PARIS PROTEST

মোদী ফিরলেও ক্ষোভের আঁচ ফ্রান্সে

আন্তর্জাতিক

PARIS PROTEST প্যারিসে প্রতিবাদে বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিকদের সঙ্গে সুমনা সিনহা।

নরেন্দ্র মোদী ফিরে এসেছেন ভারতে। এসেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির নামে মেরুকরণের বিতর্ক খুঁচিয়ে তুলেছেন। ফ্রান্সে যদিও বিতর্ক, বিক্ষোভ চলছে।

১৪ জুলাই বাস্তিল দিবস কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মোদীকে রাষ্ট্রীয় অতিথি করে নিয়ে যান ফরাসী রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। একাধিক চুক্তিও হয়। যার মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার সমঝোতা। 

কিন্তু ফরাসী বিপ্লবের অন্যতম নির্ণায়ক ঘটনা বাস্তিল দুর্গ পতনের দিন ধর্মীয় আধিপত্যবাদী, মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী একজন রাষ্ট্রনেতাকে নিয়ে আসা হলো কেন, এই প্রশ্ন প্রবল ফ্রান্সেই। 

মোদীর সফরের সময়েই বিক্ষোভ হয়েছে প্যারিসের রাস্তায়। সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন সাহিত্যিক সুমনা সিন্‌হা। জুড়ে গিয়েছিলেন লেখক-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী-শিল্পীরা। জুড়ে গিয়েছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। বহু অংশের মানুষ। 

সুমনা আদতে কলকাতারই বাসিন্দা। গত প্রায় কুড়ি বছর রয়েছেন ফ্রান্সে। ফরাসী নাগরিক এই সাহিত্যিক গণশক্তি’কে জানিয়েছেন বিক্ষোভের অভিজ্ঞতা। তাঁর সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন তথ্যচিত্র নির্মাতা ফরাসী নাগরিক জয় ব্যানার্জি, ভারত বিশারদ এ মানদাগারান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবীরা। 

খুব অল্প সময়ের মধ্যে বহু অংশের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠে। সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন অংশও তাঁদের বক্তব্য প্রকাশ করে। লিরারেশন পত্রিকায় ছাপা হয় সুমনার দীর্ঘ নিবন্ধ।  

সুমনা লিখেছেন, ‘‘ফরাসী রাষ্ট্রপতি এমন একজনকে অতিথি করে এনেছেন যিনি ভারতের সব সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে, সাংবাদিক, ছাত্র, শিক্ষক, সর্বস্তরের কর্মীদের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে। হিন্দু মৌলবাদী, ফ্যাসিবাদী, আগ্রাসী জাতীয়তাবাদী নীতি অনুসরণ করছে, যিনি প্রতিদিন মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন।’’ 

সুমনা জানাচ্ছেন, তাঁদের সমর্থনে এগিয়ে আসেন বামপন্থী এবং গ্রিন পার্টির একাধিক সাংসদও। মোদী দেশে ফিরে এসেছেন। কিন্তু এমানুয়েল ম্যাক্রঁর সিদ্ধান্ত ঘিরে ক্ষোভ রয়েছে ফ্রান্সে। 

মোদীর সফর ঘিরে প্রতিবাদ স্পষ্ট করেছিলেন বামপন্থী নেতা জাঁ লুক মেলেশঁ। তিনি বলেন, ‘‘ভারত আমাদের বরাবরের বন্ধু। কিন্তু রাষ্ট্রপতি যাঁকে অতিথি করে এনেছেন তিনি নন।’’ মেলেশঁর ব্যাখ্যা, ‘‘বাস্তিল ডে প্যারেডের অর্থ ফরাসীদের কাছে, সারা বিশ্বের কাছে, সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার অমোঘ বার্তা। আর এই তিনকেই অগ্রাহ্য করেন মোদী।’’ 

গ্রিন পার্টির প্রধান মারিন টঁডালিয়র লেখেন, ‘‘ম্যাক্রঁ গুরুতর ভুল করলেন মোদীকে প্রধান অতিথি করে এনে। যবে থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তিনি, ধারাবাহিকভাবে মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার সূচকে নেমে চলেছে ভারত।’’ 

প্যারিসে প্রধান দপ্তর ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার’-র। এই সংগঠন সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক সূচক প্রকাশ। এই সূচকে পরপর নেমে চলেছে ভারত। এগারো ধাপ নেমে ভারত এখন ১৮০ দেশের মধ্যে ১৬১-তে। মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের রিপোর্টও স্বীকার করেছে ভারতে সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়নের চেহারা। কমিশনের তালিকায় মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারতকে রাখা হয়েছে কালো তালিকায়। 

গ্রিন পার্টির নেতা এই সূচক তুলে ম্যাক্রঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। 

ম্যাক্রঁকে উদ্দেশ্য করে সুমনা লিখেছেন, ‘‘যারা শাসন করে এবং যারা বিরোধী দল তাদের নিয়ে গণতন্ত্র কাজ করে। নিজেকে কেন্দ্রে বসিয়ে বৃত্ত আঁকা এবং আপনার সাথে একমত না এমন প্রত্যেককে চরমপন্থী বলা গণতন্ত্র নয়।’’ 

নিবন্ধে সুমনার মন্তব্য, ‘‘স্বৈরাচারী হিন্দু (আধিপত্যবাদী) রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আপনার প্রশংসা, তাই শুধু বিশুদ্ধ কূটনৈতিক সৌজন্য নয়। আপনি তাঁকে ‘আপনার ভাইয়ের মতো একজন ভালোমানুষ’ বলেছেন’, বলেছেন ‘আপনারা (দু’জন) একে অপরকে অনুপ্রাণিত করছেন’। 

মোদী সফরের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা প্রতিবাদের ভাষা তুলে ধরে সুমনারা রাষ্ট্রপতিকে লিখেছেন, ‘‘আপনি এমন ক্রোধের জন্ম দিয়েছেন যার মাত্রা এবং তীব্রতা আপনি এখনও অনুমান করতে পারছেন না।’’ 

ম্যাক্রঁ সরকার ফ্রান্সে একের পর এক প্রতিবাদের মুখে পড়ছে। পেনশন নীতি সংস্কারের প্রতিবাদে কেবল শ্রমজীবীরাই নন, শামিল হয়েছেন বিভিন্ন অংশের মানুষ। বর্ণবৈষম্য, অশ্বেতাঙ্গদের প্রতি বৈষম্য, পুলিশ প্রশাসনের নিপীড়নের প্রতিবাদ তীব্র চেহারা নিয়েছে অতি সম্প্রতি। প্রতিবাদের বৃত্তে নতুন সংযোজন নরেন্দ্র মোদীকে বাস্তিল দিবস কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে নেওয়া। 

Comments :0

Login to leave a comment