনীর পাশে থাকার অঙ্গীকার নেয়,’’ মুখতিয়ার একথা জানিয়ে বলেন, ‘‘এদিন নমাজের পর আমরা যে যার বাড়িতে চলে যাই। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া, মিষ্টি বিলি করা, নতুন জামাকাপড় পরা কিংবা বাড়ির ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার মতো আনন্দ অনুষ্ঠান এবার আমরা বর্জন করেছি।’’ ওই গ্রামেরই বাসিন্দা আমির খান জানালেন, ‘‘সেদিনের সন্ত্রাসবাদী হানার পরে আমরা শোকসভা করি। সন্ত্রাসবাদী হানার তীব্র ভাষায় নিন্দা করে আমরা সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি যে, এবার আর কোনও ঈদ পালন নয়। শুধু নমাজ হবে।’’

 


গ্রামে নিরাপত্তা বাড়ানোর লক্ষ্যে এক কোম্পানি রাষ্ট্রীয় রাইফেলস্‌ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামবাসী সাদ্দাম হুসেইন জানালেন, ‘‘সাধারণত সেনা জওয়ানরা ইফতার উপলক্ষে গ্রামের মানুষজনকে তরমুজ সহ নানা ধরনের ফল বিতরণ করে থাকেন। এটাই চলে আসছে বছরের বছর। সেদিনও রাষ্ট্রীয় রাইফেলস্‌’র উদ্যোগে সন্ধ্যা ৭টার সময় ইফতার’র আয়োজন করা হয়েছিল। আমন্ত্রণ ছিল গোটা গ্রাম। এর মধ্যে যে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।’’
ভাটা দুঁরিয়া অনুপ্রবেশকারীদের পথ হিসাবেই পরিচিত। নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাহাড়, ঘন জঙ্গলে ঘেরা, প্রাকৃতিক গুহায় ভরা পথ ধরে তারা ঢুকে পড়ে। ভৌগোলিক কারণেই দুর্গম এই অঞ্চলকে অনুপ্রবেশকারীরা বেছে নেয়। এবার সেখানেই ঘটল সন্ত্রাসবাদী হানা। অবশ্য এই হামলা নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠে আসছে। 

অনুপ্রবেশকারীদের পথ জানা সত্ত্বেও কেন আগাম সতর্কতা নেওয়া হলো না সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে? সেনা ট্রাক যাওয়ার আগে কেন গোটা পথ মুক্ত (স্যানিটাইজ) করা হলো না? আর তা করা হলো না বলেই প্রাণ দিতে তরতাজা পাঁচ জওয়ানকে। পুলওয়ামার সময়েও একই কাণ্ড ঘটেছিল। যে প্রশ্ন তুলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত গাফিলতির বিতর্ক উসকে দিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক।
এদিকে, সন্ত্রাসবাদীদের তল্লাশিতে এখনও অভিযান বজায় রেখেছে সেনাবাহিনী। হেলিকপ্টার, ড্রোনের পাশাপাশি সোনা-কুকুরও নিয়োজিত ভাটা দুঁরিয়া-টোটা গলি এলাকায় তল্লাশি অভিযানে। নানা ধরনের নিরাপত্তা এজেন্সি নিয়োগ করা হয়েছে তল্লাশির কাজে। দু’দিন ধরে গোটা এলাকা ঘিরে রাখা হয়েছে। ১৪ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হচ্ছে। তবে এখনও হামলার কিনারা করতে পারেনি সেনাবাহিনী। ভীম্বার গলি-পুঞ্চ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। মানুষজনকে মান্ধার হয়ে পুঞ্চ যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
অহেতুক নিরীহ মানুষজনকে ধরে হেনস্তা যেন না করা হয় বলে এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স প্রধান ফারুক আবদুল্লা। তিনি বলেছেন, ‘‘ভুল হয়েছে সেনাবাহিনীর তরফে। তার দায় নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের ঘাড়ে যেন না পড়ে। 

চক্রান্তকারীদের ধরার নামে যেন কোনওভাবে নিরীহ গ্রামবাসীদের হেনস্তা করা না হয়।’’ আবার পুঞ্চের রাজৌরি সেক্টরে সন্ত্রাসবাদী হানার জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেই শূলে চড়িয়েছে শিবসেনা (উদ্ধব থ্যাকারে) গোষ্ঠী। দলের পক্ষ থেকে কটাক্ষ করে বলা হয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং রাজনৈতিক ছলা-কলায় ব্যস্ত রয়েছেন। আর তার ফায়দা লুটে সন্ত্রাসবাদীরা হামলা চালিয়ে পাঁচ জওয়ানের প্রাণ কেড়ে নিলো।’’

Comments :0

Login to leave a comment