Post editorials on ambedkar

আর্থ-সামাজিক সমতার প্রবক্তা

সম্পাদকীয় বিভাগ

অলকেশ দাস

ড. বি আর আম্বেদকারের জন্মদিন আজ। যথারীতি এই বছরেও এই দিনে তাঁর মূর্তি বসবে, মূর্তিতে মালা পড়বে, অজস্র কর্মসূচি হবে। এর বেশিরভাগটাই ভালোবাসা আর আন্তরিকতায় মোড়া। কিন্তু কিছু ভালোবাসা নকল থাকবে। এই নকল প্রেমিকেরা আম্বেদকরকে ঘৃণা করে। একসময়ে তারা সে ঘৃণা প্রকাশও করেছিল। মানুষ তা গ্রহণ করেনি। সেই জন্য অন্য পথ নিতে হয়েছে। ফুল মালা দিয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ভান করা আর জনগণের মধ্যে তাঁর ভাবমূর্তিকে ভোট বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করা। একইসঙ্গে আম্বেদকারের আদর্শের বিকৃত করা ও দলিত, তফসিলি, আদিবাসীদের উপর আক্রমণ বাড়িয়ে যাওয়া।

আরএসএস-বিজেপি আম্বেদকারের আদর্শকে প্রায় হাইজ্যাক করে তার নিজীকরণ করতে চাইছে। মোদী ২০০৬-এ গোল ওয়ার্ল্ড কাপ সম্পর্কে একটি লেখায় আম্বেদকারকে আধুনিক মনু বলে অভিহিত করেছেন। আম্বেদকারের মূর্তির গেরুয়াকরণের প্রক্রিয়া চলছে। দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে তিনি কত হিন্দু ধর্মের পূজারী ছিলেন এবং মুসলমানদের ঘৃণা করতেন। অথচ তিনি কি গভীর অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে মুসলিম সমাজকে বিশ্লেষণ করেছিলেন-"The Muslim society in India is affected by the same social evils as afflict the Hindu society. Indeed the Muslims have all the social evils of the Hindus and something more" । তাঁর লেখা একটা বইয়ের নাম- Riddles of Hinduism। হিন্দু ধর্মের প্রহেলিকা। পুরান প্রসিদ্ধ মহাকাব্যে নায়কদের জীবনকে আধুনিক যুক্তিবাদী বিশ্লেষণে বিদ্ধ করেছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদ, কর্মবাদ ও জন্মান্তরবাদের দ্বারা বেষ্টিত সমাজ থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন। অথচ এগুলোই সঙ্ঘ পরিবারের হিন্দুত্বের প্রাথমিক ভিত্তি। সেই তথাকথিত হিন্দুত্ব সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য ছিল- ‘‘যদি হিন্দুরাজ সত্যিই প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে নিঃসন্দেহে তা এ দেশের জন্য চরমতম বিপর্যয়। হিন্দুরা কী বললেন সেটা কোন কথা না-হিন্দুত্ব হলো সমতা, মুক্তি এবং ভ্রাতৃত্বের পক্ষে ভয়াবহ বিপদস্বরূপ। সে দিক দিয়ে তা গণতন্ত্রের সঙ্গে বেমানান’’। আসলে আম্বেদকার আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার চরম বিরোধী ছিলেন। তাঁর লেখায় ধরা পড়েছে-‘‘সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী ফ্যাসিবাদী এবং নাৎসি আদর্শে বিশ্বাসী মানুষের রাজনৈতিক আদর্শই হল হিন্দুত্ব। হিন্দুত্বের বাঁধন আলগা হয়ে গেলে যারা হিন্দুত্ব গণ্ডির বাইরে বা বিপরীতে আছেন তাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। এটা যে শুধুমাত্র মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়। এটা সমস্ত রকম অবদমিত শ্রেণি এবং অব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য’’। আম্বেদকার মনে করতেন যে হিন্দুত্বের অস্তিত্বই হচ্ছে বর্ণবৈষম্য ও অস্পৃশ্যতা। যে বর্ণবৈষম্য ও অস্পৃশ্যতা দূর করার জন্য সারা জীবন ধরে তিনি লড়াই করেছিলেন। যার জন্য ক্রোধ এবং ঘৃণায় তিনি হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

মোদীদের প্রস্তাবিত সংবিধান ‘মনুসংহিতা’ বলেছে- স্ত্রী  স্বাতন্ত্র্যমহতি। স্ত্রীলোক স্বাধীনতার যোগ্য নয়। শুদ্র, নারী পূর্ণ মানব নয়। শূকর, কুকুরের সঙ্গে তুলনীয়। রন্ধন কক্ষ এবং অন্তঃপুরে তার স্থান নির্দিষ্ট। সেই নারীর স্বাধীনতার জন্য আম্বেদকার ধারাবাহিক লড়াই করেছেন। তাঁর প্রস্তাবিত হিন্দু কোড বিলে মহিলাদের সম্পত্তির অধিকার ও উত্তরাধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল হিন্দু সমাজ যে কথাই গ্রহণ করুক না কেন তা কখনো সামাজিক কাঠামো অর্থাৎ চতু্র্বর্ণের ব্যবস্থা ছাড়বে না, যা নারী আর শূদ্রদের দাসত্বে আবদ্ধ করে রাখবে। হিন্দু কোড বিল সেই কারণেই নিয়ে আসা উচিত যাতে মেয়েরা তা থেকে পরিত্রাণ পায়, সমাজ এগিয়ে যেতে পারে। আরএসএস তার দৃষ্টিভঙ্গির তুমুল সমালোচনা করেছিল। তাকে বলা হয়েছিল কর্তৃত্ববাদী। দিল্লির রামলীলা ময়দানে আরএসএস-এর পক্ষ থেকে সমাবেশ করে বলা হয়েছিল হিন্দু কোড বিলটি হিন্দুদের বিরুদ্ধে নিক্ষেপ করা অ্যাটম বোমের মতো। কংগ্রেস এবং হিন্দু রক্ষণশীল অংশ যখন হিন্দু বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে তখন আম্বেদকার আপস করেননি। তিনি মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। ১৯২৫ সালের ৬ ডিসেম্বর আম্বেদকার ‘মনুস্মৃতি দহন দিবস’ পালন করেছিলেন। নিজে হাতে মনুস্মৃতি পুড়িয়েছিলেন। এই মনুস্মৃতি আরএসএস-এর দর্শনের মূল ভিত্তি।

আম্বেদকার সম্পর্কে আরএসএস-এর মুখোশ তখনই খুলেছিল যখন অরুণ শৌরি ১৯৯৭ সালে লিখে ফেলেছিলেন- Worshipping false Gods। একটা পুরো বই যার ছত্রে ছত্রে আম্বেদকারের প্রতি ঘৃণার উদগীরণ। বিজেপি নেতা অরুণ শৌরি আসলে আম্বেদকার সম্পর্কে বলতে চেয়েছিলেন- জাল দেবতা, যার উপাসনা মানুষ করে। আম্বেদকারকে নামিয়ে এনেছিলেন একজন করণিকের অবস্থানে। বলেছিলেন যে সংবিধানটা নাকি আম্বেদকার লেখেননি। তাঁর একজন সেক্রেটারি লিখেছিলেন। অথচ সবাই জানে সংবিধান লেখার কমিটিতে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেকেই অসুস্থ, নয় মৃত না হলে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। প্রায় একা হাতেই সামাল দিতে হয় সংবিধান লেখার কাজ আম্বেদকারকে। অসাধারণ প্রতিভা সম্পন্ন এই মানুষকে হেয় করার পরেও ১৯৯৮ সালের বিজেপি শৌরিকে রাজ্যসভার সদস্য করে। পরে তাকে এনডিএ মন্ত্রীসভার মন্ত্রীও করা হয়।

আম্বেদকারকে সংবিধানের প্রাণপুরুষ বলা হয়। বলা হয় সংবিধানের পিতা বা জনক। বাঙলার যোগেন মণ্ডল সে সময় নিজের আসন ছেড়ে দিয়ে আম্বেদকারকে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। তাঁর দূরদর্শিতা ছিল, বুঝেছিলেন যে সেখানে আম্বেদকারই সেরা ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবেন। যে সময়ে আম্বেদকার ভারতীয় সংবিধানে সব মানুষের সমান ভোটাধিকারের সুযোগ দিয়েছিলেন সেই সময় অনেক উন্নত পুঁজিবাদী দেশ পর্যন্ত তাদের দেশের সকলকে ভোটের অধিকার দেননি। সংসদীয় গণতন্ত্র, সার্বজনীন ভোটাধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, মৌলিক অধিকারের মতো বিষয়গুলি তিনি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। এসবগুলির চয়নে তাকে প্রভাবিত করেছিল দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, দেশ ভাগ, সাম্প্রদায়িকতার দগদগে ঘা, জাতিভেদের কুৎসিত চেহারা, পাশ্চাত্য গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ইত্যাদি। দেশের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী যে ঐতিহাসিক ইতিবাচক বিষয়গুলি সংবিধান গ্রহণ করেছিল তা হলো অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ আইন, শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংরক্ষণ আইন।

সারা পৃথিবী এই ধরনের সংবিধানের জন্য আম্বেদকারকে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল। যারা ছিল সমাজে ব্রাত্য তারাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল এই ভেবে যে -এভাবেও অধিকার ফিরে পাওয়া যায়। কিন্তু আম্বেদকার নিজে তৃপ্ত ছিলেন না। পঞ্চাশের দশকে ‘দি ইলাস্ট্রেটেড উইকলি’-তে প্রকাশিত মুলক রাজ আনন্দকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারে জানা যায় তিনি বলছেন, ‘‘আমি যে সংবিধানের স্বপ্ন দেখেছিলাম এ সংবিধান তা নয়’’। আম্বেদকার ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারকে কখনোই সংবিধানের মৌলিক অধিকার করতে চাননি। কাজের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, স্বাস্থ্যের অধিকারকে সংবিধানে মৌলিক অধিকারে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষপাতী ছিলেন তিনি।

কেন বললেন আম্বেদকার এই ধরনের কথা? আম্বেদকার তখনও কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে  চেয়ারম্যান হননি। তিনি নিজে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। যা স্টেট অ্যান্ড মাইনরিটিজ নামে বিখ্যাত। তাতে লিখেছিলেন যে সংবিধানে যুক্ত করতে হবে- ১. মুখ্য এবং মৌলিক শিল্প কারখানাগুলি নয় রাষ্ট্র অধিগ্রহণ করবে না হলে রাষ্ট্রীয় নিগম দ্বারা পরিচালিত হবে। ২. বিমা থাকবে রাষ্ট্রের অধিকারে। যদি শিল্প, বিমা, বা শিল্পক্ষেত্র ব্যক্তিগত মালিকানাধীন থাকে তাহলে তা অধিগ্রহণ করার অধিকার রাষ্ট্রের থাকবে। ৩. রাষ্ট্র খামারগুলিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ জমি ভাগ করে দেবে যা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে গ্রামবাসীরা ভাড়া হিসেবে নিয়ে চাষ করবে। সরকারকে খাজনা দেবে এবং ফসলের সঠিক ভাগ পাবে। ৪. এইসব সমবায় কৃষি খামারগুলিকে সেচের জল চাষের পশু সার বীজ প্রভৃতি জোগানোর অর্থনৈতিক দায়িত্ব রাষ্ট্র গ্রহণ করবে।  ৫. সংবিধান লাগু হওয়ার দশ বছরের মধ্যে এগুলি সব কার্যকরী করতে হবে। 
আম্বেদকার আরো বলেছিলেন কৃষি আর শিল্পে পুঁজি জোগানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্র প্রয়োজন ভারতবর্ষের দ্রুত শিল্পায়নের জন্য। এর জন্য তাঁকে শুনতে হয়েছে যে অর্থনীতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত নিয়ন্ত্রণ হলে স্বাধীনতা খর্ব হবে।পাল্টা আম্বেদকার প্রশ্ন করেন কার ক্ষতি? কার জন্য স্বাধীনতা ? জমিদারের রাজস্ব বৃদ্ধির? পুঁজিবাদীর গণতন্ত্র? শ্রমিকের মজুরি কমিয়ে শোষণ বৃদ্ধির স্বাধীনতা?

আম্বেদকারের এইসব কথা কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি গ্রহণ করেনি। কনস্টিটুয়েন্ট  অ্যাসেম্বলির সভাতেই নেহরুর বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে আম্বেদকার দাবি তুলেছিলেন শিল্পের জাতীয়করণের, জমির জাতীয়করণের। বলেছিলেন সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কথা। তাঁর যুক্তি ছিল তা না হলে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে না। উল্লেখ্য, স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব চলছে। অমৃত পাচ্ছে কতিপয় ব্যক্তি যারা মোদী বিজেপি আরএসএস-এর জ্বালানি জোগাচ্ছে। বিষ পানের দায়িত্ব অসংখ্য সাধারণ মানুষের। আম্বেদকারের স্বপ্নপূরণ দূরে থাক আম্বেদকারের দেওয়া অধিকারগুলিই কাড়তে উদ্যত মোদী সরকার। আম্বেদকার মেমোরিয়ালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে আম্বেদকার নাকি শ্রমসংস্কার ও শিল্পায়নের কথা বলেছিলেন। আম্বেদকার পরাধীন ভারতবর্ষে শ্রমিক শোষণকারী ঔপনিবেশিক শ্রম আইনের বিরোধিতা করেছিলেন। অথচ আজকের মোদী প্রণীত শ্রম আইনে ঔপনিবেশিক শ্রম আইন আর শ্রমিক বিরোধিতার ছাপ।

আম্বেদকারের নেতৃত্বে রচিত ভারতের সংবিধান অস্পৃশ্যতা ও বর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।  তাঁর মত ছিল দেশের জাতিভেদ ব্যবস্থা শোষণ মূলক। আর একে ধারণ করে রেখেছে বৈষম্যের সামাজিক বিন্যাস। গান্ধীজীও অস্পৃশ্যতাকে ঘৃণা করতেন । কিন্তু তিনি মনে করতেন বর্ণব্যবস্থা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। এই নিয়েই গান্ধীজীর সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য ছিল। মার্কসবাদ নিয়ে অসম্ভব কৌতূহল ছিল আম্বেদকারের। কাঠমান্ডুতে এক বক্তৃতায় বলেছিলেন -এক বড় সময় আমার কেটেছে কার্ল মার্কস, সাম্যবাদ এইসব অধ্যয়নে। তাঁর কর্মপদ্ধতি এবং মার্কসীয় কর্মপদ্ধতি এক ছিল না। ভাবধারা ও মতাদর্শগত পার্থক্য ছিল। কিন্তু আম্বেদকার এবং কমিউনিস্টদের মধ্যে অনেক বিষয়ে ঐক্যমত ছিল। স্বাধীনতা, সাম্য ও সহমর্মিতার বিষয়ে তাঁর যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা তা অস্বীকার করা যায় না। তিনি রাজনৈতিক সমতায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না। গণতন্ত্র রক্ষায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমতার অবশ্যম্ভাবিতার কথা বলেছিলেন। ১৯৫২-তে এক চিঠিতে আম্বেদকার লিখেছিলেন- ‘‘আমি আসলে যেটা বলতে চাইছি যে আমার কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করা উচিত’’। আম্বেদকার বেঁচে থাকলে দেখতেন ভারতবর্ষে যে পার্টি সর্বদা বর্ণ প্রথার  বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লড়াই করছে তা হল কমিউনিস্ট পার্টি। কমিউনিস্ট পার্টি যেমন শ্রেণি সংগ্রাম করে তেমনি বর্ণভেদের বিরোধিতাকেও শ্রেণি সংগ্রামের অংশ হিসেবে মনে করে। বর্ণভেদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছাড়া কখনোই শ্রেণি সংগ্রামের সাফল্য সম্ভব নয়। আবার বর্ণভেদ দূর করতে গেলে সামন্তবাদের অবশেষ এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা দরকার। তার জন্য যে আমূল ভূমি সংস্কারের প্রয়োজন সে দাবিতেও কমিউনিস্টরা সোচ্চার। যে শিক্ষার প্রসারের জন্য আহ্বান আম্বেদকার দিয়েছিলেন তার বিপ্রতীপ অবস্থান কেন্দ্রের সরকারের। নয়া শিক্ষা নীতিতে শিক্ষার সঙ্কোচন আর গৈরিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ। সমাজের মূল স্রোতে আনবার জন্য পিছিয়ে পড়া অংশের যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন আম্বেদকার তার ভগ্নদশা সর্বত্র পরিলক্ষিত। প্রত্যক্ষ মনুবাদের নীতিতে পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষ আক্রান্ত। নয়া উদারনীতির কুফলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এই অংশের মানুষ। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী প্রবণতা প্রান্তিক মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে বিভাজিত করছে। হাত পড়ছে সংবিধানে। বিচার ব্যবস্থায়। আমাদের রাজ্যেও তারই প্রতিফলন। পিছিয়ে পড়া অংশের মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে তার অধিকার। তারই ন্যায্য প্রাপ্তিকে ভোটের প্রাপ্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। অথচ তার আসল অধিকার তার থেকে সরে যাচ্ছে। রাজ্যে ঢালাও দুর্নীতিতে আম্বেদকারের সংবিধানের সংরক্ষণ উধাও। প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক জাতিভেদ প্রক্রিয়া সংসদীয় ক্ষমতা লাভের জন্য লাগামহীন প্রয়োগ হচ্ছে রাজ্যে। সামাজিক ন্যায়, সমানাধিকারের জন্য প্রয়োজনীয় গণতন্ত্র বিপন্ন। আম্বেদকর এই সমাজ চাননি। আম্বেদকারের আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সমাজ পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম চাই। সেই সংগ্রামেও আম্বেদকার সমানভাবে প্রাসঙ্গিক থাকবেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment